সরকারিভাবে আমদানি, বন্ধ কারখানা সচল ও বাজারজাতের পরামর্শ

ভোজ্যতেল সংকট

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ৯ মে, ২০২২ at ৫:৩৯ পূর্বাহ্ণ

কোটি কোটি লিটার ভোজ্যতেল আমদানি হলেও বাজারে প্রভাব পড়ছে না। গুটিকয়েক কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে দেশের ভোজ্যতেলের বাজার। মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে বাজার থেকে হাজার কোটি টাকা তুলে নেয়া শক্তিশালী একটি সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে মানুষ। তেল আমদানির সাথে জড়িত কয়েকটি কোম্পানি অনেকটা দেউলিয়া হয়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। সরকারিভাবে ভোজ্যতেল আমদানি, বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানাগুলো চালু করে সরকারি ব্যবস্থাপনায় তেল বাজারজাতকরণের উদ্যোগ নেয়া হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে জানিয়েছেন টিসিবির কর্মকর্তা এবং ক্যাব নেতারা। এক্ষেত্রে সরকারি বিভিন্ন সংস্থাকে ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে বলেও মনে করেন তারা।

দেশের ভোজ্যতেল সেক্টরের প্রায় পুরোটাই আমদানিনির্ভর। আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া থেকে তেল আমদানি করা হয়। দেশে কিছু সরিষা উৎপাদন হলেও বাজারের চাহিদার তুলনায় তা সামান্য। আমদানি করা হয় সরিষাও। দেশে বর্তমানে ২০ লাখ টনের মতো ভোজ্যতেল আমদানি করা হয়।
জানা গেছে, বছর কয়েক আগে দেশে ১৪/১৫টি প্রতিষ্ঠান ভোজ্যতেল আমদানি ও বাজারজাত করত। কিন্তু এর মধ্যে অনেকগুলো কোম্পানি ঋণখেলাপিতে পরিণত হয়েছে। কোনো কোনো কোম্পানির লোকজন দেনার দায়ে বিদেশে গা ঢাকা দিয়েছেন। কেউ জেল ভোগ করার পর বিদেশে পালিয়েছেন। ভোজ্যতেলের পরিশোধন কারখানাগুলো অলস পড়ে আছে।

ভোজ্যতেল আমদানি ও পরিশোধনের অধিকাংশ কোম্পানি বাজার থেকে ছিটকে পড়ায় পুরো বাজারটি বর্তমানে ৬টি প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো হলো এস আলম গ্রুপ, সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, টিকে গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ ও বাংলাদেশ এডিবল অয়েল। বর্তমানে দেশের চাহিদার সব তেল এই ছয়টি কোম্পানি আমদানি করে।

টিসিবি সূত্র জানিয়েছে, দেশে সর্বোচ্চ ২০ লাখ টন ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে। তবে কাস্টমস সূত্র ২০২১ সালে ২৭ লাখ ৭১ হাজার টন তেল আমদানি হয়েছে বলে জানিয়েছে। চলতি বছরের শুরু থেকেও প্রচুর তেল আমদানি করা হয়েছে। সম্প্রতি চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে আমদানি হয়েছে অন্তত ৫০ হাজার টন তেল। এত কিছুর পরও তেলের সংকট লেগে রয়েছে। টাকা দিয়েও তেল না পাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি করে বাজার থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছে, তেলের মূল্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কোনো নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা করা হয়নি। ভ্যাট প্রত্যাহার করিয়েও দাম কমানো হয়নি। গত বছর মার্চ-এপ্রিলে দেশে প্রতি লিটার ভোজ্যতেল ১১৬ টাকায় বিক্রি হলেও এক বছরের ব্যবধানে সেই তেলের দাম এখন ২০০ টাকার উপরে। এক বছরের ব্যবধানে ১শ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধির নজির আর কোনো পণ্যে নেই বলে টিসিবির শীর্ষ একজন কর্মকর্তা মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, টিসিবি সাশ্রয়ী মূল্যে ভোজ্যতেল বিক্রি করলেও তা বাজারে প্রভাব ফেলছে না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তা বলেন, দেশে অনেকগুলো ভোজ্যতেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের মেশিন রয়েছে। ওগুলো ঠিক আছে। এসব প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ সরকার নিতে পারে। যন্ত্রপাতিগুলো সচল করে সরকার ভোজ্যতেল আমদানি করে বাজারজাতের ব্যবস্থা করলে ভোজ্যতেলের সিন্ডিকেট ভেঙে যাবে।
টিসিবির একজন কর্মকর্তা বলেন, সরকার বিভিন্ন সংস্থাকে দিয়ে তেল আমদানি এবং পরিশোধনের ব্যাপারটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এক্ষেত্রে সরকারের সুযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, শুধু এখনকার জন্য নয়, ভবিষ্যতেও যাতে বাজার পরিস্থিতি নিয়ে কোনো সিন্ডিকেট অপতৎপরতা চালাতে না পারে সেজন্য সরকারের বিশেষ উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।

ক্যাবের একজন নেতা বলেন, বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের জরুরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকিছু শ্রমিক নেতা বিদেশিদের কাছে নালিশ করতে পছন্দ করেন : প্রধানমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধসুড়ঙ্গে তেলের মজুদ (ভিডিও দেখুন)