সহজ জয়ে সিরিজ জিতে নিল বাংলাদেশ

ক্রীড়া প্রতিবেদক | শুক্রবার , ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৭:১৫ অপরাহ্ণ

প্রথম ম্যাচে রোমাঞ্চকর এক জয়ের পর আজ শুক্রবার দ্বিতীয় ম্যাচে স্বরূপে বাংলাদেশ। যেমন প্রত্যাশা বাংলাদেশ দলের উপর করে সমর্থকরা ঠিক তেমনই পারফর্ম করল টাইগাররা। প্রথমে দুর্দান্ত ব্যাটিং আর পরে একেবারে হিসেবী বোলিং সব মিলিয়ে এ যেন ঠিক প্রত্যাশিত বাংলাদেশ।

আর এমন দিনে প্রতিপক্ষ উড়ে যাওয়াটা স্বাভাবিক। যেমনটি গতকাল উড়ে গেছে আফগানিস্তান। আর তাতেই সহজ এক জয় দিয়ে ওয়ানডে সিরিজ নিল টাইগাররা এক ম্যাচ হাতে রেখেই। আজ জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে টাইগাররা জিতেছে ৮৮ রানের বড় ব্যবধানে।

আগের ম্যাচে টাইগারদের টপ অর্ডার লজ্জার চাদর গায়ে জড়িয়েছিল। আর সে কারনেই কিনা শুক্রবার আফগান বোলারদের নাক আর চোখের জল এক করে ছাড়লেন লিটন, মুশফিক, সাকিব, তামিমরা।

যদিও দলের ব্যাটিংটা পুরোটাই লিটন-মুশফিকের কাঁদে চড়ে পাড়ি দিয়েছে। আর বল হাতে কাজটা তাসকিন, সাকিব, মিরাজ, মোস্তাফিজ, শরীফুলরা দশে মিলে করি কাজ হারি জিতি নাহি লাজ প্রবাদের মতই সম্মিলীতভাবেই সেরেছে।

এমন দিনে খুত ধরার চেষ্টা করা ঠিক না হলেও ফিল্ডিংয়ের যে দ্বৈন্যতা ছিল তা শেষ পর্যন্ত দারুণ এক ম্যাচ এবং সিরিজ জয়ের আনন্দের নিচে চাপা পড়ে গেছে।

প্রথম ম্যাচে পকেটে ঢুকে যাওয়া জয়টা আফগানদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছিল বাংলাদেশ। আরো আলাদা করে বললে দুই তরুন আফিফ এবং মিরাজ। পরের ম্যাচে নিজেদের খুজে ফেরার চেষ্টা করেও কোন লাভ হয়নি আফগানদের।

এড়াতে পারলনা সিরিজ হার। এখন হোয়াইট ওয়াশ এড়াতে পারবে কিনা আফগানরা সেটাই দেখার অপেক্ষা।

টসে জিতে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশের দুই ওপেনার লিটন এবং তামিম শুরুটা ভাল করার ইঙ্গিত দিচ্ছিল। কিন্তু প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের টপ অর্ডার ধ্বংসের নায়ক ফজল হক ফারুকী সেটা হতে দিলেননা।

প্রথম ম্যাচের মত এই ম্যাচেও তামিম সেই ফারুকীর শিকারে পরিণত হলেন। আউটের ধরনও সেই একই। এলবিডব্লিউ। পার্থক্য শুধু সে ম্যাচে ৮ আর এই ম্যাচে ১২। সে ১২ রান তুলতে ২৪ বল খেলেছেন টাইগার দলপতি।

ওয়ানডাউনে খেলতে নামা সাকিবের ব্যাটেও আস্থার ইঙ্গিত। কিন্তু তিনিও স্থায়ী হতে পারলেননা বেশিক্ষণ। প্রথম ম্যাচের ন্যয় এই ম্যাচেও সাকিবের হন্তারক সেই রশিদ খান।

৩৬ বল খেলে ২০ রান করা সাকিবও ফিরেছেন এলবিডব্লিউ হয়ে। তামিমের মত অবশ্য রিভিও নষ্ট করেননি সাকিব। ৮৩ রানে দ্বিতীয় উইকেট পতনের পর লিটনের সাথে জুটি বাধেন মুশফিক। আর তাতে যেন পাল্টে যেতে থাকে বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং এর চেহারা।

শুরুতে ধীরে শুরু করলেও সময় গড়ানোর সাথে সাথে আফগান বোলারদের উপর চড়াও হয়ে খেলতে থাকেন এই দুই ব্যাটসম্যান। ৫০, ১০০, ১৫০ পেরিয়ে নিজেদের জুটিটা নিয়ে গেলেন দুইশতে।

এ দুজন যখন ব্যাট করছিল তখন মনে হচ্ছিল আর কাউকে নামতে হবেনা। কিন্তু নিজেদের জুটিটাকে ২০২ রানে নিয়ে গিয়ে থামলেন দুজন। তবে ততক্ষণে রেকর্ড গড়ে ফেলেছেন লিটন এবং মুশফিক। তৃতীয় উইকেটে এটি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের জুটি। আগের জুটিটা ছিল তামিম এবং মুশফিকের।

২০১৫ সালে মিরপুরে পাকিস্তানের বিপক্ষে তৃতীয় উইকেটে ১৭৮ করেছিলেন তামিম-মুশফিক। ১৬তম ওভারে জুটি গড়া লিটন এবং মুশফিক স্থায়ী ছিলেন ৪৭ তম ওভার পর্যন্ত। ফরিদ আহমেদ এসে ভাঙ্গেন এজুটি। ফেরান লিটন দাশকে। ততক্ষনে তিনি তুলে নিয়েছেন ক্যারিয়ারের পঞ্চম ওয়ানডে সেঞ্চুরি। ফিরেছেন ১২৬ বলে ১৩৬ রান করে। যেখানে ১৬টি চার এবং ২টি ছক্কার মার ছিল। ৬৫ বলে হাফ সেঞ্চুরি পুরন করা লিটন সেঞ্চুরি করেছেন ১০৭ বলে। পরের ৩৬ রান করেছেন ১৯ বলে।

এটি লিটনের ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ইনিংস। এখনো জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা ১৭৬ রান তার ক্যারিয়ার সেরা। দীর্ঘক্ষনের পথ চলার সঙ্গী লিটনকে হারানোর পরের বলেই ফিরেন মুশফিক। পারলেননা ক্যারিয়ারের নবম সেঞ্চুরি তুলে নিতে। একেবারে সীমানার কাছে ফারুকীর হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে মুশফিক করেন ৯৩ বলে ৮৬ রান। যেখানে ৯টি চারের মার ছিল। পরের ২১ বল থেকে অবশ্য বেশি রান তুলতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ এবং আফিফ। মাত্র ২১ রান যোগ করতে পেরেছেন। আর তাতেই বাংলাদেশের স্কোর গিযে দাড়ায় ৩০৬ রানে।

৩০৭ রানের বড় লক্ষ্য । আর সে লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দ্বিতীয় ওভারেই ধাক্কা খায় আফগানিস্তান। আফিফের দারুন এক থ্রোতে রান আউট হয়ে ফিরেন রিয়াজ হাসান। ১৬ রানের মাথায় হাশমতউল্লাহকে ফেরান শরীফুল দারুন এক ডেলিভারিতে। সাকিবের বলে আজমত উল্লাহ যখন স্টাম্পিং হয়ে ফিরেন তখন আফগানদের সংগ্রহ ৩ উইকেটে ৩৪। এরপর হাল ধরার চেষ্টা করেন রহমত শাহ এবং নাজিবুল্লাহ জাদরান। ভালই এগুচ্ছিলেন দুজন। ৮৯ রানের জুটিও গড়েছিলেন এই দুই আফগান। রহমত শাহকে বোল্ড করে এজুটি ভাঙ্গেন তাসকিন। ফেরার আগে ৭১ বলে ৪টি চারের সাহায্যে ৫২ রান করে আসেন রহমত শাহ। এরপর মোহাম্মদ নবীকে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা নাজিবুল্লাহর। সে চেষ্টাকেও সফল হতে দেননি তাসকিন। দ্বিতীয় স্পেলে বল করতে এসে ফেরালেন আফগানিস্তানের আরেক হাফ সেঞ্চুরিয়ান নাজিবুল্লাহকে। ৬১ বলে ৭টি চারের সাহায্যে ৫৪ রান করেন নাজিবুল্লাহ। রহমানুল্লাহকেও দাড়াতে দেননি সাকিব। নিজের দ্বিতীয় শিকার বানান ৭ রান করা এই আফগানকে। এরপর মোহাম্মদ নবীর প্রতিরোধ ভেঙ্গে দেন মেহেদী হাসান মিরাজ। আফিফের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন ৪০ বলে ৩২ রান করা নবী। আর তাতেই আফগানদের ম্যাচে ফেরার সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়্ রশিদ খান শট খেলার চেষ্টা করলেও তাকে নিজের প্রথম শিকারে পরিণত করে ফেরান মোস্তাফিজ। ২৬ বলে ২৯ রান করেন রশিদ খান। এরপর মুজিব, ফরিদ, ফারুকীরা পরাজয়ের ব্যবধানটা কমানোর চেষ্টা করেছেন। আফিফের ওভারের প্রথম বলে ফারুকী বোল্ড হয়ে গেলে ২১৮ রানে আফগানিস্তানের ইনিংস। আর তাতেই ম্যাচ এবং সিরিজ দুটোই নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধউৎসবের ঢেউ জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে
পরবর্তী নিবন্ধলোহাগাড়ায় মাইক্রোবাসের ধাক্কায় অজ্ঞাত ব্যক্তির মৃত্যু