সংসদে তোপের মুখে স্বাস্থ্যমন্ত্রী

অক্সিজেন সংকট

| রবিবার , ৪ জুলাই, ২০২১ at ৬:৪৪ পূর্বাহ্ণ

করোনা মহামারীকালে অক্সিজেন সংকট, স্বাস্থ্যখাতের অনিয়ম, সংসদে দেওয়া বক্তব্যের জের ধরে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে তুলোধুনো করেছেন বিরোধী দলের সদস্যরা, উঠেছে তার পদত্যাগের দাবিও। গতকাল শনিবার সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে তোপ দাগেন বিরোধীদলীয় সদস্যরা; যদিও মন্ত্রী জাহিদ মালেক এসময় অধিবেশন কক্ষে ছিলেন না।
আলোচনার সূত্রপাত ঘটিয়ে বিএনপির জি এম সিরাজ বলেন, বগুড়া কোভিডের হটস্পট। গত তিন দিনে বগুড়ায় মৃতের সংখ্যা ২৪ জন। মৃত্যুর কারণ হলো উচ্চমাত্রার অক্সিজেন সরবরাহের জন্য হাই ফ্লো নেইজাল ক্যানুলার সঙ্কট। আজকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী নেই। থাকলে ভালো হত। তিনি বগুড়ায় ২০টি করে হাই ফ্লো নেইজাল ক্যানুলা সরবরাহ এবং সার্বক্ষণিক অক্সিজেন সরবরাহের দাবি জানান।
গত ৩০ জুন সংসদে বাজেট পাসের সময় বিরোধী সংসদ সদস্যদের সমালোচনার মুখে স্বাস্থ্য খাতের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। জেলা হাসপাতালের সভাপতি সংসদ সদস্যরা উল্লেখ করে ওই দিন আইনপ্রণেতাদের ওপর দায় চাপান মন্ত্রী।
জাতীয় পার্টির রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, মাস্ক নিয়ে কথা হল। সেদিন আমি এখানে বলেছিলাম, মন্ত্রীকে ডিরেক্ট বলিনি। বলেছিলাম চার টাকার মাস্ক ৩৫৬ টাকায় কেন কেনা হল? উনি তদন্ত করবেন, দেখবেন, ব্যবস্থা নেবেন। এই হল মন্ত্রীর দায়িত্ব। তিনি সেটা এড়িয়ে বললো, এটা সত্য না। আমি তথ্য-প্রমাণ নিয়ে এসেছি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সংসদীয় কমিটিতে আলোচনা হয়েছে। দুদকে চলে গেছে। পত্রিকায় এসেছে। ওনাদের একটি প্রকল্পের পিডি স্বীকার করেছে। উনি বলেছেন, উনি ওইসময় ছিলেন না। উনি কী করবেন? স্বাস্থ্যমন্ত্রী এড়িয়ে না গিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিতেন। ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। নিতে হবে। খবর বিডিনিউজের।
জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, বেদনাদায়ক বিষয়। সাতক্ষীরায় হাসপাতালে অক্সিজেনের অভাবে সাতজন কোভিড রোগী এক ঘণ্টার মধ্যে ছটফট করতে করতে মারা গেছে। এই সাতক্ষীরা হল এর আগে যিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলেন রুহুল হক সাহেবের এলাকা। এইখানে তো ফাইভ স্টার হাসপাতাল হওয়া উচিৎ। অক্সিজেনের অভাবে কিভাবে রোগী মারা যান বুঝি না। মন্ত্রীরা যান আসেন, নিজের এলাকাডাও ঠিক রাখতে পারেন না?
ফিরোজ রশীদ বলেন, একটা তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আজ পর্যন্ত আমাদের সামনে আসল না। সারা পৃথিবীতে মানুষ মারা যাচ্ছে, কিন্তু চিকিৎসা দিতে গিয়ে এই ধরনের অনিয়ম মানা যায়? অনেক কিছু নাকি দিল। একটা হাসপাতালে অক্সিজেন নেই। হাই ফ্লো ক্যানুলা নেই। বগুড়া হাসপাতালে অক্সিজেনেই নেই। জিজ্ঞেস করলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলে সব দিচ্ছি, কোথাও কিছু দেয়নি। এইভাবে একটা বছর সময় নষ্ট করেছি। এক বছরের মধ্যে হাসপাতাল ওয়েল ইকুইপড করতে পারতাম। আমাদের এমপিদের দায়িত্ব দিত, সব কিছু করে দিতে পারতাম। কিন্তু দায়িত্ব না দিয়ে আমলাদের দেয়। জবাবদিহি আমাদের করতে হয়।
জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, দুই দিন আগে স্বাস্থ্যমন্ত্রী পার্লামেন্টের মতো জায়গায় বলে গেলেন, আমেরিকার সাথে তুলনা করেন। আমেরিকাতেও মানুষ মারা যায়। আমাদের এখানে অনেক মানুষ কম মারা যায়। মনে হইল যেন ওইটা উনার ক্রেডিট। উনার কারণেই বাংলাদেশে মানুষ মারা যায়নি।
চুন্নু বলেন, তিনি (স্বাস্থ্যমন্ত্রী) বললেন এক বছরে নাকি অনেক কাজ করেছেন। আজকের খবর আসছে বাংলাদেশের ৩৭টি জেলায় অক্সিজেনের ব্যবস্থা নেই। হাসপাতালে ৫ জন রোগী অক্সিজেন পায় তো ২০ জন লাইনে থাকে। কেবলমাত্র অক্সিজেনের কারণে যারা ছটফট করে মারা যাচ্ছেন। পত্রিকায় এত লেখালেখি হচ্ছে স্বাস্থ্যমন্ত্রী কি একটি হাসপাতালে গিয়ে এগুলো দেখেছেন। তিনি কী করেন? তিনি জুম মিটিং করেন।
নিউজিল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের প্রসঙ্গ তুলে সাবেক প্রতিমন্ত্রী চুন্নু বলেন, ইংল্যান্ডের স্বাস্থ্যমন্ত্রী আনন্দে আত্মহারা হয়ে একটি কিস করার কারণে তাকে রিজাইন দিতে হয়েছে। আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী কী মানুষ? বুঝলাম না। উনার লজ্জা-শরম কিছু নাই। চরিত্র নেই। ওনার রিজাইন দেওয়া উচিৎ।
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সমালোচনা করে বিএনপির হারুনুর রশীদ বলেন, উনি বলেছেন, আপনারা (এমপি) তো হাসপাতালের চেয়ার। মেশিন চলে না, লোক লাগবে এগুলো তো আপনাদেরকে দেখতে হবে। কিন্তু আপনারা তো দেখেন না।
উনার বক্তব্যে মনে হচ্ছে, কোনো এমপিই দায়িত্ব পালন করেন না। এই বক্তব্য আপত্তিজনক। স্বাস্থ্যমন্ত্রী গোটা হাউসকে অপমান করেছেন। তার বক্তব্য এক্সপাঞ্জ হওয়া দরকার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধফুটবল খেলায় আহত হওয়ার দেড় মাস পর শিশুর মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধমেরিন ড্রাইভ সড়কে ছয় ঘণ্টা বন্ধ যান চলাচল