সবুজ বনায়নে লায়ন মো. হাকিম আলী

রূপম চক্রবর্ত্তী | মঙ্গলবার , ৩১ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৫:৪৩ পূর্বাহ্ণ

নিজের কর্ম ব্যস্ততার মাঝেও যিনি জীবনকে প্রকৃতির সাথে মিশিয়ে রেখেছেন তিনি বাংলাদশের অন্যতম ব্যবসায়ী, হাজারো মানুষের কর্মদাতা, বিশিষ্ট শিল্পপতি লায়ন মো. হাকিম আলী। ১৯৯০ সালে তিনি সামাজিক সংগঠন কর্ণফুলি দুরন্ত দুর্বার ক্লাবের মাধ্যমে যে বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম শুরু করেছিলেন সেই কার্যক্রম এখনো অব্যাহত রেখেছেন। বিগত ৩৩ বছর ধরে এই প্রকৃতি প্রেমিক মানুষটি সবুজের সাথে মিশে আছেন। তিনি বলেন, ‘বৃক্ষরোপণের যুগোপযোগী আয়োজন দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে পারলে মানুষের মধ্যে সচেতনতার পাশাপাশি বৃক্ষরোপণে উৎসাহ জাগবে। যেভাবে প্রকৃতির ধ্বংস লীলা শুরু হয়েছে তাতে প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখতে আমাদের সকলের উচিত অন্তত একটি করে গাছ লাগানো’। তাঁর প্রিয় প্রতিষ্ঠান ডায়মন্ড সিমেন্ট লিমিটেড লক্ষ লক্ষ চারা গাছ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিতরণ করেছেন। লায়ন মো. হাকিম আলী বলেন, গাছ হচ্ছে পৃথিবীর পরিবেশের ছাঁকনি। ছাঁকনি যেমন পানি থেকে ময়লা শোষণ করে পানিকে পরিশুদ্ধ করে তেমনি গাছও পরিবেশ থেকে বিষাক্ত গ্যাস শোষণ করে পরিবেশকে বিশুদ্ধ করে। তাই আমাদের বেশি বেশি করে গাছের চারা রোপণ করে পরিবেশকে রক্ষা করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মদিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম নগরীর কর্ণফুলী উপজেলার অন্যতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আজিম হাকিম স্কুল এন্ড কলেজে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। চর পাথরঘাটার খোয়াজ নগরে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে পরিচালনা পর্ষদ সভাপতি ও ডায়মন্ড সিমেন্টের পরিচালক লায়ন মো. হাকিম আলী প্রধান অতিথি হিসেবে ফলদ গাছের চারা লাগিয়ে কর্মসূচির সূচনা করেন। অনুষ্ঠানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে হাকিম আলী বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক ব্যতিক্রমী এবং অনন্য উচ্চতায় রয়েছেন শেখ হাসিনা। তাঁর নেতৃত্বে অমিত সম্ভাবনার দেশ হিসাবে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে অপ্রতিরোধ্য গতিতে। তাঁর দূরদর্শী ভূমিকায় দেশের অর্থনীতির চাকা সচল আছে। আর তার সময়োপযোগী নেতৃত্ব দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বাংলাদেশ প্রশংসিত হচ্ছে বিশ্বদরবারেও। তিনি প্রধানমন্ত্রীর ডাকে সাড়া দিয়ে বৃক্ষরোপণ অভিযানের মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষায় এগিয়ে আসার আহবান জানিয়ে বলেন, ‘আজকের জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হলে আমাদের সবুজ সোনার বাংলাকে আরও সবুজ করতে হবে।’

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকী ও মুজিব শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক কোটি গাছ লাগানোর কর্মসূচিকে তিনি আন্তরিকভাবে গ্রহণ করেছিলেন। গাছ লাগানোর সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে দেশব্যাপী বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় নোয়াখালী জেলায় তাঁর নির্দেশনায় দেশের খ্যাতিমান সিমেন্ট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ডায়মন্ড সিমেন্ট লিমিটেড বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করেছেন। এতে নোয়াখালী জেলার বিভিন্ন স্থানে ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছ লাগানো হয়। ৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ জেলা প্রশাসন সভাকক্ষে বৃক্ষরোপণ ও বৃক্ষের চারা বিতরণ কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, নোয়াখালীর তৎকালীন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খান। ডায়মন্ড সিমেন্টের পরিচালক লায়ন মো. হাকিম আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৃক্ষরোপণ ও বৃক্ষের চারা বিতরণ কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খান বলেন, দেশব্যাপী বৃক্ষরোপণ কর্মসূচীর ধারাবাহিকতায় ডায়মন্ড সিমেন্ট লিমিটেডের উদ্যোগে ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছ লাগানোর উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। কয়েকবছর আগে লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলায় ডায়মন্ড সিমেন্টের পরিচালক শিল্পপতি লায়ন মো. হাকিম আলী বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন রায়পুর পৌরসভার মেয়র এবিএম জিলানী।

বিগত ১৫ জুলাই ২০২০ বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কেট হাউস চত্বরে ডায়মন্ড সিমেন্ট লিমিটেডের সম্মানিত পরিচালক লায়ন মো. হাকিম আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৃক্ষরোপণ কর্মসূচীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে লায়ন হাকিম আলী বলেছিলেন, বিভিন্ন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে নারকেল, আম, তাল, পেঁয়ারা, জলপাই, লেবু, বকুল, আমলকী সহ বিভিন্ন প্রজাতির লক্ষাধিক বৃক্ষের চারা রোপন করা হবে। তিনি আরো বলেন, দেশ ও পরিবেশের উন্নয়নে ডায়মন্ড সিমেন্ট সবসময় সচেষ্ট। বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি তারই অংশ। এই কর্মসূচী ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। প্রধান অতিথি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন ডায়মন্ড সিমেন্ট লিমিটেডকে এই উদ্যোগের জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বলেন দেশের ১৭ কোটি মানুষ ১টি করে চারা লাগালেও ১৭ কোটি গাছ হয়। নির্মল অক্সিজেন ও সুন্দর পরিবেশের জন্য গাছ লাগানোর আহ্বান জানান।

গত ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ ইংরেজি আগ্রাবাদ এক্সেস রোডে ডায়মন্ড সিমেন্ট লিমিটেডের সহযোগিতায় লায়ন মো. হাকিম আলীর সভাপতিত্বে লায়ন্স ও লিও ক্লাব অব চিটাগাং কসমোপলিটানের উদ্যোগে বৃক্ষরোপণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সুজন বলেছিলেন, চট্টগ্রাম প্রাকৃতিকভাবে সবুজে ভরা নগরী। মানবজাতির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য অক্সিজেন অন্যতম উপাদান। অক্সিজেন ছাড়া প্রাণীজগতের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। এজন্য বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের ভারসাম্য রক্ষায় বেশি করে গাছ লাগাতে হবে। শুধুমাত্র অক্সিজেন সাপোর্ট না পেয়ে অনেক করোনা রোগী মারা গেছে। তাই নিজের বেঁচে থাকার স্বার্থে গাছ লাগানো মানে দেশ বাঁচানো। দেশের মানুষকে তথা নিজেকে বাঁচানো। সভাপতির বক্তব্যে লায়ন মো. হাকিম আলী বলেন, মুজিববর্ষে সারাদেশে এক কোটি গাছের চারা রোপণের কর্মসূচির অংশ হিসেবে আমরা গাছ লাগানোর কর্মসূচি পালন করছি।

বিগত সময়ে লায়ন মো. হাকিম আলী চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মাধ্যমে আগ্রাবাদ এক্সেস রোড থেকে বড়পোল পর্যন্ত সবুজায়নের মাধ্যমে প্রকৃতির সাথে মানুষের সম্পর্ক তৈরির জন্য সেতু বন্ধন রচনা করেন। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ, জেলা পুলিশ, চুয়েট, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি, সওজ, পলিটেকনিকেল কলেজ, বিভিন্ন মসজিদ, বাকলিয়া সৎসঙ্গ বিহার, উপসনালয়, উপজেলা অফিস, স্কুল, কলেজসহ অনেক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে লায়ন মো. হাকিম আলী ফলদ, ওষুধি এবং জাতীয় গাছ বিতরণ করেছেন। দুরন্ত দুর্বার, জাগরণী সংঘ, মুক্তবিহঙ্গ ক্লাব, চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন সামাজিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদ, বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা, নবদূত একতা সংঘ, আলাভী ফাউন্ডেশন, আলোর পথে কর্ণফুলী, জুলধা শাহ আমির উচ্চ বিদ্যালয় ও পরিষদ, শিকলবাহা আলোর পথিক, ডাংগারচর রহমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, কর্ণফুলী উপজেলা নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন, মাদারবাড়ি উদয়ন গলি উন্নয়ন সমন্বয় পরিষদ শিকলবাহা পাবলিক স্কুল এবং চরলক্ষ্যা গাউছিয়া মাদ্রাসায়ও লায়ন মো. হাকিম আলী চারাগাছ বিতরণ করেন।

ডায়মন্ড সিমেন্ট লিমিটেডের সম্মানিত পরিচালক লায়ন মো. হাকিম আলী কখনো কিছু পাওয়ার আশায় এতগুলো গাছ রোপণ করেননি। তিনি এই সামাজিক কাজগুলো করে যাচ্ছেন আমাদের কল্যাণের জন্য এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য। আমি বর্তমান সরকারের কাছে অনুরোধ জানাব বৃক্ষরোপণের জন্য লায়ন মো. হাকিম আলী এবং ওনার মতো গুণীজনকে যেন পুরস্কৃত করা হয়, পাশাপাশি প্রত্যাশা রাখছি ওনার মতো দেশের সব দেশপ্রেমিকরা এগিয়ে আসুক বাংলাদেশের সবুজ বিপ্লবের জন্য।

লেখক: প্রাবন্ধিক

পূর্ববর্তী নিবন্ধনিজের ভেতর মূল্যবোধকে জাগাতে হবে
পরবর্তী নিবন্ধটেকসই উন্নয়নে নৌপথকে যথাযথ গুরুত্ব দিতে হবে