সংশোধন ও তদন্তে হবে দুই কমিটি

পাঠ্যপুস্তকে ভুল

| বুধবার , ২৫ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৪:৫০ পূর্বাহ্ণ

নতুন শিক্ষাক্রমের জন্য ছাপানো পাঠ্যপুস্তকের ভুল সংশোধনে এবং কেন ভুল হল তা তদন্তে দুটি কমিটি করা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। একটি কমিটি হবে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে, যারা কাজ করবেন ভুল সংশোধন নিয়ে। অন্য কমিটি হবে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে, যারা এ ঘটনার পেছনে কারো ইচ্ছাকৃত ভুল বা অস্থিরতা সৃষ্টির উদ্দেশ্য ছিল কি না তা অনুসন্ধান করবে। খবর বিডিনিউজের।

নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠ্যবইয়ের ভুলভ্রান্তি, তথ্য বিকৃতি, সংশোধনী এবং এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের পদক্ষেপ নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী কমিটি করার কথা জানান। তিনি বলেন, আমি নানা মাধ্যম থেকে পাঠ্যবইয়ের ভুল নিয়ে আলোচনা শুনছি। গণমাধ্যম, রাজনীতির মাঠ, আজকাল সামাজিক মাধ্যম অনেক সরব, সব জায়গা থেকেই আমরা বইয়ের ভুলগুলো নিয়ে আলোচনা শুনছি। আমরা আগেও বলেছি, আমাদের এই বইগুলো নতুন শিক্ষাক্রমে পরীক্ষামূলকভাবে আমরা প্রণয়ন করেছি। আমরা বিভিন্ন জায়গা থেকে মতামত পাচ্ছি, সব জায়গা থেকে পাচ্ছি। আমরা শিক্ষার দায়িত্বে যারা আছি, এই পুরো প্রক্রিয়ার সাথে যারা আছি, মানুষের মধ্যে বইগুলো নিয়ে যে আগ্রহ তৈরি হয়েছে, সেটিকে আমরা ইতিবাচক হিসেবেই দেখছি।

মন্ত্রী বলেন, বইগুলোকে ঘিরে যে ভুল ধরা পড়ছে তা নিয়ে আমরা দুটি কমিটি করছি। একটি আমাদের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে, শুধু বিষয় বিশেষজ্ঞ না, ধর্ম, স্বাস্থ্য, মানসিক স্বাস্থ্য এমন নানা বিষয়ে যে বিশেষজ্ঞরা আছেন তাদের নিয়ে আমরা একটা কমিটি করছি। আমরা একটা লিংক দিয়ে দেব, দেশ বিদেশ থেকে আমাদের এই বই নিয়ে যে কোনো মতামত আমাদের জানালে এই কমিটির মাধ্যমে কোথাও কোনো ভুল থাকলে তা সংশোধন করা হবে।

হয়ত সর্ষের মধ্যেও কোথাও ভূত আছে। এনসিটিবির ভিতরেও যদি কেউ থেকে থাকে যে কেউ ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে এই ভুলগুলো করেছে। বই ছাপানোর বিষয়টি এত গুরুত্বপূর্ণ যে এখানে ভুল করার বিষয়টি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। কোথাও কারো গাফিলতি বা ইচ্ছাকৃতভাবে নেতিবাচক কোনো দিকে নেওয়ার অভিপ্রায় থেকে থাকলে তা খুঁজে বের করতে আমরা আরেকটি কমিটি করে দিচ্ছি। দ্বিতীয় কমিটিতে শিক্ষামন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট অন্য মন্ত্রণালয়, এমনকি প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকেও সদস্য থাকতে পারে বলে জানান মন্ত্রী।

দীপু মনি বলেন, সারা বিশ্ব এখন রূপান্তরের কথা বলছে। আমরা এই রূপান্তরের সাথে যুক্ত আছি। কিছুদিন আগে জাতিসংঘের আমন্ত্রণে আমি রূপান্তরমূলক শিক্ষার একটি আয়োজনে গেছি। সে অনুযায়ী শিক্ষাব্যবস্থায় রূপান্তরের অংশ হিসেবেই আমরা নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করেছি। একটি বছরে এ পাঠ্যবই একেবারে সঠিক করে ফেলা একটি দুরূহ কাজ। এবছর আমরা বইগুলো পরীক্ষামূলক হিসেবে দিয়েছি। আমাদের পাইলটিং চলছে। সারাবছর আমরা সবার কাছ থেকে মতামত নেব এবং সেখানে পরামর্শ অনুযায়ী পরিমার্জনপরিশীলনের সুযোগ থাকবে।

বইয়ের মধ্যে ধর্মীয় ও অন্যান্য নানা বিষয় নিয়েও মন্ত্রণালয়ের অবস্থান জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, বইগুলো প্রণয়নের সাথে আমরা যারা যুক্ত ছিলাম তারা বইয়ের কোথাও যেন ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণি, পেশা, লিঙ্গ বিদ্বেষবৈষম্য না থাকে তার জন্য সতর্কতা অবলম্বনের চেষ্টা করেছি। বইয়ে ধর্মীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা আছে। সংবেদনশীল কোনো বিষয় থাকলে আমরা নিশ্চয় নজর দেব। আওয়ামী লীগ কখনোই ধর্মবিরোধী বা বিদ্বেষী কিছু কখনো করেনি। কাজেই অনেক অভিযোগ আসতে পারে, অভিযোগের সত্যতা থাকলে তা সংশোধন করা হবে।

সারাদেশে ২০২৩ সালে চালু হওয়া নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন পাঠ্যপুস্তক প্রকাশ করেছে সরকার। তা শিক্ষার্থীদের হাতেও পৌঁছে গেছে এ মাসের শুরুতে। নতুন বই হাতে পাওয়ার পর থেকে বিভিন্ন শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকে বিভিন্ন ভুল ও পরিবর্তন নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে নানা পর্যায়ে। এসব নিছকই ভুল, না উদ্দেশ্যমূলক, সে প্রশ্নও উঠেছে।

সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ বইয়ের একটি অংশে হুবহু অনুবাদ করে তুলে দেওয়ার যে অভিযোগ উঠেছে, তা সত্য বলে স্বীকার করে নিয়েছেন বইটি রচনা ও সম্পাদনায় যুক্ত থাকা অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও অধ্যাপক হাসিনা খান। নবম ও দশম শ্রেণির জন্য ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে প্রকাশিত তিন বিষয়ের পাঠ্যবইয়ে মোট নয়টি ভুল চিহ্নিত করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড। এজন্য দেওয়া হয়েছে সংশোধনী।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাঁশখালীতে অস্ত্রসহ রইশ্যা ডাকাত গ্রেপ্তার
পরবর্তী নিবন্ধমাকে ৫ টুকরো করা ছেলেসহ ৭ জনের ফাঁসি