ষষ্ঠ-সপ্তমের পাঠ্যবইয়ে কী সংশোধন আসছে

আরও তিনটি বইয়ের কিছু অধ্যায় সংশোধন

| রবিবার , ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৬:২৩ পূর্বাহ্ণ

পাঠ্যপুস্তকের ভুলভ্রান্তি নিয়ে আলোচনার মধ্যে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির দুটি বই প্রত্যাহার ছাড়াও আরও তিনটি বইয়ের কিছু অধ্যায় সংশোধনের কথা জানিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডএনসিটিবি। বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে বইগুলো সংশোধন করে দেখবে প্রতিষ্ঠানটি। এক্ষেত্রে সংশোধনী বেশি হলে গোটা বই পাল্টে দেওয়ার কথা বলছেন সংস্থার চেয়ারম্যান মো. ফরহাদুল ইসলাম।

তিনি বলেন, আমরা সিদ্ধান্তটি গতকালই আমাদের সব উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছি। তারা নতুন এই সিদ্ধান্তের ব্যাপারে ওয়াকিবহাল আছেন। দুটি বই তো প্রত্যাহার হচ্ছে। আর যেসব বই সংশোধন হবে, সেগুলোর ব্যাপারে আমরা বিশেষজ্ঞদের মতামত নিচ্ছি। পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে এনসিটিবির চেয়ারম্যান বলেন, তাদের (বিশেষজ্ঞ) মতামত অনুযায়ী বইগুলো সংশোধন হলে আমরা দেখবো এর আকার কেমন হচ্ছে। সংশোধনী খুব ছোট হলে আমরা তা স্কুলে স্কুলে পাঠিয়ে দেব। আর বেশি সংশোধনী আসলে আমরা পুরো বই পাল্টে দেব। এই সংশোধন প্রক্রিয়ায় কত সময় লাগতে পারেএমন প্রশ্নে তিনি বলেন, লেটস সি। বিশেষজ্ঞরা দেখবেন। আশা করছি দ্রুতই হবে।

অনুসন্ধানী পাঠ পড়ানো হবে না : শুক্রবার এনসিটিবির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির জন্য প্রণীত ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ পাঠ্যপুস্তক দুটি পাঠদান হতে প্রত্যাহারের কথা জানানো হয়। এই প্রত্যাহার আর সংশোধন কেন এবং কোন অধ্যায়গুলোতে সংশোধন আসতে পারে, তা জানতে চাওয়া হয়েছিল এনসিটিবি সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামানের কাছে। তিনি বলেন, নতুন কারিকুলামে সিঙে এবং সেভেনে ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের দুটি অংশ; একটি অনুশীলন বই, আরেকটি অনুসন্ধানী পাঠ। আমরা দুই শ্রেণির অনুসন্ধানী পাঠ অংশটি প্রত্যাহারের কথা বলেছি।

আগে এই বিষয়ের একটি বই থাকলেও এখন দুটি বই। অধ্যাপক মশিউজ্জামানের মতে, অনুসন্ধানী পাঠ বাদ দিলেও শিক্ষার্থীদের পড়ায় ব্যাঘাত ঘটবে না। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা মূলত যে বইটিকে তাদের মূল পাঠ্য হিসেবে পড়বে, সেটি হচ্ছে তার অনুশীলন বই, এই অংশে শুধু সংশোধন হবে, প্রত্যাহার নয়। উঠে যাচ্ছে শুধু অনুসন্ধানী পাঠ। এই বই মূলত শিক্ষার্থীরা অনুশীলন বইয়ে যা পড়বে, তার সাথে যেন নিজেদের চিন্তাকে মেলাতে পারে তার জন্য করা হয়েছিল। আমাদের সব শিক্ষার্থীর হাতে তো ইন্টারনেট নেই যে তারা খুঁজে দেখে নেবে। সবাই যেন পড়ার পাশাপাশি বাস্তবতা নিয়ে জানতে পারে তার জন্য অনুসন্ধানী পাঠের বইটি করা হয়েছিল।

অনুসন্ধানী পাঠ প্রত্যাহারের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের অনুশীলন বইয়ে আমরা নানা বিশ্বের নানা সভ্যতার ইতিহাস তুলে ধরেছি। এসব ইতিহাসকে প্রদর্শন করতে গিয়ে অনুসন্ধানী পাঠে মিশরীয় সভ্যতা, সুমেরীয় সভ্যতা ও মেসোপটেমিয়া সভ্যতাগুলো এসেছে, প্রাচীন দেবদেবী নিয়ে কথা এসেছে, তাদের সংস্কৃতির নানা ছবি ব্যবহার হয়েছে। পরে দেখা গেছে এসব নিয়ে কথা হচ্ছে বেশি, আপত্তি এসেছে তাই আমরা দুই শ্রেণিতে বই দুটি প্রত্যাহার করেছি।

প্রত্যাহারের ফলে অনুসন্ধানী পাঠ বইটি পড়ার সুযোগ না থাকলেও অনুশীলনী পাঠ থেকে শিক্ষার্থীরা পড়তে পারবে জানিয়ে মশিউজ্জামান বলেন, এবার বইগুলো অ্যাকটিভিটি বেইজড। আমাদের পাঠ্যবইয়ে যে কন্টেন্ট আছে, তা কিন্তু সব নয়। এর বাইরেও পড়ার সুযোগ শিক্ষার্থীদের আছে। ফলে দুটি বই স্থগিত করলেও শিক্ষার্থীদের পড়ার ক্ষেত্রে কোনো বিঘ্ন ঘটবে না।

অনুশীলনে সংশোধন : এনসিটিবির বিজ্ঞপ্তিতে ওই দুই শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুশীলন বই’য়ের কয়েকটি অধ্যায়ের প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হবে বলে জানানো হয়েছিল। অনুশীলন পাঠের সংশোধন প্রসঙ্গে অধ্যাপক মশিউজ্জামান বলেন, ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজি ভারতবর্ষ দখল করেছেন নাকি বিজয় করেছেন এমন কিছু বিষয় নিয়েও আলোচনা আছে। প্রাচীন দেবদেবী নিয়ে, প্রাচীন ইতিহাস নিয়ে বেশি কথা বলা হচ্ছে, আমাদের ইতিহাসটা কম। আমরা এগুলো নিয়ে, বইগুলো যারা তৈরি করেছেন, বিশেষজ্ঞ যারা আছেন, তাদের সাথে বসব; বসে প্রয়োজনীয় সংশোধন করে সেগুলো শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দেব। সংশ্লিষ্ট অধ্যায়গুলোর সংশোধন না আসা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের অন্য অধ্যায়গুলো পড়ানো চলবে বলে জানান তিনি।

তবে কী ধরনের কথা বা আলোচনার ‘চাপে’ বই প্রত্যাহার ও সংশোধনের সিদ্ধান্ত জানতে চাইলে অধ্যাপক মশিউজ্জামান বলেন, আনুষ্ঠানিক কোনো পর্যায় না, বইগুলো নিয়ে সারা দেশে সামগ্রিক যে আলোচনা চলছে, তারই পরিপ্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত। বিভিন্ন ছবি ও দেশব্যাপী সমালোচনার মুখে বই প্রত্যাহারের এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই দুই বই নিয়েই বেশি সমালোচনা ও আপত্তি উঠেছিল।

পরীক্ষা ও মুখস্ত নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসতে এ বছর থেকেই নতুন শিক্ষাক্রমে যাওয়ার কথা বলছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু নতুন বছরে সারা দেশে শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে দেওয়ার পরই বইয়ের পাঠ্য বিষয় নিয়ে চলছে নানা আলোচনা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঝটিকা মিছিল থেকে জামায়াতের ছয় নেতাকর্মী আটক
পরবর্তী নিবন্ধবিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তদন্ত কমিটি