সড়কের ৮০ শতাংশই কাঁচা, ১৩ গ্রামের মানুষের ভোগান্তি

নারায়ণহাটের চাঁনপুর সড়ক

মোহাম্মদ জিপন উদ্দিন, ফটিকছড়ি | বৃহস্পতিবার , ২৩ মে, ২০২৪ at ৯:৪৪ পূর্বাহ্ণ

চাঁনপুরধামারখিলধৈইলের খিল সড়কের নারায়ণহাট বাজার থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার কাঁচা (মাটির) সড়কের দুরাবস্থায় ১৩ গ্রামের মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। ফটিকছড়ি উপজেলার নারায়ণহাটের ১৪ কিলোমিটারের এ সড়কের মধ্যে ১ কিলোমিটার সড়কের পিচঢালাইয়ের কাজ শুরু হয়ে কাজের এক বছরে পেরিয়ে গেলেও তা সম্পন্ন হয়নি। ফলে আরো দুর্ভোগ বেড়েছে। বাকি ১৩ কিলোমিটার সড়কের মাঝে মাঝে অল্প কিছু সড়কে ব্রিক সলিন থাকলেও তা চলাচল অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ফলে ১৪ কিলোমিটার সড়ক দিয়ে মানুষের চলাচল করা দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই হেঁটে চলাও কঠিন হয়ে পড়ে। এতে করে ওই এলাকার ১৩ গ্রামের অন্তত ২০ হাজার মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ ১৪ কিলোমিটার সড়কটি কখনোই পূর্ণাঙ্গভাবে নির্মিত হয়নি। স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে বিভিন্ন সময় ছোট ছোট বাজেটে সড়কের মাঝে মাঝে ব্রিক সলিন করা হয়েছিল। যা বর্তমানে নষ্ট হয়ে গেছে।

স্থানীয়রা জানান, কাঁচা এ সড়কটি সংস্কার না করায় প্রায় সব স্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে চাঁনপুর, সিহং পাড়া, মালেক সওদাগর বাড়ি, গুড়া মিয়ার টিলা, মাইজকান্দি, জমাদারখিল, যোইগগের খিল, দামারখিল, চিকন ছড়া, ঈদগাঁ, লম্বাতলি, কুমারি গ্রাম, ঢালার মোড়, দূর্গা বিল গ্রামের ২০ হাজার মানুষের চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন স্কুলকলেজ ও মাদ্রাসাগামী শিক্ষার্থীরা। শুষ্ক মৌসুমে মোটরসাইকেল বা টেঙি চলাচল করা গেলেও সামান্য বৃষ্টি হলেই এ সড়ক দিয়ে গাড়ি চালানো অসম্ভব হয়ে পড়ে।

সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কের বেশিরভাগ স্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ঝুঁকি নিয়ে হেলেদুলে চলছে এ সড়কের প্রধান যান মোটরসাইকেল এবং টেঙি। দৈনিক ৫৭ হাজার মানুষ চলাচল করে এ সড়ক দিয়ে। নতুন করে প্রস্তাবিত আলহাজ্ব বজল আহমদ প্রাইমারি বিদ্যালয় সহ মোট ৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে এ সড়কের পাশে।

চাঁনপুর গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ হাসেম আলী জানান, বাড়ি থেকে বাজারে আসা যাওয়া করতে খুব কষ্ট হয়। কেউ অসুস্থ হলে ঠিক সময়ে ডাক্তারের কাছে নেওয়া যায় না। সামান্য বৃষ্টি হলে যাতায়াত বন্ধ থাকে প্রায়। এ রাস্তায় টেঙি মোটরসাইকেল উল্টে যায় বলে অন্য এলাকার চালকরা আসতে চান না।

মোটরসাইকেল আবুল হাশেম বলেন, কী বলব দুঃখের কথা। দেশে বহু রাস্তা হল। কিন্তু চাঁনপুর রাস্তাটি হলো না। এখানে মানুষের প্রধান যানবাহন মোটরসাইকেল। এ সড়কে মোটরসাইকেলও ঝুকিপূর্ণ। অনেক সময় গাড়ি উল্টে যায়। টেক্সিচালক বাহাদুর মিয়া জানান, অনেক কষ্ট করে গাড়ি কিনেছি। কিন্তু রাস্তার জন্য গাড়িটি দ্রুত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ঘনঘন গাড়ি নষ্ট হওয়ায় অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি আমরা। বর্ষাকালে তো গাড়ি চলেই না।

মো. আরিফ নামের এক শিক্ষার্থী জানান, এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে হয়। ঠিকমতো গাড়ি চলে না। বর্ষাকালে বেশিরভাগ সময় স্কুলে যেতে পারি না। আমাদের চলাচলে সীমাহীন কষ্ট হয়।

এ বিষয়ে নারায়ণহাট ইউপির ৭ নং ওয়ার্ড সদস্য শাহীন খান জানান, রাস্তাটি করার জন্য দাবি করতে করতে এখন হয়রান হয়ে গেছি। আমাদের চলাচলের প্রধান এ সড়ক কবে হবে সে প্রশ্ন এখন সবার মাঝে। এটি সংস্কারের জন্য এখন জনগণ নিয়ে রাস্তায় নেমে আসা ছাড়া পথ নেই।

নারায়ণহাট ইউপির চেয়ারম্যান আবু জাফর মাহমুদ বলেন, নারায়ণহাটের প্রধান সমস্যা চাঁনপুর সড়কটি। আমরা অনেক বছর আগে বিভিন্ন বরাদ্দ থেকে মাঝে মাঝে ইট বসিয়েছে। ১৪ কিলোমিটার সড়কে ১ কিলোমিটারের কাজ চলছে আজ ১ বছর। বাকি ১৩ কিলোমিটার এখনো টেন্ডারও হয়নি। আমাদের সবার প্রাণের দাবি এ সড়কটি নির্মিত করা হোক। তিনি বলেন, আমাদের মাননীয় এমপি খাদিজাতুল আনোয়ার সনিকে আমরা অনুরোধ করেছি সড়কটি করার জন্য, তিনি নিজেই এ সড়ক দেখে গেছেন। আশা করি এ ব্যাপারে তিনি ব্যবস্থা নিবেন।

উপজেলা এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা যায়, চাঁনপুরদামারখিল সড়কটি ইউনিয়ন ক্যাটাগরির একটি সড়ক। এখনো পর্যন্ত ওই সড়কটি পূর্ণাঙ্গভাবে নির্মিত হয়নি। সড়কটির ৮০ শতাংশ কাঁচা (মাটি)

এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী তন্ময় নাথ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সড়কটির ভোগান্তি সাধারণ মানুষকে পোহাতে হচ্ছে। ১ কিলোমিটার সড়কের কাজ চলছে। বাকি কাজগুলো বিভিন্ন বাজেটে আলাদা আলাদা করে যুক্ত করার চেষ্টা করছি। আশা করি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় সড়কটি নির্মিত হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরোটারি ক্লাব চিটাগং পোর্ট সিটির চক্ষু শিবির
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামের সাহিত্য সংস্কৃতি ইতিহাস ঐতিহ্য বেশ সমৃদ্ধ