শিশু যখন সহিংসতার শিকার

ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী | বৃহস্পতিবার , ৩ জুন, ২০২১ at ১০:৩৩ পূর্বাহ্ণ

অবুঝ শিশু নানাভাবে ভায়োলেন্স এর কবলে পড়তে পারে। সরাসরি নিজে মার-দাঙ্গায় জড়িয়ে, অথবা প্রত্যক্ষভাবে মারামারি খুন হানাহানি দেখে, কিংবা মিডিয়াতে আসা পৃথিবীব্যাপী এইরকম সহিংস দৃশ্য অবলোকন করে। তথ্যে দেখা যায়, ঘরে থেকেও ৮০-৯৫ শতাংশ ভায়োলেন্স এভাবে শিশুর গোচরে আসে।
খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে শিশু বিদ্যালয়ে মারামারিতে লিপ্ত হতে পারে। দেখা যায়, নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ুয়াদের মধ্যে অনেকে এই কারণে হুমকি বা ইনজুরি পরিস্থিতির শিকার হয়। এমন কী এইসব ঘটনার রেশ ধরে আত্মহননের মতো অত্যন্ত বেদনাদায়ক ঘটনাও ঘটে।
শিশুবয়সে ভায়োলেন্স এর পরিণতি-
১. শিশুবয়স সুস্থ বিকাশ ও বৃদ্ধির বয়স। এই বয়সে শিশু সহিংসতার শিকার হলে বা এইসব দৃশ্য অবলোকন করলে তা তার স্বাভাবিক গ্রোথের পথ রুদ্ধ করে। সে আচরণে ও মানসিকভাবে নানা ধরনের বিপর্যস্থতায় পড়ে। সে ধারণা করে নেই, এই পৃথিবী ও তার চারপাশ তার জন্য মোটেও নিরাপদ নই।
২. সবসময় একটা আতংক, ভীতি, অসহায়ত্ব তাকে দৈত্যের মতো চেপে ধরে। বিশেষ করে প্রি-স্কুল বয়সী শিশুতে এটা পরিলক্ষিত হয় ।
৩. উচ্চ শ্রেণিতে পড়া যেসকল শিশু বারে বারে সহিংস পরিস্থিতির সন্মুখীন হয়, তারা স্কুলে খারাপ ফল করে, দুশ্চিন্তা ও হতাশা তাদের গ্রাস করে বেশি এবং তাদের আত্মবিশ্বাস তলানিতে গিয়ে ঠেকে।
৪. ভায়োলেন্সের শিকার শিশু তার ভবিষ্যৎ চিন্তা করে হতাশায় পড়ে। সে মনে করে অল্প বয়সে সে যে-কোনদিন মারা যাবে। এবং এই কারণে সে আরঝুঁকিসম্পন্ন কাজে অংশগ্রহণ করে। মদ্যপান, মাদকাসক্তি, ও বেপোরোয়া জীবনযাপনে অভ্যস্থ হয়ে ওঠে।
৫. মারাত্নক বা দীর্ঘমেয়াদী সহিংসতার শিকার হলে শিশু ভীতি, দুশ্চিন্তা, নিদ্রাহীনতা, উগ্র মেজাজ এবং নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক উপসর্গাদি নিয়ে হাজির হয়।
ব্যবস্থাপনা-
১. শিশু যদি এইরূপ পরিস্থিতির শিকার হয়, তবে মা-বাবা অভিভাবক যেন সহানুভূতির সাথে পুরো বিষয় নিয়ে সন্তানের সাথে খোলামেলা আলোচনা করে নেন, এতে কতটা ঝুঁকি আছে তা আগেভাগে যাচাই করেন, এবং সেইমতো ত্বরিৎ ব্যবস্থা অবলম্বন করেন।
২. এইসব শিশুকে প্রয়োজনে শিশু বিশেষজ্ঞ, মনোবিদ এর সাহায্য নিয়ে চিকিৎসা করাতে হয়। শিশু যদি নির্যাতন, যৌন হয়রানিতে পড়ে, তবে যথাযথ প্রতিবিধান গ্রহণ।
৩. সরকারি-বেসরকারি, সামাজিক সকল মিডিয়াকে যে কোনো ভায়োলেন্স দৃশ্য প্রচারের পূর্বে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে, এবং ভায়োলেন্স বিরোধী ভূমিকার জোর আন্দোলন গড়ে তোলার কাজে সক্রিয় হতে হবে।
তবেই আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ শিশুদের জন্য “বরিষ ধরা মাঝে শান্তির বারি” নিয়ে এক নিরাপদ ও ভয়হীন আনন্দলোক পৃথিবী রেখে যেতে পারবো।
লেখক : সাবেক বিভাগীয় প্রধান, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ,
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসীমিত পরিসরে হলেও সংস্কৃতিতে প্রাণ ফিরিয়ে আনতে হবে
পরবর্তী নিবন্ধকাল আজকাল