সংক্রমণের ঝুঁকি উপেক্ষা করে মানুষ বাড়ি ফিরতে মরিয়া

| সোমবার , ১৯ জুলাই, ২০২১ at ৭:১০ পূর্বাহ্ণ

চলমান লকডাউন কিংবা বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ার পর দলে দলে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন মানুষ। পথে পথে সইতে হচ্ছে নানা ভোগান্তি আর ঝক্কি-ঝামেলা। তারপরও যেন বাড়ি ফেরার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে মানুষের মধ্যে। নানা দুর্ভোগ মাড়িয়ে, কষ্ট ডিঙিয়ে ভোগান্তি মাথায় রেখেই স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে বাড়ি যাচ্ছেন মানুষ। নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা এসব মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা নেই অনেকের। কেউ হয়তো স্বাস্থ্যবিধি মানছেন আবার কেউ মানছেন না। করোনাভাইরাসের কারণে সারাদেশে কঠোর বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ায় গত বৃহস্পতিবার থেকে দূরপাল্লার বাস চলাচল শুরু হয়েছে। এর ফলে মহাসড়কও আগের ব্যস্ত চেহারায় ফিরে গেছে। বলা যায়, সড়ক মহাসড়কে ঈদে ঘরে ফেরা মানুষের স্রোত বইছে। পথে পথে নানা প্রতিবন্ধকতা তাদেরকে আটকাতে পারছে না। করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি উপেক্ষা করে মানুষ বাড়ি ফিরতে মরিয়া। দূরপাল্লার বাস, লঞ্চ ও ট্রেন ছাড়াও মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার, সিএনজি অটোরিকশা, পিকআপ, মোটরসাইকেলসহ ছোট ছোট যানবাহনে চড়ে বাড়ি যাচ্ছেন তারা।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ঈদের আগে ঘরমুখো মানুষের চাপ বেশি থাকায় এবং যানজটের কারণে মহাসড়কে গাড়ি আটকা পড়ায় যাত্রীদের বাসের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে টার্মিনালে বা রাস্তায়। কমলাপুর রেল স্টেশনে ঘরমুখো মানুষের ভিড় দেখা গেছে। কমলাপুরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ট্রেন চলাচল করতে দেখা গেলেও স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই বাস কাউন্টারগুলোতে। যে যেভাবে পারছেন বাড়ি ফিরছেন। গাবতলীতে বাড়িফেরা মানুষের অধিকাংশের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা দেখা যায়নি। যাত্রীদের ভিড়ের কারণে সেখানে নেই শারীরিক দূরত্ব। দূরপাল্লার বাসে দুই সিটে একজন করে নেয়া হলেও ট্রাক, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাসে মানা হচ্ছে না এই দূরত্ব। এসব যানে গাদাগাদি করে রাজধানী ছাড়ছেন ঘরমুখো মানুষ। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও নানা ভোগান্তির কথা জেনেও কয়েকগুণ বাড়তি ভাড়ায় ছুটছেন নিজ নিজ গন্তব্যে। ফলে সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা হচ্ছে না কোথাও। একই চিত্র লঞ্চ ও ফেরিতে। গাবতলীতে গিয়ে দেখা যায়, লোকে লোকারণ্য পুরো টার্মিনাল। সেখানে কেউ ব্যাগ হাতে ছুটছেন বাসের টিকিট কাটতে আবার কারও মাথায় কিংবা পিঠে ব্যাগ ঝুলছে। কেউ কেউ শিশুসন্তানকে কোলে নিয়ে ভিড় করছেন সেখানে। বাস কাউন্টারগুলোর সামনে অন্যান্য সময় পরিবহন শ্রমিকরা ডাকাডাকি করলেও ঈদের সময় তেমনটি হচ্ছে না। যাত্রীরা ব্যাগ নিয়ে টিকিটের আশায় এক কাউন্টার থেকে অন্য কাউন্টারে ছুটছেন। কিন্তু পাচ্ছেন না কাঙ্ক্ষিত টিকিট। আবার যারা টিকিট কেটেছেন তাদের বাসের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে দীর্ঘ সময়। মহাসড়কে যানজটের কারণে বাস আসতে দেরি করায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তারপরেও ভোগান্তি মাথায় নিয়েই ঢাকা ছাড়ছেন মানুষ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘যাত্রীরা সচেতন না হলে স্বাস্থ্যবিধি মানা অনেক কঠিন। নিজেদের সুস্থ রাখার জন্য নিজেদেরই ভাবতে হবে আগে। তারপরও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমরা মাস্ক পরা বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি।’ বাস বা অন্যান্য যানবাহনে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগে প্রকাশ, ভাড়াও নেয়া হচ্ছে বেশি আবার স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন করা হচ্ছে।
কোরবানির ঈদের পর কঠোর লকডাউন আসছে শুনে অনেকে শহর ছাড়ছে বলে জানা গেছে। উল্লেখ্য, করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঝুঁকি কমাতে আসন্ন কোরবানির ঈদের পর বিধিনিষেধ আরও কঠোর হবে বলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানিয়েছেন।এই সময় শিল্প কলকারখানাও বন্ধ রাখা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সকলকেই মাস্ক পরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। গ্রামাঞ্চলে মানুষদের মাস্ক পরার ব্যাপারে অনীহা আছে। সেদিকেও আমাদের নজর থাকবে। বিধিনিষেধ কঠোর করে করোনা মোকাবেলা করা হবে।’ চলাফেরার ওপর বিধিনিষেধ শিথিল করলেও স্বাস্থ্যবিধির ওপর কোনো শিথিলতা নেই উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে; মাস্ক পরতে হবে। সকলকেই করোনা মোকাবেলায় অংশ নিতে হবে। কন্ট্রোল যত বেশি করতে পারব তত আমাদের জন্য ভালো।’ আসলে এই নিয়ন্ত্রণ নির্ভর করবে জনসাধারণের ওপর।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে