শেষের আবহে নতুন করে প্রাণ

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ১২ মার্চ, ২০২২ at ৫:৫৭ পূর্বাহ্ণ

শেষের আবহে যেন নতুন করে প্রাণ পেয়েছে বইমেলা। পাঠকের ভিড়ে ‘ঠাঁই’ নাই অবস্থা হয়েছে মেলাপ্রাঙ্গণ। একে তো ছুটির দিন। তার ওপর মেলা শেষের পথে। তাই সবার আগ্রহের কেন্দ্রে ছিল মেলা। ছোট-বড় সকলে ছুটে আসেন মেলায়। প্রায় সবার হাতে ছিল নতুন কেনা বই। বিক্রি হওয়ায় খুশি প্রকাশক। তৃপ্ত হন লেখকও।
নগরের এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেশিয়াম মাঠে বইমেলা শুরু হয় গত ২০ ফেব্রুয়ারি। ২১ দিনব্যাপী মেলা শেষ হবে আজ শনিবার। শেষ দিনেও পাঠকের ভিড় বাড়বে, প্রত্যাশা লেখক-প্রকাশকসহ সংশ্লিষ্টদের। আজ মেলা শুরু হবে সকাল ৯টায়। মেলা চলবে রাত ১০টা পর্যন্ত।
মেলার আয়োজক চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। তবে চট্টগ্রামের সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদ, সাহিত্যিক, লেখক, বুদ্ধিজীবী এবং অন্যান্য শিল্প-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতরাই সম্মিলিতভাবে এ মেলা বাস্তবায়ন করেন। মেলায় ৯৫ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের ১২০টি স্টল রয়েছে।
গতকাল শুক্রবার মেলা ঘুরে দেখা গেছে, এবার প্রকাশিত নতুন বইয়ের প্রতি আগ্রহ বেশি ছিল পাঠকের। একইসঙ্গে খ্যাতিমান লেখকদের ইতোপূর্বে প্রকাশিত বইও কিনেছেন সবাই। বিশেষ করে বাংলা সাহিত্য ও বিশ্ব সাহিত্যের কালজয়ী কিছু গ্রন্থের বিক্রি হয়েছে। মেলায় প্রকাশকদের ছাড় দেয়ার সুবিধা গ্রহণ করতেই পুরনো বই কিনেছেন বলে জানান সবাই। গতকাল অবিভাবকদের সঙ্গে আসা শিশু-কিশোরের উপস্থিতি বেশি দেখা গেছে। তাদের বায়না পূরণ করতে বই কিনে দিয়েছেন মা-বাবা। সাদিয়া নামে তৃতীয় শ্রেণীর এক শিক্ষার্থী বলেন, আমি ভূতের ও রাক্ষসের বই কিনেছি। ভূতের বই আমার ভীষণ ভালো লাগে। তার মা ফেরদৌসী বেগম বলেন, মেয়ের চাহিদা অনুযায়ী বই কিনে দেয়ার মূল কারণ হচ্ছে পাঠভ্যাস তৈরি করা। ফাঁকে ফাঁকে তাকে নৈতিক শিক্ষার বইও পড়তে দিই।
এদিকে এবার বিকিকিনি গত দুই বারের চেয়ে কম হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকাশকগণ। প্রথমরা শিহাব জিশান বলেন, প্রথমবারের মত সাড়া পাইনি। বাঙালি প্রকাশনা আফাজ উদ্দিন বলেন, প্রত্যাশা অনুযায়ী বিক্রি হচ্ছে না। স্বাধীন প্রকাশনের হৃদয় হাসান বাবু বলেন, গতবারের হিসাব করলে কম। যদি কোভিড পরিস্থিতির জন্য সৃষ্টি অনিশ্চয়তা থেকে বলি তাহলে বলবো ঠিক আছে।

এদিকে গতকাল পাঠকের আগ্রহে থাকা বইগুলোর মধ্যে ছিল ময়ুখ চৌধুরী ‘পঞ্চবটী বনে’, হাফিজ রশিদ খানের ‘নির্বাচিত কবিতা আদিবাসী পর্ব’, ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জুর ‘নির্বাচিত কলাম’, নাজিমুদ্দীন শ্যামলের ‘তোমাদের শহর ছেড়ে এলাম’, শাহিদ হাসানের ‘পিতা বনাম পুত্র’, অরুপ পালিতের ‘শ্যামা মেয়ের জলছবি’, তাপস চক্রবর্তীর ‘শেষ পথের রেখা’, জাহেদ মোতালেবের তিনটি গ্রন্থ যথাক্রমে ‘গুপ্তধন’, ‘মারিয়া পালমা’ ও ‘চালতা পোড়া গদ্য’, মোহাম্মদ শেখ সাদীর ‘লোকগান ও লোকায়ত দর্শন’, পারভীন আকতারের ‘বসন্ত পক্ষপঞ্জর’, জাকির তালুকদারের ‘কল্পনা চাকমা ও রাজার সেপাই’, ফারজোনা রহমান শিমুর অনুবাদ গ্রন্থ ‘দ্য ফোর-আওয়ার ওয়ার্ক উইক’, অঞ্জন নন্দীর ‘সেইসব দিন’, অরুণ শীলের ‘বাঘটা ছিল ছড়ার মতো’, ইশরাত জাহান পান্নার ‘কুমড়ো ফুলের দিনে’, রাসু বড়ুয়ার ‘স্বপ্নভরা ছন্দছড়া’।
জাহেদ মোতালেব এর গল্পগ্রন্থ ‘মারিয়া পালমা’ নিয়ে পাঠকের প্রচুর আগ্রহ দেখা গেছে। এ গ্রন্থের নয়টি গল্পে দেখা মিলবে অন্য এক চট্টগ্রামের ছবি। ফ্ল্যাপে লেখা হয়েছে, চট্টগ্রাম শহরের কোনো অলিগলি, সড়কে আজও কি হেঁটে বেড়ায় নীল চোখের কোনো পর্তুগীজ নারী? রেঙ্গুন থেকে বিতাড়িত লোকেরা কেন সে দেশে ফেলে আসা দিনগুলোর ভাবনায় বিভোর থাকে সব সময়? কেন কারও আত্মায় হঠাৎ বেড়ে উঠতে থাকে একটি নিমগাছ? এ শহরে অনেক শতাব্দী ধরে ভেসে বেড়ানো গল্পে কান পেতে এসব প্রশ্নের উত্তর পেতে চেয়েছেন কথাশিল্পী জাহেদ মোতালেব। স্বপ্ন কল্পনার মাঝখানে যে ধূসর ভূখণ্ড আছে এ বইয়ের গল্পগুলো পড়তে পাঠকের সেখানে পরিভ্রমণের সুযোগ মিলবে।
ময়ুখ চৌধুরীর ‘পঞ্চবটী বনে’ মূলত পাঁচটি কাব্যগ্রন্থ সংকলন। এগুলো হচ্ছে ‘পলাতক পেণ্ডুলাম’, ‘ক্যাঙ্গারুর বুকপকেট’, ‘পিরামিড সংসার’, ‘জারুলতলার কাব্য’ এবং ‘চরণেরা হেঁটে যাচ্ছে মুণ্ডুহীন’।
হাফিজ রশিদ খানের ‘নির্বাচিত কবিতা আদিবাসী পর্ব’ও সাড়া ফেলেছে। কবি বলেন, কাব্যচর্চার প্রথম দিকে অর্থাৎ গত শতকের আশির দশকের শুরুতে শুধু দেখাশোনা আর জানা-বোঝার কৌতূহল থেকে কিছু কবিতায় পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জীবনধারার অনুষঙ্গ মাঝে-মাঝে ঝিলিক দিলেও নব্বই দশকে এসে বিষয়টি আমার কবিতার অন্যতম অনিবার্য ঘটনা হয়ে ওঠে। এভাবে শুধু আদিবাসী কেন্দ্রীক প্রকাশিত ৭টি কাব্যগ্রন্থ থেকে নির্বাচিত এই কবিতা সংকলন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়তে চলচ্চিত্রের ভূমিকা অনবদ্য : তথ্যমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধবাঘাইছড়ির দুর্গম সাত গ্রামে বিদ্যুতের আলো