সংঘাত নয় বাংলাদেশ শান্তিতে বিশ্বাসী : প্রধানমন্ত্রী

সরকার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য সমুদ্রকে নিরাপদ রাখতে কাজ করছে ইনানীতে চারদিনব্যাপী আন্তর্জাতিক নৌমহড়া উদ্বোধন

উখিয়া প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ৮ ডিসেম্বর, ২০২২ at ১০:১৯ পূর্বাহ্ণ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য সামুদ্রিক সম্পদ ও সামুদ্রিক বাণিজ্য রক্ষায় সমুদ্রে নিরাপদ ও সুরক্ষিত পরিবেশ নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের সরকার সামুদ্রিক সম্পদের অপার সম্ভাবনার কথা বিবেচনা করে সামুদ্রিক খাতের উন্নয়নে ব্যাপক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। কিন্তু সমৃদ্ধ অর্থনীতি কেবল তখনই সম্ভব, যখন আমরা সমুদ্রে একটি নিরাপদ এবং সুরক্ষিত পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারব। সে লক্ষে আমরা আমাদের সমুদ্র সম্পদ রক্ষায় পরিকল্পিত সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গুণগত উন্নয়নমূলক কর্মসূচির মাধ্যমে আমাদের নৌবাহিনীর আধুনিকায়ন করে যাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বুধবার সকালে ‘ফ্রেন্ডশিপ বিয়ন্ড দ্য হরাইজন’ শিরোনামে বাংলাদেশ নৌবাহিনী আয়োজিত কক্সবাজারের ইনানীতে বিচে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক ফ্লিট রিভিউ-২০২২-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন। এতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইতালি, সৌদি আরব, ভারত, চীন, কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, নেদারল্যান্ডস এবং স্বাগতিক বাংলাদেশসহ ২৮টি দেশের নৌবাহিনী ও মেরিটাইম সংস্থা অংশগ্রহণ করে। চার দিনব্যাপী আইএফআর শুরু হয়েছে। আগামী ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে এই আন্তর্জাতিক ফ্লিট রিভিউ। খবর বাসসের।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অবাধ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিশ্চিত করার জন্য নিরাপদ সমুদ্র অপরিহার্য কারণ, বর্তমানে বিশ্বের ৯০ শতাংশ বাণিজ্য সমুদ্রপথ দিয়ে হয়। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক ভৌগোলিক সীমানার মাধ্যমে আমাদের সকল দেশ বিভক্ত হলেও বন্ধুত্বের সেতু বন্ধনে সমুদ্র উপকূলীয় সকল দেশের সঙ্গে আমরা একই সূত্রে গাঁথা। ‘ফ্রেন্ডশিপ বিয়ন্ড দ্য হরাইজন’ এই উপজীব্যকে ধারণ করে বাংলাদেশ নৌবাহিনী আয়োজিত ‘আইএফআর-২০২২’ ইভেন্টটি আমাদের মধ্যে বন্ধুত্বের বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করতে সক্ষম হবে। যা সকল সামুদ্রিক দেশসমূহের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা বৃদ্ধিতে এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।

সরকার প্রধান বলেন, অবাধ বৈশ্বিক বাণিজ্যের স্বার্থেই সমুদ্রকে নিরাপদ রাখা আবশ্যক। সামুদ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং সমুদ্র সম্পদ আহরণ ও অনুসন্ধানের বিশাল সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে। সে লক্ষে এই কঙবাজারেই তার সরকার একটি সমুদ্র গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দিকনির্দেশনায় আমাদের পররাষ্ট্রনীতির মূল প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়েছে, ‘সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়’। জাতি হিসেবে আমরা সর্বদা বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি। সেই নীতি মেনেই আমরা সকলের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছি। বিশেষকরে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর থেকে আমরা এই নীতিমালাই মেনে চলি। তিনি বলেন, নিকট প্রতিবেশি এবং আঞ্চলিক সব দেশের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক বিদ্যমান। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা বিশ্বাস করি সংঘাত নয়, সমঝোতা এবং আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে যে কোন সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীকে শক্তিশালী করা হচ্ছে যুদ্ধ করার জন্য নয়, আমাদের লক্ষ্য শান্তি এবং সৌহার্দ্য স্থাপন করা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্ব রক্ষা করা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে কোনো যুদ্ধ যে মানব জাতির জন্য কি ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে ১৯৭১ সালে আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আমরা তা নিজেরা দেখেছি। বর্তমানে চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ মানব জাতির জন্য ভয়াবহতা ডেকে আনছে। কাজেই আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই। আমি আন্তর্জাতিক মহলের সকলের কাছে এই আহ্বানই জানিয়েছি, যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে। কোন সমস্যা থাকলে শান্তিপূর্ণ সমাধান করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং বৈচিত্র্যের দেশ বাংলাদেশ। কঙবাজার সমুদ্র সৈকত বিশ্বের সর্ববৃহৎ সোনালি বালুকাময় সৈকত। বাংলাদেশ বিপুল সম্ভাবনার দেশ। আমি আশা করি, আইএফআর ২০২২-তে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিগণ বাংলাদেশের সমুদ্র, সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলে অবকাঠামো উন্নয়নের অপার সম্ভাবনা, পর্যটন ইত্যাদি সর্ম্পকে সম্যক ধারণা পাবেন।

‘বাংলাদেশ পারে, এটাই আজকে প্রমাণিত সত্য’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ইন্টারন্যাশনাল ফ্লিট রিভিউ ২০২২’ এর মূল প্রতিপাদ্য ‘ফ্রেন্ডশিপ বিয়ন্ড দ্যা হরাইজন’ যেন প্রকৃত অর্থকে প্রতিফলিত করে এবং নীল সমুদ্রে আবদ্ধ জাতিগুলো পরস্পরের কল্যাণে কাজ করে- এ প্রত্যাশা করছি। আশা করি, আমাদের সামনের দিনগুলোতে এ ধরনের পেশাদার সহযোগিতামূলক কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ নৌবাহিনী এবং বিদেশি জাহাজের ক্রুদের বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ, সিল কমান্ডোদের মহাকাশ থেকে ফ্রি-ফল জাম্প, নানা কসরৎ এবং বহরের অপারেশনাল প্রদর্শনী প্রত্যক্ষ করেন। তিনি ‘বঙ্গবন্ধু ও নৌবাহিনীর ৫০ বছরে যাত্রা’ শিরোনামের একটি প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন করেন। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী সমুদ্র সৈকতে নৌবাহিনীর একটি জেটি ও উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম শাহীন ইকবাল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর অগ্রযাত্রার ওপর আলোকপাত করে একটি অডিও-ভিজ্যুয়াল উপস্থাপনাও অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনতুন মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন কায়কাউস বিশ্ব ব্যাংকে
পরবর্তী নিবন্ধপশ্চিম কুয়াইশে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে টিন বিতরণ