সতর্কতা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করুন

সচল থাকছে বাংলাদেশের আকাশ যোগাযোগ

| শনিবার , ৯ জানুয়ারি, ২০২১ at ৫:৩৩ পূর্বাহ্ণ

বহির্বিশ্বের সঙ্গে যে কোনো দেশের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম আকাশ-পথ। এটি ব্যবহার করেই মূলত এক দেশের নাগরিক অন্য দেশে গমনাগমন করে বিধায় রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা উভয় দিক থেকেই আকাশপথ অত্যন্ত স্পর্শকাতর। তাই সংগতকারণেই প্রথম দফায় কোভিড-১৯ মহামারির বিস্তার ঠেকাতে প্রায় প্রতিটি দেশই আকাশপথে সুনির্দিষ্ট সময়ের জন্য ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। এখন চলমান দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিশ্বব্যাপী আতঙ্ক ছড়ানো যুক্তরাজ্যে শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাসের নতুন ধরনের প্রেক্ষাপটে অনেক দেশ আবারো আন্তর্জাতিক ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে জাপানসহ এশিয়ার অন্যান্য দেশ যেমন : সিঙ্গাপুর, ফিলিপাইন, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত ও হংকং যুক্তরাজ্য থেকে আসা সব যাত্রীকে দেশের ভেতরে প্রবেশে সম্পূর্ণভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। যুক্তরাজ্য থেকে আসা সব ফ্লাইট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। চীন ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সব ফ্লাইট বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরিবর্তনশীল বাস্তবতায় এ ধরনের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারির প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলেও বাংলাদেশ সরকার আপাত আকাশপথে যোগাযোগ সচল রেখে সতর্কতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ সিদ্ধান্তের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা জরুরি। তবে নিকট অতীতের অভিজ্ঞতা আমাদের জন্য খুব একটা সুখকর নয়। গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম কোভিড রোগী শনাক্ত হওয়ার পর বিমানবন্দরগুলোর স্ক্রিনিংসহ কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হলেও তাতে খুব একটা সুফল মেলেনি। দেখা গেছে, তৎপরবর্তী সময়ে আকাশপথে বিভিন্ন দেশ থেকে বিপুলসংখ্যক প্রবাসী দেশে আসা শুরু করেছিল। ক্রমবর্ধমান সংক্রমণের প্রেক্ষাপটে বিশেষ করে ইতালি থেকে অনেক প্রবাসী আকাশপথে দেশে প্রবেশ করেছিল। সরকারি তরফে তাদের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করা হলেও তা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা যায়নি। একে তো কোয়ারেন্টিনে থাকতে প্রবাসীদের প্রচণ্ড অনীহা ছিল, তদুপরি ছিল কিছু ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটি। ফলে বিদেশ ফেরতদের বাধ্যতামূলক প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা যায়নি এবং অনেকেই তাৎক্ষণিকভাবে নিজ নিজ এলাকায় চলে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল। পরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এলাকাভিত্তিক কোয়ারেন্টিনের নির্দেশনা দেয়া হলে সেটিও যথাযথভাবে পরিপালিত হয়নি। নিজ বাড়িতে অবস্থান না করে তারা দোকানপাটে আড্ডা দিয়েছিল, বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছিল। বলা চলে, প্রশাসনের নজরদারির অভাব এবং প্রবাসীদের অপরিণামদর্শিতায় দেশব্যাপী দ্রুত সামাজিক সংক্রমণ ঘটেছিল। তাই এবার নীতি নির্ধারকসহ স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানকে অতীত থেকে শিক্ষা নিতে হবে। দক্ষভাবে সততার সঙ্গে ভুলগুলো বিশ্লেষণ করতে হবে, যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে। নইলে করোনার নতুন ধরনের কারণে আমাদের বাড়তি মূল্য দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাজ্য ফেরতদের বাধ্যতামূলক ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের নির্দেশ দিয়েছেন। কঠোরভাবে এর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। ঢাকার আশকোনার হজ ক্যাম্প ও দিয়াবাড়ির পাশাপাশি কিছু হোটেল, এমনকি সিলেটে স্থানীয়ভাবে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এক্ষেত্রে আগের ত্রুটিগুলো বিবেচনায় রেখে ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে হবে। কোয়ারেন্টিন কেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তা বাড়ানো জরুরি। যাত্রীদের জন্য সেগুলো বাস উপযোগী এবং প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। প্রথম দফায় ব্যবস্থা করা প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন কেন্দ্রগুলোর ব্যাপারে যাত্রীদের সুযোগ সুবিধার অপর্যাপ্তসহ নানা অভিযোগ ছিল। এবার এদিকটিতে বিশেষ মনোযোগ দিয়ে সেগুলোকে স্বস্তিদায়ক করে তুলতে হবে, যাতে যাত্রীরা প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকতে আগ্রহী হয়। একই সঙ্গে অন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাগুলোও জোরদার করা চাই। সব দেশ থেকে আসার ক্ষেত্রে কোভিড টেস্ট বাধ্যতামূলক করা, যুক্তরাজ্য ফেরতদের বিশেষ স্ক্রিনিংয়ের আওতায় আনা, ট্রানজিট ফ্লাইটে আসা যাত্রীদের তালিকা আগে থেকে নিয়মিত সংগ্রহ করে বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হচ্ছে। এসব পদক্ষেপ কেবলই সিদ্ধান্ত পর্যায়ে থাকলে হবে না, সেগুলোর সুষ্ঠু বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। এছাড়া সমুদ্রবন্দরে হয়েও কার্গো জাহাজে করে অনেক বিদেশি প্রবেশ করে। এভাবেও যুক্তরাজ্য থেকে দেশে প্রবেশের সুযোগ আছে। কাজেই সমুদ্রবন্দরে স্ক্রিনিংয়ের পাশাপাশি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা কার্যকর করা জরুরি। আগের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায় দেশের বিমান চলাচল খাতে অপরিমেয় আর্থিক ক্ষতি হয়েছিল। কিছু এয়ারলাইনস বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। অনেক কর্মী চাকরি হারিয়েছিল। সরকার প্রণোদনা ঘোষণা করলেও ক্ষতি প্রশমন করে খাতটি এখনো পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। এ অবস্থায় বড় শঙ্কার প্রেক্ষাপটেও সরকার যুক্তরাজ্যের সঙ্গে আকাশপথ সচল রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মূলত এয়ারলাইনসগুলোর আর্থিক মন্দার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে। কাজেই এয়ারলাইনসগুলো কেও অধিক একাগ্রতা ও দায়িত্বশীলতা দেখাতে হবে। প্রত্যেক যাত্রী যাতে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলে এবং অন্য ব্যবস্থাপনাগুলো অনুসরণ করে সেটি নিশ্চিত করতে হবে তাদেরই। এর ব্যত্যয় হলে এয়ারলাইনগুলোর বিরুদ্ধে নিতে হবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। স্বাস্থ্যগত বড় বিপর্যয়ের ঝুঁকি সত্ত্বেও কিছু দেশ এখনো যুক্তরাজ্যের সঙ্গে আকাশপথ চালু রেখেছে। যে সব দেশ কী ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে, কীভাবে করোনার নতুন ধরন মোকাবেলায় প্রস্তুতি নিচ্ছে, সেগুলো নিয়মিত পর্যালোচনা করতে হবে এবং সে অনুযায়ী পরিকল্পনা ও কৌশল সাজাতে হবে। সরকার বেবিচক, এয়ারলাইস কর্তৃপক্ষ এবং স্বাস্থ্য বিভাগের বাস্তবানুগ পদক্ষেপ ও সক্রিয়তায় করোনার নতুন ধরন ঘিরে তৈরি হওয়া স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়ানো যাবে বলে প্রত্যাশা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে