শ্রীলঙ্কায় মোবাইলের আলোতে চলছে অস্ত্রোপচার

জরুরি ওষুধও ফুরিয়ে আসছে, ভেঙে পড়ার দশা স্বাস্থ্য ব্যবস্থার

| মঙ্গলবার , ১৯ এপ্রিল, ২০২২ at ১০:২৭ পূর্বাহ্ণ

ছোট্ট একটি কক্ষে উজ্জ্বল লাল রঙের একটি গাড়ি নিয়ে খেলছে তিন বছরের মিরু। তাকে ঘিরে তার পরিবার যে সংকটে পড়েছে সে সম্পর্কে বোঝার বয়স এখনও তার হয়নি। অর্থনৈতিক দুর্দশায় জর্জরিত শ্রীলঙ্কার নাগরিকরা খাবার, ওষুধ ও বিদ্যুতের চরম সংকটে পড়েছেন। যার বিরুদ্ধে সড়কে নেমে প্রতিবাদ করছেন তারা। দেশটির হাসপাতালগুলোতেও এখন করুণ অবস্থা বিরাজ করছে। খবর বিডিনিউজের।

ছোট্ট মিরু ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত। প্রায়ই মৃগীরোগীদের মত তার খিঁচুনি হয় এবং কয়েক মিনিটের জন্য সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। ওই সময় তার খিঁচুনি রোধ করে (অ্যান্টি-কনভালসেন্ট) এমন একটি ওষুধের প্রয়োজন হয়। মিরুর বাবা উপুল চন্দনার জন্য এখন একমাত্র ছেলের জীবন রক্ষা করতে ওই ওষুধ জোগাড় করা প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছে।

শ্রীলঙ্কায় বর্তমানে যে চরম অর্থনৈতিক সংকট চলছে, তার বড় ধাক্কা লেগেছে দেশটির ওষুধ খাতে। বৈদেশিক মুদ্রার তীব্র সংকট দেখা দেওয়ায় দেশটি বিদেশ থেকে ওষুধ আমদানি করতে পারছে না। সিএনএনকে উপুল বলেন, কোনও হাসপাতালে ওষুধ নেই, ফার্মাসিতেও পাওয়া যাচ্ছে না। টাকা দিয়েও এখন আর ওই ওষুধ জোগাড় করতে পারছি না।

কয়েক দশকের মধ্যে তীব্রতম অর্থনৈতিক মন্দায় ভুগছে শ্রীলঙ্কা। দেশটিতে বৈদেশিক মদ্রার রিজার্ভ প্রায় নেই বললেই চলে। ফলে তারা বিদেশ থেকে প্রয়োজনীয় পণ্য বা ওষুধ আমদানি করতে পারছে না। এদিকে, কাঁধে বিশাল অংকের ঋণের বোঝা, যার জন্য মোটা অংকের সুদ দিতে হবে।

দেশের ভেতরে মূল্যস্ফীতিও এখন চরমে পৌঁছেছে। নিত্যপণ্যের দাম দেশটির বেশিভাগ মানুষের হাতের নাগালের বাইরে। এজন্য সরকারের অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করে জনগণ প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসের পদত্যাগের দাবিতে রাস্তায় নেমেছেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট পদত্যাগের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন। তারা আপাতত বিদেশ থেকে আনা ঋণের সুদ দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে এবং বেইলআউট প্যাকেজের বিষয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ)-এর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।

শ্রীলঙ্কায় হাসপাতালগুলোতে ওষুধ এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম প্রায় ফুরিয়ে এসেছে। সবচেয়ে খারাপ বিষয় হল, এসব রসদ কবে নাগাদ পাওয়া যাবে, তাও জানেন না শ্রীলঙ্কার চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, শিগগির যদি আন্তর্জাতিক সাহায্য না মেলে, নিদারুণ এক স্বাস্থ্য বিপর্যয়ের মুখোমখি হতে হবে তাদের দেশের মানুষকে।
দেশটির এখন যে অবস্থা সেটাকে ‘নজিরবিহীন মানবিক সংকট’ বলে বর্ণনা করেছে সিঙ্গাপুর রেড ক্রস। চিকিৎসকরা চিকিৎসা যন্ত্রপাতি ধুয়ে পুনরায় ব্যবহার করছেন। এমনকি, মোবাইল ফোনের লাইট জ্বেলে অস্ত্রোপচার করা হচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ১৩ প্রতিষ্ঠানকে ৬৭ হাজার টাকা জরিমানা
পরবর্তী নিবন্ধরাস্তা নির্মাণের নামে কাটা হচ্ছে বিশাল পাহাড়