শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শুদ্ধ, সভ্য ও সংযত ছাত্র রাজনীতির চর্চা হোক

ছাবেরা শারমিন | বুধবার , ৩১ আগস্ট, ২০২২ at ১১:৪১ পূর্বাহ্ণ

আবরার ফাহাদ আজ তোমাকে খুব মনে পড়ছে। তুমি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ব বিদ্যালয়ের (বুয়েট) তড়িৎ কৌশল বিভাগের ২য় বর্ষের ছাত্র ছিলে। বুক ভরা আশা নিয়ে বুয়েটে ভর্তি হয়েছিলে তুমি। বুয়েটে পড়তে হলে কত কত খাটুনি, পরিশ্রম করতে হয় তা কেবল তোমার মতো যারা তারাই শুধু জানে। তুমি বাবা-মায়ের বড় সন্তান ছিলে। তোমাকে বুয়েটে ভর্তি করাতে পেরে সেদিন মা-বাবার মনে যে আনন্দের ফোয়ারা বয়েছিল তা কেবল বিধাতাই জানেন। পৃথিবীর সব বাবা-মা-ই চায় তাদের সন্তানরা বড় বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করে দেশ, জাতি, পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখবে এটাই তাদের প্রত্যাশা। আমাদের সন্তানরা একদিন বড় হয়ে নিজের মাতৃসম প্রিয় দেশকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত করে তুলবে এমন প্রত্যাশা আমরা সকলেই করি। আবরারের স্বপ্ন ছিল অনেক বড় ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। কিন্তু তোমাকে তা হতে দিল না ছাত্র নামধারী কিছু বিপথগামী ছাত্র, যারা তোমার মতো সবাই মেধাবী এবং বুয়েটের শিক্ষার্থী। রাজনীতির সুবিধা ভোগীদের ডাণ্ডার আঘাতে থেতলে যাওয়া আবরারের চিৎকার সেদিন কেউ শোনেনি। আবরার হত্যার প্রতিবাদে উত্তাল বুয়েট শিক্ষার্থীদের ১০ দফা দাবির মধ্যে প্রধান দাবি হচ্ছে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা। ১১ অক্টোবর ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বুয়েট কর্তৃপক্ষ। সমপ্রতি ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ইস্যুতে আবারো উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বুয়েট ক্যাম্পাস। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবি করে আসছেন সাধারণ শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের একটি অংশ। বর্তমানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যে রাজনীতির চর্চা চলছে তা কোনোভাবেই সুস্থ রাজনীতির চর্চা নয়। দলীয় লেজুড় বৃত্তি, পেশী শক্তির প্রদর্শন, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি ও কথিত নেতার হাতিয়ার হিসেবে নিজেদের ব্যবহারের অপর নামই বর্তমানের ছাত্র রাজনীতি। যা সমাজ ও দেশের জন্য কখনো কল্যাণ বয়ে আনে না। তাই ছাত্র রাজনীতির নামে অপরাজনীতি বন্ধ করতে হবে। আবরারের হত্যাকারীরা সবাই আজ মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী। তাদের পরিবারগুলো আজ নিঃস্ব। এদের নিয়ে বাবা-মায়ের অনেক স্বপ্ন ছিল। তাদের স্বপ্ন আজ যারা গুড়িয়ে দিয়েছে তারা আজ কোথায়? কষ্ট পাচ্ছে সেই কোমলমতি মেধাবী মুখগুলো। তাদের বাকী জীবনটাতো সমাজে হত্যার আসামী বা হত্যাকারী পরিচয় নিয়ে থাকতে হবে। দেশের সেরা মেধাবীদের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ হলো বুয়েট। এখানে শিক্ষকরা সিনিয়র স্কলার এবং ছাত্ররা জুনিয়র স্কলার হিসেবে জ্ঞান সৃষ্টি ও জ্ঞানের আদান প্রদান করবে। এরাই তো একদিন দেশের নেতৃত্বে আসবে। ২০২১ -২০২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা এখনো ক্লাশ শুরুর অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের চলার পথ নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন হোক। আমাদের চাওয়া আদর্শ ভিত্তিক শুদ্ধ, সভ্য ও সংযত ছাত্র রাজনীতি যা কল্যাণ বয়ে আনবে ছাত্রসহ সমগ্র জাতির।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবঙ্গবন্ধুর খুনিদের সমূলে উৎখাত প্রয়োজন
পরবর্তী নিবন্ধএই শোক চিরদিনের