সরকারি ব্যবস্থাপনায় বিতরণ হওয়া চার ধরনের সার ইউরিয়া, ডিএপি, টিএসপি ও এমওপির দাম কেজিতে ৫ টাকা করে বাড়ানো হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় এবং কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে গত সোমবার এ বিষয়ে পৃথক বিজ্ঞপ্তি জারি করে বলা হয়েছে, চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক বাজারে সারের মূল্য বৃদ্ধিজনিত কারণে সারের আমদানি যৌক্তিক পর্যায়ে রাখা এবং সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সারের বিক্রয় মূল্য পুনর্র্নিধারণ করা হল। ১০ এপ্রিল থেকেই সারের নতুন দর কার্যকর হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। খবর বিডিনিউজের।
প্রতি কেজি ইউরিয়া সার কিনতে কৃষকদের এখন দিতে হবে ২৭ টাকা, যা এতদিন ২২ টাকা ছিল। আর ডিলাররা ওই সার পাবেন প্রতি কেজি ২৫ টাকা দরে, যা আগে তারা ২০ টাকায় কিনতেন। ডিএপি সার এতদিন ডিলার পর্যায়ে ১৪ টাকা, কৃষক পর্যায়ে ১৬ টাকায় বিক্রি হত। এখন এ সারের দাম হবে ডিলার পর্যায়ে ১৯ টাকা এবং কৃষক পর্যায়ে ২১ টাকা। টিএসপি সারের দাম বেড়ে ডিলার পর্যায়ে ২৫ টাকা, কৃষক পর্যায়ে ২৭ টাকা হয়েছে, যা আগে যথাক্রমে ২০ ও ২২ টাকা ছিল। এমওপি সারের দাম ডিলার পর্যায়ে ১৩ টাকা থেকে বেড়ে ১৮ টাকা এবং কৃষক পর্যায়ে ১৫ টাকা থেকে বেড়ে ২০ টাকা হয়েছে।
বিশ্ব বাজারে দর বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে ভর্তুকি সামাল দেওয়ার চেষ্টায় এর আগে ২০২২ সালের ১ অগাস্ট ইউরিয়া সারের দাম কেজিতে ছয় টাকা বাড়ানো হয়। সে সময় অন্যান্য সারের দাম অপরিবর্তিত রাখা হয়েছিল।
দেশে আগামী ২০২৩–২০২৪ অর্থবছরের জন্য ইউরিয়া, ডিএপিসহ মোট ১১ ধরনের ৬৮ লাখ ৪২ হাজার ৫০০ টন সারের চাহিদা নির্ধারণ করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে ২৭ লাখ টন ইউরিয়া, ১৬ লাখ টন ডিএপি, ৭ লাখ ৫০ হাজার টন টিএসপি, ৯ লাখ টন এমওপি, ৩০ হাজার টন এমএপি, ৩০ হাজার টন এনপিকেএস, ৫ লাখ ৫০ হাজার টন জিপসাম, এক লাখ ৪০ হাজার টন জিংক সালফেট, দুই হাজার ৫০০ টন অ্যামোনিয়াম সালফেট, ৯০ হাজার টন ম্যাগনেশিয়াম সালফেট, ৫০ হাজার টন বোরন সারের চাহিদা ঠিক করা হয়েছে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিকেজি ইউরিয়া সারের বর্তমান দাম ৪৮ টাকা, ডিএপি ৭০ টাকা, টিএসপি ৫০ টাকা আর এমওপি ৬০ টাকা। এর ফলে ৫ টাকা দাম বৃদ্ধির পরও সরকারকে প্রতিকেজি ইউরিয়াতে ২১ টাকা, ডিএপিতে ৪৯ টাকা, টিএসপিতে ২৩ টাকা এবং এমওপিতে ৪০ টাকা ভর্তুকি দিতে হবে।
গত তিন বছর ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম প্রায় ৩–৪ গুণ বেড়েছে। এর ফলে দেশে সার বাবদ সরকারের ভর্তুকিও বেড়েছে প্রায় ৪ গুণ। ২০২০–২১ অর্থবছরে যেখানে ভর্তুকিতে লেগেছিল সাত হাজার ৪২০ কোটি টাকা; সেখানে ২০২১–২২ অর্থবছরে লেগেছে ২৮ হাজার কোটি টাকা, আর চলতি ২০২২–২৩ অর্থবছরে প্রয়োজন হবে প্রায় ৪৬ হাজার কোটি টাকা। সারে ২০০৮–০৯ অর্থবছর থেকে এখন পর্যন্ত সর্বমোট এক লাখ ১৯ হাজার ৮৩৭ কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়ার কথা জানানো হয়েছে সরকারের তরফ থেকে।