বিশ্বব্যাপী প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে লন্ডভন্ড সবকিছু। কোটি কোটি মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ১০ লাখেরও বেশি মানুষ। করোনা ভাইরাস নির্মূলের জন্য বিশ্বের নানা দেশে ভ্যাকসিন /টিকা আবিষ্কারে গলদঘর্ম চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা। এই লেখা যখন লিখছি তখন যুক্তরাষ্ট্রের দুটি ওষুধ কোম্পানি ফাইজার ও মডার্ণা তাদের নিজেদের করোনা ভ্যাকসিনের তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল সম্পন্ন করেছে। এতে দুই ভ্যাকসিনই প্রায় ৯০ শতাংশের উপর কার্যকরের দাবি করেছে ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী সেসব প্রতিষ্ঠান। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাও দুই ভ্যাকসিনের ব্যাপারে আশাবাদি। অক্সফোর্ডের করোনা ভ্যাকসিনও তাদের তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল সম্পন্ন করেছে এবং এতে ৭০% এর বেশি কার্যকরের দাবি করা হয়েছে।
করোনা ভাইরাসের টিকা নিয়ে দেশ অস্বস্তিতে ছিল। হতাশাও ছিল জনমনে। কারণ বাংলাদেশ কার কাছ থেকে টিকা আনবে তা ছিল সম্পূর্ণ অজানা। সে আশঙ্কা দূর হয়েছে। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ যুক্তরাজ্যের অঙফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি টিকাই আনতে যাচ্ছে। প্রাথমিকভাবে তিন কোটি ডোজ টিকা আনা হবে। এ নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশের বেঙ্মিকো ফার্মার সঙ্গে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি সই হয়েছে। এই তিন কোটি টিকা বাংলাদেশের দেড় কোটি মানুষকে দেয়া হবে। কারণ প্রত্যেক মানুষকে দুই ডোজ করে টিকা দিতে হবে। টিকাটির ৩ কোটি ডোজ বিনামূল্যে দেয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো করোনা ভ্যাকসিনের মূল্য নির্ধারণ ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কারা পেতে পারে সে সম্পর্কে একটি ধারণা দিয়েছেন।
প্রথমে করোনার চিকিৎসা ও নিয়ন্ত্রণে নিয়োজিত ফ্রন্টলাইনে যারা ছিলেন (যেমন, ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ আরো যারা ছিলেন) প্রথমে তাদেরকেই ভ্যাকসিন প্রদান একপ্রকার নিশ্চিত। যা একেবারেই স্বাভাবিক এবং যুক্তিযুক্ত।
আমাদের দেশে বেশিরভাগ মানুষ আর্থিকভাবে তেমন সচ্ছল নয়। দারিদ্রসীমার নিচে বাস করে বহু লোক। অনেকের দিনে এনে দিনে খাওয়ার পরিস্থিতিও নেই। এ অবস্থায় ভবিষ্যতে করোনা ভ্যাকসিন চড়াদামে কিংবা বেশিমূল্যে বিক্রি হলে তা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। সেজন্য দেশে করোনা ভ্যাকসিন সর্বসাধারণের পাওয়ার জন্য সুনিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি বিতরণ ব্যবস্থাকে ত্রুটিমুক্ত করতে হবে। করতে হবে দুর্নীতিমুক্ত। ভ্যাকসিন এভেইএভেল হলে অন্যান্য টিকার (যা বিনামূল্যে দেওয়া হয়) ন্যায় বিতরণ করা যেতে পারে।
করোনা ভ্যাকসিনের সহজ প্রাপ্তি ও যথাযথ প্রয়োগ হবে বড় ধরণের সফলতা। মূল্য সামর্থের বাইরে হলে আর্থসামাজিক অবস্থার কারণে অনেকে সেটা কিনতে পারবেনা বা আগ্রহী হবেনা। ফলে সকলের করোনা ভ্যাকসিন পাওয়াও সুনিশ্চিত হবেনা। কারণ, প্রাথমিকভাবে বিনামূল্যে দেওয়া হলেও পরবর্তীতে হয়তো একটা মূল্য নির্ধারণ করার প্রয়োজন হতে পারে। বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে এমন অনেক সামাজিক প্রতিষ্ঠানও করোনা ভ্যাকসিনের সহজ প্রাপ্তিতে ভূমিকা রাখতে পারে। উদ্দেশ্য হচ্ছে, সকলের জন্য করোনা ভ্যাকসিন প্রাপ্তি সুনিশ্চিত করা। এজন্য যে কোন উদ্যোগ ও প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ দেবে সর্বস্তরের মানুষ। করোনাকে বিদায় দিতে কার্যকর ভ্যাকসিনের কোন বিকল্প নেই। ভ্যাকসিনের কারণে মানুষের মনে করোনাভীতিও দূর হবে। আমরা আশাবাদী, যেভাবেই হোক দেশের সব মানুষের জন্য করোনা ভ্যাকসিন সুনিশ্চিত হবে। গড়ে তুলবে করোনামুক্ত সমাজ ও দেশ। করোনামুক্ত হবে গোটা বিশ্ব।
