সকালে তাইজুল ঝলক, বিকালে বিবর্ণ ড্র

চট্টগ্রাম টেস্ট

ক্রীড়া প্রতিবেদক | শুক্রবার , ২০ মে, ২০২২ at ৭:৫৬ পূর্বাহ্ণ

যে টেস্টের চারদিন এক ইনিংস করে ব্যাটিং করে দুদল সে টেস্টের ফল খোঁজাটা বোকামিই বটে। তারপরও চতুর্থ দিনের শেষ বিকেলে হঠাৎ তাইজুল ইসলাম শেষ দিনে কিছুটা রোমাঞ্চের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তাই আশা করা হয়েছিল হয়তো শেষ দিনে কিছু একটা হলেও হতে পারে। কিন্তু সেটা আর হয়নি। যদিও শেষ দিনেও তাইজুলের ভেল্কি অব্যাহত ছিল। কিন্তু শ্রীলংকার ব্যাটসম্যানরা ভিন্ন কিছু হতে দেয়নি। ফলে নিষ্প্রাণ ড্রয়ের মধ্য দিয়েই শেষ হলো বাংলাদেশ এবং শ্রীলংকার মধ্যকার চট্টগ্রাম টেস্ট। দিনের খেলার এক ঘণ্টা বাকি থাকতেই ড্র মেনে নিলো দুই দল। তখন অবশ্য নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেট হারিয়ে ২৬০ রান করেছিল শ্রীলংকা। তাদের লিড দাঁড়িয়েছিল ১৯২ রানের। শেষ দিনে যে সময় ছিল তাতে এই রান তোলা যেমন সম্ভব ছিল না বাংলাদেশের জন্য তেমনি সে সময়ে বাংলাদেশকে অল আউট করাটাও সম্ভব ছিল না শ্রীলংকার পক্ষে। তাই ড্র মেনে নেওয়াটাকেই বুদ্ধিমানের মনে করেছেন দুই অধিনায়ক। গতবছর শ্রীলংকা সফরে গিয়ে সিরিজের প্রথম টেস্ট ড্র করেছিল বাংলাদেশ। এরপর টাইগারদের শেষ আট ম্যাচের কোনোটিই ড্রতে শেষ হয়নি। বাংলাদেশ জিতেছে দুটি, আর হেরেছে বাকি ছয়টি।
চতুর্থ দিনই মূলত একরকম নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল এই টেস্টে ফল হচ্ছে না। তারপরও বাংলাদেশ আশা করছিল সাকিব এবং তাইজুল যদি মিরাকেল কিছু করতে পারে তাহলে ম্যাচের ফল হতে পারে। যদিও সে আশার পালে হাওয়া দিয়েছিল তাইজুল ইসলাম ও সাকিব আল হাসানের বোলিং। বিশেষ করে গতকাল দ্বিতীয় সেশনের শুরুতেই তাইজুল ও সাকিবের ঘূর্ণিতে দিমুথ করুনারাত্নে ও ধনঞ্জয় ডি সিলভার বিদায়ে একটা সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। কিন্তু সপ্তম উইকেট জুটিতে নিরোশান ডিকভেলা ও দিনেশ চান্দিমালের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে পরাজয়ের সব আশঙ্কা উড়িয়ে দেয় লংকানরা। অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ৩৩.৫ ওভারে ৯৯ রান যোগ করেছেন এ দুজন। ডিকভেলা ৬১ ও চান্দিমাল ৩৯ রানে অপরাজিত ছিলেন। আর তাতেই শেষ হয়ে যায় ম্যাচের ফলের সম্ভাবনা।
আগের দিনের ২ উইকেটে ৩৯ রান নিয়ে গতকাল শেষ দিনে ব্যাট করতে নেমেঠিলেন করুনারত্নে এবং কুশল মেন্ডিস। বেশ আক্রমনাত্নক ভঙ্গিতে ব্যাট করতে থাকেন মেন্ডিস। খেলছিলেন অনেকটা ওয়ানডে স্টাইলে। শেষ পর্যন্ত তাইজুলের হাতেই থামে কুশল মেন্ডিসের ঝড়। তবে ততক্ষণে ৪৩ বলে ৮টি চার এবং একটি ছক্কার সাহায্যে ৪৮ রান করেন মেন্ডিস। চার রান পর প্রথম ইনিংসে এক রানের জন্য ডাবল সেঞ্চুরি করতে না পারা অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসকে রানের খাতা খুলতে দেননি তাইজুল। দারুণ এক ফিরতি ক্যাচে তাকে ফেরান তাইজুল। হঠাৎ করেই যেন ম্যাচে উত্তেজনা ফিরে আসে। কিন্তু এরপর অধিনায়কের সাথে জুটি বেধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন ধনঞ্জয়া ডি সিলভা। তবে তাদের জুটিটা ৩৩ রানের বেশি হতে দেননি সাকিব। ৩৩ রান করা ধনঞ্জয়াকে ফেরান সাকিব মুশফিকের ক্যাচে পরিণত করে। এরপর অবশ্য বেশিদূর এগুতে পারেননি লংকান অধিনায়ক করুনারত্নে। নিজের হাফ সেঞ্চুরি করার পর ফিরেন তাইজুলের চতুর্থ শিকার হয়ে। ১৩৮ বলে ৫২ রানের ইনিংস খেলে দলকে রক্ষা করেন লংকান দলপতি। এরপর বাংলাদেশের সব সম্ভাবনায় জল ঢেলে দেন ডিকভেলা এবং দিনেশ চন্ডিমাল। দুজনের ৯৯ রানের জুটি ম্যাচটাকে ড্রয়ের পরিণতি বরণ করতে বাধ্য করে। ডিকভেলা ৯৬ বলে ৬১ রান করলেও চন্ডিমাল খেলেছেন ১৩৫ বলে ৩৯ রানের ধৈর্য্যশীল এক ইনিংস। বাংলাদেশের পক্ষে ৮২ রানে ৪টি উইকেট নিয়েছেন তাইজুল ইসলাম। একটি উইকেট নিয়েছেন সাকিব। প্রথম ইনিংসে ১৯৯ রান করা লংকান ব্যাটার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস জিতেছেন ম্যাচ সেরার পুরষ্কার। আর বল হাতে ক্যারিয়ার সেরা ৬ উইকেট নেওয়া বাংলাদেশের নাঈম হাসানর হয়েছেন মোস্ট ভেলুয়েবল প্লেয়ার অব দ্যা ম্যাচ। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের দুই পরিচালক আ.জ.ম. নাছির উদ্দিন এবং মনজুর আলম পুরষ্কার বিতরণ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবৃষ্টির আভাস, তাপদাহও কমে আসছে
পরবর্তী নিবন্ধএকুশের সেই অবিনাশী গান যেভাবে এল