শিশু নির্যাতন বন্ধে আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে

| বুধবার , ২ নভেম্বর, ২০২২ at ৭:২৬ পূর্বাহ্ণ

আমাদের দেশে প্রতিনিয়ত বাড়ছে শিশু নির্যাতন ও হত্যার ঘটনা। প্রতিদিন দেশের কোথাও-না কোথাও ঘটছে শিশুর প্রতি অমানবিক নিষ্ঠুর নৃশংসতা। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, আধিপত্য বিস্তার, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, সমপত্তির দ্বন্দ্বে খুন হচ্ছে এসব অবুঝ শিশু। সুপারি চুরির অপবাদে চকরিয়ায় ঘটলো তেমন একটি নির্যাতনের ঘটনা। শিশুকে গাছে বেঁধে মারধর করা হলো এবং করা হলো মাথা ন্যাড়া। গত ৩১ অক্টোবর দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, রাতের আঁধারে রাস্তা দিয়ে হেঁটে বাড়ি ফিরছিল ১০ বছরের শিশু শাহাদাত হোসেন। চলার পথে হাতে থাকা টর্চ লাইটের আলো গিয়ে পড়ে সড়কের ধারে থাকা একটি সুপারি গাছের নিচে। তখন শাহাদাত দেখতে পায় কয়েকটি পাকা সুপারি নিচে পড়ে রয়েছে। সেই সুপারি কুড়িয়ে নেওয়ার সময় শাহাদাতকে দেখে ফেলেন গাছের মালিক নাছির উদ্দিন। এই অবস্থায় শাহাদাতকে ধরে সুপারি চোর হিসেবে অপবাদ দিয়ে পাশের একটি গাছের সঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে মারধর করা হয়। এমনকি মাথাও ন্যাড়া করে দেওয়া হয়। পেটানো এবং মাথা ন্যাড়া করার সেই ভিডিও শনিবার রাত থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নিন্দার ঝড় ওঠে। অমানবিক এই ঘটনাটি ঘটেছে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বৃন্দাবনখিল গ্রামে। গত শনিবার রাত ৯টার দিকে এই ঘটনার খবর পেয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মেহরাজ উদ্দিন মিরাজ ঘটনাস্থলে ওয়ার্ডের সদস্য শফিউল আলমকে পাঠিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করেন। এর পর তাকে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ দুইজনকে আটক করেছে।

শিশুর নির্যাতন প্রতিরোধ-সম্পর্কিত বৈশ্বিক পরিস্থিতি প্রতিবেদন ২০২০ অনুসারে, প্রতিবছর বিশ্বের অর্ধেক শিশু (প্রায় ১০০ কোটি) শারীরিক, যৌন এবং মানসিক নির্যাতনের শিকার। এর ফলে তারা আহত তো হয়ই, কেউ কেউ প্রতিবন্ধী হয়ে যায়, কখনো কখনো শিশুদের মৃত্যুও ঘটে। প্রতিবেদনটিতে বাংলাদেশসহ ১৫৫টি দেশে শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ ও সাড়াদানের সাতটি কৌশলসংবলিত ‘ইন্সপায়ার’ -এর অগ্রগতি সম্পর্কে তথ্য আছে। এই প্রথম, দেশগুলোর সরকার শিশু নির্যাতন মোকাবিলার জন্য তাদের কাজের বিষয়ে নিজস্ব প্রতিবেদন তৈরি করেছে। কিছু পদ্ধতিগত সীমাবদ্ধতা থাকার পরও প্রতিবেদনটি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনের জন্য শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে দেশগুলোর অগ্রগতি সম্পর্কে ধারণা দেয় এবং এতে ভবিষ্যতের জন্য বেশ কিছু পরামর্শ আছে। নির্যাতন শিশু অধিকারের ভয়াবহ লঙ্ঘন, যা তাদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও বিকাশকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এর মারাত্মক অর্থনৈতিক প্রভাবও রয়েছে। একটি হিসাবে দেখা যায়, শিশু নির্যাতনের ফলে বিশ্বে জিডিপিতে প্রতিবছর এক ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের ক্ষতি হয়। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, প্রায় সব দেশেই (৮৮ শতাংশ) নির্যাতন থেকে শিশুদের রক্ষার জন্য আইন রয়েছে, তবে অর্ধেকের কম দেশগুলোতে (৪৭ শতাংশ) আইন যথাযথভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে। বাংলাদেশে অপরাধীদের খুব কমই বিচারের আওতায় আনা হয়; যার কারণে শিশু নির্যাতন ঘটেই চলেছে।
প্রতিবেদনে যেসব সুপারিশ রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের জন্য প্রয়োজন এমন বেশ কিছু সুপারিশ রয়েছে। তন্মধ্যে রয়েছে আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করা। শিশু নির্যাতন বন্ধে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে হবে।
আমাদের দেশে শিশু নির্যাতন বা শিশুদের উপর সহিংসতা বৃদ্ধির মূল কারণ শিশুরা প্রতিবাদ বা প্রতিরোধ করতে পারে না। ফলে প্রতিহিংসাসহ নানা বিকৃত আচরণের শিকার হয় আমাদের দেশের ভবিষ্যত কর্ণধার শিশুরা। আসলে শিশু নির্যাতন ও হত্যার ঘটনা আমাদের চরমভাবে উদ্বিগ্ন করে তুলছে। তাই আমাদের পারিবারিক বন্ধন নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে।
সমাজ বিজ্ঞানীদের অভিমত, আমাদের সমাজেই শিশুর প্রতি সহিংসতার নানা উপাদান রয়েছে। শিশুর প্রতি সহিংসতা রোধে দেশে কঠিন আইন আছে। কিন্তু কঠোর আইনই শুধু অপরাধ দমনে যথেষ্ট নয়। সমাজ যদি অপরাধ প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে না পারে তবে যতো কঠোর আইনই থাকুক না কেন শিশুর প্রতি সহিংসতার মতো বড় ধরনের সঙ্কট দূর করা অসম্ভব। শিশুর প্রতি সহিংসতা ও শিশু হত্যার মতো ঘটনা অমানবিক। এ থেকে উত্তরণের পথ বের করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে