সাফল্যের জন্য স্বপ্নের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে প্রচেষ্টা

আইআইইউসির ওরিয়েন্টেশনে তথ্যমন্ত্রী

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ১৮ জুন, ২০২৩ at ৫:৩৪ পূর্বাহ্ণ

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, শিক্ষার্থীদের স্বপ্নের সঙ্গে প্রচেষ্টাকে যুক্ত করতে হবে। তাহলেই আসবে জীবনে সাফল্য। জীবন যুদ্ধে এগিয়ে যেতে স্বপ্ন দেখার পাশাপাশি প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে, বাধার সম্মুখীন হয়ে অজুহাত দেখিয়ে পিছিয়ে পড়া চলবে না। সারাবিশ্বে এমনকি আমাদের দেশেও এমন অনেক উদাহরণ আছে, যাদের শারীরিক অক্ষমতা দমাতে পারেনি। কোনো কিছুই প্রতিবন্ধকতা নয়, প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে ভয়।

গতকাল শনিবার দুপুরে আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম (আইআইইউসি) এর শরৎকালীন সেমিস্টার২০২৩ এ ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামে তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। আইআইইউসি’র সীতাকুণ্ডের কুমিরাস্থ ক্যাম্পাস অডিটোরিয়ামে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর আনোয়ারুল আজিম আরিফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলান, আইআইইউসি বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী এমপি। বক্তব্য রাখেন বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য খাদিজাতুল আনোয়ার সনি এমপি, ট্রেজারার প্রফেসর ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী বলেন, জীবন হচ্ছে যুদ্ধক্ষেত্র। নিরন্তর উজানের বিপরীতে জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং প্রতিনিয়ত প্রতিকূলতার সঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার নাম হচ্ছে জীবন। যে সেভাবে জীবনকে এগিয়ে নেবে, সে জীবনে অনেক দূর যেতে পারবে। যে প্রতিনিয়ত জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করার মানসিকতা নিয়ে জীবনযুদ্ধে নামবে সে জীবনকে বহুদূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে হাছান মাহমুদ বলেন, পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষ স্বপ্ন দেখে, কিন্তু সব মানুষের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয় না। খুব কম মানুষের স্বপ্ন তীরে ভিড়ে। কিংবা খুব কম মানুষের স্বপ্ন স্বপ্নের ঠিকানায় পৌঁছায়। কিন্তু সেই মানুষের অনেক স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয় যে স্বপ্নের সঙ্গে প্রচেষ্টাকে যুক্ত করে। তাই অভিভাবকদের অনুরোধ জানাবো সন্তানদেরকে স্বপ্ন দেখাতে শেখাবেন। সন্তান যেন স্বপ্ন দেখে। আর সেই স্বপ্ন দেখার পাশাপাশি সন্তান যেন প্রচেষ্টাকে যুক্ত করে।

দরিদ্রতা কখনো প্রতিবন্ধকতা নয়। এ পি জে আবদুল কালামের নাম সবাই শুনেছেন। দরিদ্রতা তার জীবনযুদ্ধকে থমকে দেয়নি। তিনি ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী হয়েছেন, ভারতের মিসাইল প্রযুক্তির জনকও তিনি এবং তিনি হয়েছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি। দারিদ্র তাকে দমাতে পারেনি।

তিনি বলেন, কবি নজরুল মেট্রিক পাশ করতে পারেননি। কিন্তু তিনি বাংলাদেশের জাতীয় কবি। বাংলাদেশ এবং ভারত, দুদেশেই তিনি সমানভাবে সম্মানিত। কবি নজরুলকে বাদ দিয়ে বাংলা সাহিত্য কল্পনা করা যায় না। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ স্কুল পালিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি একমাত্র কবি, যিনি দুটি দেশের জাতীয় সংগীতের রচিয়তা। এশীয়দের মাঝে প্রথম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারটিও তার। তাকে ছাড়া বাংলা সাহিত্য কি ভাবা যায়?

শারীরিক প্রতিবন্ধকতাও কাউকে দমাতে পারে না উল্লেখ করে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আমাদের যশোরের মেয়ে তামান্নার দুই হাত এবং একটা পা নেই, একটা পায়ের দুই আঙ্গুল দিয়ে লিখে সে জিপিএ ফাইভ পেয়েছে। তাকে যখন প্রশ্ন করা হলো, তুমি এত সাহস কোথায় পাও? এত প্রেরণা কোথায় পাও? সে বলেছে স্টিফেন হকিংস উঠতে পারেন না, বসতে পারেন না, মাথা নাড়াতে পারেন না। শুধুমাত্র দুটো আঙ্গুল দিয়ে লিখে পৃথিবীর জন্ম রহস্যটাই বদলে দিয়েছেন। সুতরাং শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কোনো সমস্যা নয়।

শিক্ষার্থীদের বলতে চাইমেধা, মূল্যবোধ, দেশাত্মবোধের সঙ্গে মমত্ববোধকে যুক্ত করে পরিপূর্ণ মানুষ হতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বলতে চাই, শুধু পাঠদান নয়। ছাত্রছাত্রীদের মাঝে মেধা, মূল্যবোধ ও দেশাত্মবোধের সমন্বয়ে তারা যেন সত্যিকারে মানুষ হয়ে দেশ, সমাজ ও জাতির উপকারে আসে, সেই লক্ষ্যে এখানে শিক্ষাদান করুন। তাহলেই এই বিশ্ববিদ্যালয় সত্যিকার অর্থে একটি অনন্য বিশ্ববিদ্যালয় হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলান বলেন, বাংলাদেশের সাথে সৌদি আরবের শুধু ওমরাহ, হজ্জ বা ভিসার সম্পর্ক নয়। এ সম্পর্ক আত্মিক, মানবিক, সামজিক, রাষ্ট্রীয় ও ঐতিহ্যগত সম্পর্ক। যা ভবিষ্যতেও অটুট থাকবে। উপস্থিত নবীন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারাই জাতির সম্পদ। এদেশের মাটি ও মানুষকে নিয়ে সোনার বাংলাদেশ গড়ার জন্য আপনাদেরকে প্রচুর পড়াশোনা করতে হবে। আইআইইউসিকে সহযোগিতার আশ্বাসও দেন তিনি।

বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী বলেন, দুবছর আগে বিশ্ববিদ্যালয়টি নিজেদের দায়িত্বে নেয়ার পর থেকে এর একাডেমিক থেকে শুরু করে সার্বিক ক্ষেত্রে যথেষ্ট উন্নয়ন হয়েছে। যার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মান বেড়েছে, সুনামও বেড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ধারা অব্যাহত রাখতে সকলের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।

সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য প্রফেসর আনোয়ারুল আজিম আরিফ নতুন ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে স্বাগত জানান। আইআইইউসির প্রক্টর ও ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. ইফতেখার উদ্দিনের সঞ্চালনায় ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূতের একান্ত সচিব জামাল তাইসির আল মানসুরী, ফ্রান্সের অরফালাইন্সের সভাপতি ডীলন দাউদ, আইআইইউসি বোর্ড অব ট্রাস্টিজের ভাইস চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কাজী দীন মোহাম্মদ, বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য প্রফেসর ড. ফসিউল আলম, রেজিস্ট্রার এএফএম আখতারুজ্জামান কায়সার, ফ্যাকাল্টি ডিনবৃন্দ, ডিপার্টমেন্ট চেয়ারম্যান বৃন্দ। ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ১৭০০ শিক্ষার্থীকে বরণ করে নেওয়া হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিএনপির তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মাঠে মারা গেছে : তথ্যমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধছয়দিন আগে নিখোঁজ স্কুলছাত্রের মরদেহ মিলল নদীর পাড়ে