শিবনারায়ণ রায় : দার্শনিক ও সাহিত্য সমালোচক

| রবিবার , ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৫:২৭ পূর্বাহ্ণ

শিবনারায়ণ রায় (১৯২১২০০৮)। বিংশ শতাব্দীর স্বনামধন্য বাঙালি চিন্তাবিদ, শিক্ষাবিদ, দার্শনিক, এবং সাহিত্য সমালোচক। তিনি ১৯২১ সালের ২০ জানুয়ারি কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। পিতৃনিবাস বরিশাল জেলার রায়েরকাঠি গ্রাম। পিতা উপেন্দ্রনাথ বিদ্যাভূষণ শাস্ত্রী ছিলেন নাট্যকার, লেখক, শিক্ষাবিদ। মাতা, রাজকুমারী দেবী। শিবনারায়ণ রায় প্রধানত ইংরেজি এবং দর্শন অধ্যয়ন করেন; তবে ইতিহাস, সমাজতত্ত্ব এবং শিল্পকলায়ও তাঁর অবদান রয়েছে। ১৯৪২ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম.এ পাশ করেন। কলকাতা সিটি কলেজে ইংরেজির অধ্যাপক হিসেবে তিনি তাঁর কর্মজীবন আরম্ভ করেন ১৯৪৫ সালে। ১৯৬৩ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত তিনি মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারতবিদ্যা বিভাগের প্রধান ছিলেন।

এ ছাড়া, তিনি অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ, শিকাগো এবং স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় সমেত ইউরোপ, অ্যামেরিকা এবং জাপানের বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং প্রফেসর ছিলেন। ১৯৮১ সালে অবসর নেওয়ার সময় তিনি ভারততত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। দেশে ফেরার পর তিনি বিশ্বভারতীর রবীন্দ্রভবনের অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পরে দীর্ঘদিন ‘রাজা রামমোহন রায় লাইব্রেরি ফাউন্ডেশনের’ চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। যুক্তিবাদ, বুদ্ধির মুক্তি ও মানবতাবাদের সপক্ষে তিনি সক্রিয় ছিলেন। বুদ্ধদেব বসু, অমিয় চক্রবর্তী সহ সমকালীন বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বল ব্যক্তিদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল।

তিনি বিশিষ্ট রসবেত্তা হয়ে ওঠেন রবীন্দ্রচর্চাতেও। তার সম্পাদিত ত্রৈমাসিক ‘জিজ্ঞাসা’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতাসম্পাদক ছিলেন। কলকাতার রাডিক্যাল হিউম্যানিস্ট সংস্থার প্রাণপুরুষ ছিলেন তিনি। শিবনারায়ণ নানা বিষয়ে পঞ্চাশটিরও বেশি গ্রন্থ প্রকাশ করেন। এসবের মধ্যে ছিল সাহিত্য, দর্শন, ইতিহাস এবং সমাজসংস্কৃতি। তিনি কয়েকটি কাব্যগ্রন্থও প্রকাশ করেছিলেন। তাঁর চিন্তাভাবনায় তিনটি প্রধান স্তম্ভ লক্ষ করা যায়। রেনেসাঁস, মানবতন্ত্র এবং নাস্তিক্য। সে সঙ্গে যুক্ত হয়েছ শিল্পসাহিত্য বিষয়ে তাঁর গভীর অধ্যয়ন ও স্বাতন্ত্র্যধর্মী চিন্তা যা ফুটে উঠেছে তাঁর বিভিন্ন গ্রন্থে, যেমনসাহিত্যচিন্তা (১৯৫৬), মৌমাছিতন্ত্র (১৯৬০), কবির নির্বাসন ও অন্যান্য ভাবনা (১৯৭৩), গণতন্ত্র সংস্কৃতি ও অবক্ষয় (১৯৮১), রবীন্দ্রনাথ শেক্সপীয়র ও নক্ষত্র সংকেত (১৯৮৩), স্রোতের বিরুদ্ধে (১৯৮৪), রেনেসাঁস (১৯৯২), স্বদেশ স্বকাল স্বজন (১৯৯৬)। তিনি ২০০৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই দিনে
পরবর্তী নিবন্ধপ্রি- পেইড মিটারের ভোগান্তি থেকে গ্রাহক মুক্তি চায়