সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার মাধ্যমে কর্মসংস্থানে সফলতা অর্জন করতে হবে

| মঙ্গলবার , ১২ অক্টোবর, ২০২১ at ৬:১১ পূর্বাহ্ণ

এক গবেষণায় বলা হয়েছে, দেশে কর্মসংস্থানে তিনটি বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। প্রথমত, বর্তমানে কর্মসংস্থান প্রবৃদ্ধির হার জিডিপির প্রবৃদ্ধির হারের চেয়ে কম। দ্বিতীয়ত, উৎপাদন ও নির্মাণ খাতে কর্মসংস্থান ২০১৩ থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের মধ্যবর্তী সময়ে হ্রাস পেয়েছে। তৃতীয়ত, অনানুষ্ঠানিক খাতে তরুণদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সানেমের জ্যেষ্ঠ গবেষণা সহযোগী ইশরাত শারমীন এক আলোচনা অনুষ্ঠানে উক্ত গবেষণা প্রবন্ধটি উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা দেশের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ভূমিকা রাখতে পারে। তবে এই পরিকল্পনা এমন সময়ে বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে যখন দেশ করোনার কারণে সৃষ্ট আর্থসামাজিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষার মানোন্নয়ন ও লিঙ্গ সমতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে অর্জিত সাফল্য করোনার কারণে আশঙ্কার সম্মুখীন হয়েছে। দেশের তরুণ জনগোষ্ঠীর জন্য এই পরিস্থিতি আরও চ্যালেঞ্জিং। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে না পারলে জনমিতির লভ্যাংশ কাজে লাগানোর যে সুযোগ রয়েছে, তা ঝুঁকির মুখে পড়বে।
তিনি বলেন, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তারুণ্যের প্রত্যাশা থাকবে, জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলের পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন, বেকারদের জন্য বিমা প্রকল্প প্রণয়ন করা, বাল্যবিবাহ, শিশুশ্রম ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধ করতে বিদ্যমান বৃত্তি প্রদান প্রকল্পগুলোর আওতা বৃদ্ধি করা। ‘৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় তরুণ জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন অ্যাজেন্ডা’ শীর্ষক আলোচনা সভাটি গত ২৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয়। এতে সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেছেন, বর্তমানে বাংলাদেশ প্রথম পর্যায়ের জনমিতি পার করছে। এর সুবিধা ভালোমতো নিতে আমাদের অর্থনৈতিক নীতির পাশাপাশি সামাজিক নীতিও গ্রহণ করে দুটির সমন্বয় করতে হবে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। আর জবাবদিহি নিশ্চিতে শুধু সরকার নয়, সুশীল সমাজ ও গবেষকেরাও ভূমিকা রাখতে পারেন।
জাগো ফাউন্ডেশনের সহকারী পরিচালক এশা ফারুক বলেন, দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও শ্রমবাজারের মধ্যে অসামঞ্জস্যতা রয়েছে, যার ফলে যথাযথ কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। দেশে উদ্যোক্তা তৈরি হলেও তাঁরা টিকে থাকতে পারছেন না। কারণ, তাঁদের দক্ষতা থাকলেও যথাযথ অংশীজনের সঙ্গে যোগাযোগ ঘটিয়ে দেওয়া হচ্ছে না। সমাজে কারিগরি শিক্ষার ব্যাপারে যে বিরূপ মনোভাব রয়েছে, তা পরিবর্তন জরুরি। ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্মগুলোকে আরও কার্যকর করে তুলতে হবে। সে জন্য উন্নত মানের ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবস্থা দরকার।
একশনএইড বাংলাদেশের ব্যবস্থাপক নাজমুল আহসান বলেন, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার ইতিবাচক দিক হচ্ছে এটি অনেক স্বপ্ন দেখাচ্ছে। দিকনির্দেশনা দিচ্ছে। তবে এটির বাস্তবায়ন দরকার, না হলে বাংলাদেশ জনমিতির সুবিধা অর্জনে ব্যর্থ হবে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য পর্যাপ্ত তথ্য সংগ্রহ ও তা পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। সরকারি বিভিন্ন সংস্থার পাশাপাশি সুশীল সমাজ ও বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের তুলে ধরা তথ্যগুলোকে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া উচিত। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো ও তা প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেটিকস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইআইডি) যুগ্ম পরিচালক ফাল্গুনি রেজা বলেন, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় তরুণদের বিভিন্ন দাবির প্রতিফলন ঘটেছে। তবে সেসব বাস্তবায়নের জন্য পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ প্রয়োজন। দক্ষতা বৃদ্ধির জন্যও বরাদ্দ বৃদ্ধি করা দরকার।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দেশে প্রতিবছর প্রায় ২০ লাখ শ্রমিক কর্মবাজারে প্রবেশ করে। এর মধ্যে ৬ থেকে ৭ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হয় বিদেশে। তবে করোনা মহামারীর কারণে দেশে বেকারত্বের হার বেড়ে গেছে। বাংলাদেশে স্বাভাবিক বেকারত্বের হার ৪ দশমিক ২ শতাংশ হলেও যুব বেকারত্বের হার ১১ দশমিক ৬ শতাংশ। করোনাভাইরাসের কারণে সেটি কয়েক গুণ বেড়ে গেছে বলে বিভিন্ন পর্যালোচনায় উঠে এসেছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এর তথ্য অনুযায়ী, করোনা মহামারীতে বিশ্বে ছয়জনের একজন বেকার হয়েছে, আর বাংলাদেশে বেকার হয়েছে চারজন যুবকের মধ্যে একজন, যা প্রায় ২৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ। করোনায় কর্মহীন জনগোষ্ঠী নিয়ে গবেষণা করেছেন অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারকাত। তার গবেষণায় দেখানো হয়- দেশে কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে ৬ কোটি ৮২ লাখ ৮ হাজার মানুষ কর্মে নিয়োজিত ছিলেন। শুধু লকডাউনের কারণে কর্মহীন হয়েছেন ৩ কোটি ৫৯ লাখ ৭৩ হাজার ২৭১ জন। অর্থাৎ মোট কর্মগোষ্ঠীর ৫৯ শতাংশ মানুষই কর্মহীন হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেকার হয়েছে সেবা খাতে।
আসলে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে অগ্রগতি অব্যাহত রয়েছে। তবে গরিব-মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ যত সহজে বাড়ানো যায়, উচ্চশিক্ষিত যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ জ্যামিতিক হারে বাড়ানো যায় না। সেবা খাতে ঈর্ষণীয় উন্নতি, তথ্যপ্রযুক্তিতে উন্নতির ধারা বেগবান হলেও, শিল্পায়নের ক্ষেত্রে উন্নতির জন্য কিছুটা সময় প্রয়োজন। সরকার বিশেষ প্রণোদনা দিয়ে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির বহুমুখী উদ্যোগ নিয়েছেন। শিল্পায়ন ছাড়া প্রয়োজনীয় কর্মসংস্থান হবে না। সরকারের ধারাবাহিকতা থাকলে অচিরেই সেই লক্ষ্যও অর্জিত হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে