শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উদ্বেগ নিয়ে সরকারের ভাবনা ইতিবাচক

| মঙ্গলবার , ৬ জুলাই, ২০২১ at ৫:০৫ পূর্বাহ্ণ

করোনার থাবায় পুরো দেশ বিপর্যস্ত। করোনার ছোবলে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা। টানা দেড় বছর ধরে বন্ধ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। চরম ক্ষতির শিকার প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যায়ের প্রায় সাড়ে চার কোটি শিক্ষার্থী ও ৫০ লাখ শিক্ষক। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতিও কম নয়। বেসরকারি শিক্ষকদের আয়ের ওপর পড়েছে করোনার ভয়াবহ নেতিবাচক প্রভাব। ব্যাপক শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, বেড়েছে বাল্যবিয়ে। শহুরে শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীরা ঘরে বন্দি হয়ে থাকতে থাকতে নানা মানসিক সংকটের মুখোমুখি। এসব নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকরাও। বলা বাহুল্য, শিক্ষার্থীদের চেয়েও অভিভাবকেরাই বেশি হতাশাগ্রস্ত। সন্তানেরা স্কুলে যেতে পারছে না। ঘরে বসে অলস দিন পার করছে। এ অবস্থা থেকে শিগগিরই পরিত্রাণ পাওয়া যাবে এমন আশা করার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না, যেহেতু সংক্রমণ বাড়ছে। মাঝেমধ্যে টানেলের শেষ প্রান্তে ক্ষীণ আলোর রেখা দেখা দিলেও পরক্ষণেই তা হতাশার অন্ধকারে মিলিয়ে যায়।
গত ৪ জুলাই দৈনিক আজাদীতে দুটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। একটির শিরোনাম : ‘স্কুল খুলে ছেলে মেয়েদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেব? প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর’ এবং অন্যটির শিরোনাম : ‘পরীক্ষা বাদে বিকল্প ভাবনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়’। এতে দেখা যায়, করোনাভাইরাস সংক্রমণ যখন বাড়ছে, তখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দাবি যারা তুলছেন, তাদের সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সম্ভাবনা নাকচ করে তিনি বলেছেন, টিকা দেওয়ার পরই খোলার চিন্তা করবে সরকার। গত শনিবার সংসদে বাজেট অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদেরও একই দাবি তোলার পর তার জবাব দেন সরকার প্রধান। শেখ হাসিনা বলেন, এখানে স্কুল-কলেজ খোলার ব্যাপারে কথা উঠেছে। কিন্তু যাদের ছোট ছোট ছেলেমেয়ে বা সন্তানরা স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটিতে যায়, সেই বাবা-মা কিন্তু চান না তাদের বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে। এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা মানেই শিশুদের ঝুঁকিতে ঠেলা দেওয়া মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমরা জেনে-শুনে লেখাপড়ার জন্য তাদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেব কিনা, সেটা একটু বিবেচনা করবেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা যেন বন্ধ না থাকে সেজন্য সংসদ টেলিভিশন, রেডিও ও অনলাইনের মাধ্যমেও পাঠদানের কথা বলেন তিনি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, টিকা দিয়ে পরেই আমরা কিন্তু সকল স্কুলগুলো খুলে দেব।
অন্য সংবাদে বলা হয়েছে, ‘করোনার কারণে দুইবার তারিখ দিয়েও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থেকে পিছু হটতে হয়েছে। এখন পরীক্ষা কীভাবে নেওয়া হবে তা নিয়ে চিন্তায় মন্ত্রণালয় ও শিক্ষাবোর্ডের কর্তা ব্যক্তিরা। আর পরীক্ষা নিয়ে চরম উদ্বেগে সময় কাটাচ্ছে শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলছেন, করোনার বর্তমান পরিস্থিতি কখন স্বাভাবিক হবে, কখন শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরানো যাবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই আপাতত পরীক্ষা বাদে বিকল্প পদ্ধতিতে মূল্যায়ন করার পথে এগুতে হচ্ছে। সেজন্য শিক্ষাবোর্ডসহ বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। তাদের সুপারিশ পেলেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা শিক্ষার্থীদের জানিয়ে দেওয়া হবে। এদিকে চলতি বছর হয়তো আর পরীক্ষা নেওয়া যাবে না, এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি’।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এ কে এম শাহনাওয়াজ শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন প্রদান বিষয়ে বলেছিলেন, এদেশের রাষ্ট্রীয় বিবেচনায় যদি শিক্ষাব্যবস্থা গুরুত্ব পেত, তাহলে শিক্ষার্থীদের বড় ক্ষতি থেকে রক্ষার কথা মাথায় রেখে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভ্যাকসিন দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় আসত। এ কথাগুলো আগে আগে ভ্যাকসিন পাওয়ার জন্য নয়, যুক্তির খাতিরেই বলছি। যদি শিক্ষার্থীদের জীবন নিয়ে ভাবা হতো, তাহলে শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক করার স্বার্থে ভ্যাকসিন পাওয়ার অগ্রাধিকার তালিকার শেষদিকেও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কথা ছিলো না কেন!
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনায় দেশের মাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষতি কিন্তু ভয়াবহ। গত বছর কোনো বার্ষিক পরীক্ষা ছাড়াই উপরের শ্রেণিতে উঠেছে মাধ্যমিক শিক্ষার্থীরা। ফলে গত বছরের ক্লাসের দক্ষতা ঘাটতি তাদের রয়েই গেছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে নতুন বছরে নতুন ক্লাসের পড়াশোনা। অথচ স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় আনুষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ নেই। সামর্থ্যবান অভিভাবকরা গৃহশিক্ষক দিয়ে পড়াচ্ছেন। তবে শিক্ষকের কাছে দিনে এক ঘণ্টা পড়ে বিদ্যালয়ের ৬-৭ ঘণ্টা ঘাটতি পূরণ হওয়ার নয়। অন্যদিকে করোনায় নিম্নবিত্ত ও দরিদ্র অসংখ্য অভিভাবকের আয়ে ধস নেমেছে।
গত বছর সব শ্রেণির শিক্ষার্থীদের যেভাবে উপরের শ্রেণিতে অটো প্রমোশন দেওয়া হয়, এবার সেভাবে হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের কর্মকর্তারা। এবার অ্যাসাইনমেন্ট নম্বরের ভিত্তিতে তাদের পরবর্তী শ্রেণিতে মূল্যায়ন করে উত্তীর্ণ করা হবে বলে জানা গেছে। এটা ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই। করোনায় শিক্ষার যে ক্ষতি, তা অপূরণীয়। পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। এ অবস্থা সামাল দেওয়া রীতিমত কষ্টসাধ্য।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে