লিটলম্যাগ কর্মী ও তুখোড় কবি সুনীল শৈশব সম্পাদিত সাহিত্যের ছোট কাগজ ‘স্বনন’। সম্প্রতি স্বনন তার ষষ্ঠ সংখ্যা তথা সাহিত্য উৎসব সংখ্যা–২০২৩ প্রকাশ করেছে। বলা চলে, মৌলভীবাজার এর মতো একটি মফস্বল শহরে স্বনন নিয়মিতই তার পাঠকদের দ্বারে সপ্রতীপ সাহিত্যমান নিয়ে শিল্প– সাহিত্যের এ ছোট কাগজ নিয়ে হাজির হচ্ছে তা বিস্ময়ই বটে! কেন না, সোশ্যাল মিডিয়ার এ যুগে মুদ্রিত সাহিত্যপত্রের মূল্যমান দিনকে দিন পাঠকদের কাছ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বা উবে যাচ্ছে।
লিটলম্যাগের শুরুতেই তাঁর সম্পাদকীয়তে উল্লেখ করা হয়েছে এভাব্ল্ল্লে– ‘সাহিত্যের প্রকাশ পদ্ধতি দ্রুতগতিতে পরিবর্তিত হয়েছে। লেখক ও পাঠকদের মধ্যে পূর্বের নিবিড়তম যোগাযোগ অনেকটাই হালকা হয়ে গেছে। এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি কবিতা বা গল্প পোস্ট করলে তাতে শতশত লাইক হচ্ছে, প্রশংসাসূচক মন্তব্য করা হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় সাহিত্যের বাজার এখন রমরমা। সাহিত্য কি তবে ক্ষণিকের সংসারে পরিণত হতে যাচ্ছে? নাকি শিল্প–সাহিত্যের জাগরণের এ এক নতুন দুয়ার’। ‘এই বিষয়টি কি আমাদের ভাবনায় ফেলে? এতে করে কি একজন কবি–সাহিত্যিককে প্রকৃত পাঠকের সামনে উপস্থাপন করা সম্ভব? সমকালীন বাঙলা সাহিত্য নিয়ে আলোচনা–সমালোচনা কতটুকুইবা আজ হয়? সেই পরিবেশ কি আছে? এখন সকলেই কবি–সাহিত্যিক। সাহিত্যের প্রতি গভীর প্রেম কতটা আজ দৃশ্যমান’। ‘আমরা এমন একটা সময় অতিবাহিত করছি যখন অধিকাংশ লেখক সমালোচনার সামনে দাঁড়াবার সাহস হারিয়েছেন; আর সমালোচক ব্যক্তিগত সম্পর্ক ও লাভ–লোকসানের কাছে জিম্মি হয়েছেন। সবকিছুর বাইরে কিছু লেখক এখনও শির উচুঁ করে দাঁড়িয়ে আছেন–
তাঁরাই আমাদের বাতিঘর। আমরা মনে করি, শুধু লেখা প্রকাশ করলেই লিটলম্যাগের কাজ শেষ হয়ে যায় না, সেই লেখা কতটা প্রায়োগিক এবং একজন লেখক কতটা লিটলম্যাগকে ধারণ করেন সেই বিষয়টি নিয়ে ভাবনাও জরুরি’। ‘আমরা মুখোশে ঢাকা সময়–পরিক্রমায় দাঁড়িয়ে সাহিত্য ও সাহিত্যিককে চেনানোর সেই চেষ্টাই করছি মাত্র’।
লিটলম্যাগ স্বনন এর এ সাহিত্য উৎসব–২০২৩ সংখ্যায় যারা যা লিখেছেন তা হলো: মুক্ত গদ্য পর্বে কাজী মহম্মদ আশরাফ এর ‘ম্যাজিক, ম্যাজিকমশারি ও সেলিম মোরশেদের গল্প’, বঙ্গ রাখাল এর লুৎফর রহমানের কথাসাহিত্য: সমাজ বাস্তবতার গভীর বীক্ষণ, সালাহ উদ্দিন মাহমুদ এর ‘সাম্প্রতিক ছোটগল্পের গতি–প্রকৃতি’, সুদেব চক্রবর্তীর রবীন্দ্রনাথ: উপেক্ষিত কিংবা কুক্ষিগত ইত্যাদি। আর কবিতা পর্বে রয়েছে অঞ্জন ভৌমিক এর ‘হে মৃত্যু’, আসাদ মান্নান এর ‘কৃষ্ণচূড়া’, ‘কমল হাসান এর ‘ভগবানের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে’, কুশল ভৌমিক এর ‘অংহকার’, জাবেদ ভূঁইয়ার ‘জল তো থামে না গড়ায়’, ভানু পুরকায়স্থ এর ‘সসাগরা পৃথিবীর সমূহ বৈভব’, মহিদুর রহমান এর ‘ওড়ো চুমো অতঃপর’, রাজ্জাক দুলাল এর ‘রং রেখা’, শিবলী মোকতাদির এর ‘অভিষেক’, সুতপা রায় এর ‘বিচ্ছেদ’, সুনীল শৈশব এর ‘ফুলেশ্বরী’, সুমণ বনিক এর ‘মাতাল সময়ের কড়চা’ ইত্যাদি কবিতা। আর গল্প পর্বে যারা যা লিখেছেন তা হলো: আকমল হোসেন নিপুর ‘দেয়ালে আঁকা ছবি’, নাহিদা আশরাফী’র ‘হলুদ পাঞ্জাবি’, আতাউর রহমান মিলাদ এর ‘ বিষণ্ন কোরাস’, সৈয়দ মোহিবুল আমিন এর ‘মননের মহাযুদ্ধ’, শুভাশিস সিনহার ‘ডাকাতিয়া বাঁশি’, আনিফ রুবেদ এর ‘হত্যাখানা’, মনি হায়দার এর ‘আহির আলমের বাম পা’ ও শেখ লুৎফর এর ‘রঘুনাথ’ প্রভৃতি।
শিল্প–সংস্কৃতি আর সাহিত্যের প্রতি নৈতিকদায়বোধ থেকেই শত প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে স্বগৌরবে নিয়মিতই প্রকাশিত হচ্ছে এ লিটল ম্যাগাজিনটি।