ভ্রাতৃত্বের বন্ধন শেখানো সমাজ আজ টানাপোড়নে আছে সম্পর্ক নামক শব্দটার। সম্পর্ক শব্দটা যে ক্ষেত্রেই ব্যবহার করি না কেন বাবা মায়ের সাথে সন্তানের, স্বামী–স্ত্রীর, ভাই–বোন, প্রেমিক প্রেমিকা, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর, বন্ধুত্ব বা আত্মীয়তার প্রত্যেকটিরই আছে নিজস্ব মূল্যবোধ। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সম্পর্কের টানাপোড়ন সৃষ্টি হয় আমাদের আচরণের জন্য। বিচ্ছেদ শব্দটি এখন এত বেশি শুনতে পাই যে, মাঝে মাঝে মনে হয় সিঙ্গেল মাদার, সিঙ্গেল ফাদার শব্দগুলোকে ট্রেন্ড হিসেবে নিচ্ছে। এই ট্রেন্ড কি সমাজের জন্য আশীর্বাদ হতে পারবে? প্রায়ই দেখি প্রেমিক–প্রেমিকা সম্পর্কের কয়েক দিন বা কয়েক মাসের মধ্যে বিচ্ছেদ চায়। সন্তান মনে করে তাদের বাবা–মা তাদেরকে স্বাধীনভাবে থাকতে বাধা দিচ্ছে। না আবার সন্তান বড় হয়ে বাবা–মায়ের খবর নিচ্ছে না এমন খবর তো আমরা প্রায়ই শুনতে পাই। আবার এটাও দেখি ছাত্রের হাতে শিক্ষক লাঞ্চিত বা শিক্ষকের হাতে ছাত্রী লাঞ্চিত। এই বিষয়গুলো আমাদের সম্পর্ককে কোথায় নিয়ে দাঁড় করিয়েছে সেটা ভাবনার বিষয়। সম্পর্কে দূরত্বের কথা বলছিলাম এখন প্রায়ই শুনি ১২ অথবা ১৩ বছর বয়সি ছেলে–মেয়েদের আত্মহত্যা করতে। যে ছেলে বা মেয়ে তার কৈশোর জীবনই পার করেনি তার ভিতরে হতাশা আসে কীভাবে? এই হতাশার মূল কারণ খোঁজতে গিয়ে পায় একাকিত্ব। আর একাকিত্ব শুরু হয় বাবা–মায়ের সাথে সন্তানের শারীরিক ও মানসিক দূরত্ব থেকে। বন্ধুত্বের কথায় ধরি, আগে সব বন্ধু মিলিত হলে আড্ডায় মেতে উঠতো আর এখন বন্ধুরা তো একত্রিত হয় ঠিকই কিন্তু তাদের মস্তিস্ক থাকে অন্যখানে। একসাথে বসে থাকে কিন্তু প্রত্যেকে তার ভার্চুয়াল জগতে ব্যস্ত। মোবাইল, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সকল যোগাযোগের তৈরি করা হয়েছে প্রত্যেকে যেন তার আপনজনের সাথে সহজে যোগাযোগ করতে পারে, ভালোবাসা শেয়ার করতে পারে। যেই দূরত্ব কমানের জন্য এই ভার্চুয়াল জগতের সৃষ্টি সেই জগতটাই আজকে দূরত্ব বাড়িয়ে দিল। যখন কোনও সম্পর্কে তার প্রাপ্য সম্মান, সময়, ভালোবাসা সঠিক রূপে দেয়া হয় তখন সম্পর্কে কখনো দূরত্ব সৃষ্টি হতে পারে না। তখন সন্তান তার বাবা–মাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসবে না, শিক্ষক বা শিক্ষার্থী কেউ কারো হাতে লাঞ্চিত হবে না। কোনো সন্তান হতাশায় পড়ে আত্মহত্যা করবে না, প্রেমিক বা প্রেমিকা কেউ কাউকে ছেড়ে যাবে না, স্ত্রী তার স্বামীর কাছে স্বামী তার স্ত্রীর কাছে সব সময় প্রিয় হয়ে থাকবে। পুরুষ যখন নারীকে তার সম্মানের জায়গায় রেখে বিচার করবে তখন রাস্তায় কিংবা বাসে বা গৃহে কোনো নারী ধর্ষিত হবে না। প্রতিটি সম্পর্কের যেই নিজস্ব সম্মানের জায়গা আছে সেটি বজায় রাখার চেষ্টা করলে হয়তো এই ব্যধি থেকে আমরা মুক্ত হতে পারবো। সিগারেটের নিকোটিন যেমন একটি মানুষকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায় তেমনি অসম্মান সম্পর্কে ধীরে ধীরে দূরত্ব বাড়ায়। বজায় থাকুক সকল সম্পর্কের মূল্যবোধ। টিকে থাকুক সকল ভালোবাসা তার নিজস্বতা নিয়ে।