আন্তর্জাতিক বাজারে নিম্নমুখী হওয়ার কারণে খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে কমছে ভোজ্য তেলের দাম। তবে খুচরা পর্যায়ে এর কোনো প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে ভোজ্যতেলের সরবরাহ বেড়েছে। তাই দাম কমছে। ভোক্তারা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার সময় কিছুদিন পরপর ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধি করেন আমদানিকারকরা। কিন্তু দাম কমার সময় সেটি আর ভ্রুক্ষেপ করেন না তারা। এছাড়া সরকার খুচরা পর্যায়ে দাম নির্ধারণ করে দেয়ার কারণেও পাইকারি বাজারে দাম কমার সুফল পাওয়া যাচ্ছে না বলছেন ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীরা।
গতকাল খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে খাতুনগঞ্জে প্রতি মণ (৩৭.৩২ কেজি) পাম তেল বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৫০০ টাকায়। যা গত এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ৮০০ টাকায়। এছাড়া বর্তমানে সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে মণপ্রতি ৭ হাজার ৬০০ টাকায়। গত এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ৮ হাজার টাকায়। খাতুনগঞ্জের তেল ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমাদের দেশে পাম তেল আসে মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়া থেকে।
অপরদিকে সয়াবিন আসে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা থেকে। বর্তমানে দেশগুলোতে ফসল উৎপাদনের মৌসুম চলছে। যার কারণে পাম ও সয়াবিন তেলের সরবরাহও বেড়েছে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজার কমছে।
খাতুনগঞ্জের কয়েকজন তেল ব্যবসায়ী জানান, খাতুনগঞ্জের বাজারে পণ্য বেচাকেনা ও লেনদেনে যুগ যুগ ধরে কিছু প্রথা চালু আছে। নিজেদের সুবিধার অনেক প্রথা আছে যেগুলো আবার আইনগতভাবেও স্বীকৃত নয়। এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে ডেলিভারি অর্ডার (ডিও) স্লিপ। তেল কিংবা অন্য কোনো পণ্য কেনাবেচায় ডিও বেচাকেনার মাধ্যমে বিভিন্ন আগাম লেনদেন হচ্ছে। দেখা যায়, পণ্য হাতে না পেলেও ওই ওই স্লিপটিই বেচাকেনা হচ্ছে। কোনো কোম্পানি বাজার থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্যের ডিও কিনে নেয়। যে দরে ডিও কেনা হয় তার বাজার দর যদি বেড়ে যায়, তখন পণ্যটি ডেলিভারি দিতে তারা গড়িমসি করে।
আবার দেখা যায়, কোম্পানির পণ্যই আসেনি কিন্তু ডিও কিনে রেখেছেন অনেক বেশি। এর ফলেও কোম্পানি বাজারে পণ্য ডেলিভারি দিতে পারে না। ফলে এসব পণ্যের দামও নিয়ন্ত্রণে থাকে না। এক্ষেত্রে তেল ও চিনির ডিও বেচাকেনা বেশি হয়। বলা যায়, ডিও কারসাজির কারণে মাঝে মাঝে পণ্যের দাম আকাশচুম্বি হয়ে উঠে।
চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, ভোজ্যতেলসহ বর্তমানে প্রায় সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের দাম নিম্নমুখী। আন্তর্জাতিক বাজার কমার কারণে এ অবস্থা। একইসাথে বাজারে বেচাবিক্রিও কম।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসেন দৈনিক আজাদীকে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে যখন তেলের দাম বাড়ে তখন ভোজ্যতেলের আমদানিকারকরা সরকারের সাথে আলোচনা করে দাম বৃদ্ধি করেন। যখন কমে তখন ব্যবসায়ীদের সাড়া শব্দ থাকে না। এই কিছুদিন আগে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১২ টাকা বাড়ানো হয়েছে। অথচ আন্তর্জাতিক বাজার এখন নিম্নমুখী।