শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকবে না

সাত দিন পর অনশন ভাঙলেন শাবি শিক্ষার্থীরা পাঁচ সাবেক শিক্ষার্থীর জামিন

আজাদী ডেস্ক | বৃহস্পতিবার , ২৭ জানুয়ারি, ২০২২ at ৮:০৬ পূর্বাহ্ণ

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সাত দিন পর তাদের অনশন ভেঙেছেন। গতকাল বুধবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী অধ্যাপক ইয়াসমিন হক পানি পান করিয়ে শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙান। আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে করা মামলাগুলো থাকবে না বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। এছাড়া শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে অর্থ জোগান দেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার সাবেক পাঁচ শিক্ষার্থীকে জামিন দিয়েছে সিলেটের একটি আদালত। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা অনশন ভাঙার পর সন্ধ্যায় শিক্ষামন্ত্রী সরকারি বাসভবনে জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডাকেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয় শিগগির খুলে দেওয়া, আন্দোলন ছাত্রদের একাডেমিক বিষয়ে কোনো প্রভাব ফেলবে না এবং মামলা তুলে নিতে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান সব সমস্যার সমাধানে কাজ করার কথা জানান তিনি। তবে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের বিষয়ে তিনি সরাসরি কিছু বলেননি। মামলা তুলে নেওয়ার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করার কথা জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সমস্যাই যখন থাকছে না, যারা এ মামলাগুলো করেছেন, তাদের সঙ্গে কথা বলেও যা কিছু করার আমরা করব। মামলা তুলে নেওয়ার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করব। শিক্ষার্থীদের যেন কোনো অসুবিধা না হয়, সেটি নিশ্চিত করব।

সাত দিন পর অনশন ভাঙলেন শিক্ষার্থীরা : উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সাত দিন পর তাদের অনশন ভেঙেছেন। গতকাল সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী অধ্যাপক ইয়াসমিন হক পানি পান করিয়ে শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙান। এর আগে ভোর ৪টার দিকে জাফর ইকবাল স্ত্রী ইয়াসমিন হককে সঙ্গে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যান এবং ভিসির বাংলোর সামনে রাস্তায় শামিয়ানা টাঙিয়ে অনশনে বসা আন্দোলনকারীদের মাঝে উপস্থিত হন।

প্রায় দুই ঘণ্টা তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের কথা শুনেন। জাফর ইকবাল শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙাতে রাজি করান। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলার পরে সাংবাদিকদের সামনে জাফর ইকবাল বলেন, তোমরা আমাকে কথা দিয়েছ, আজকে অনশন ভাঙবে। আমি চাচ্ছিলাম এখনি ভাঙাতে; কিন্তু তোমরা সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে ভাঙবে। তোমরা কথা দিয়েছ তো? ঠিক করে বল? এ সময় শিক্ষার্থীরা তাতে সায় দিয়ে বলেন– ‘জি স্যার’।

জাফর ইকবাল বলেন, শোন তোমরা টের পাচ্ছ না, তোমরা কী করেছ? বাংলাদেশের ৩৪ জন ভাইস চ্যান্সেলর বলেছেন, এখানকার ভাইস চ্যান্সেলর পদত্যাগ করলে তারা পদত্যাগ করবেন। আমার খুবই শখ, এটা দেখতে। আমাদের দেশে এমন ভাইস চ্যান্সেলর আছে, যাদের আদর্শ এত বেশি যে উনারা অন্যের দেখে নিজেরা পদত্যাগ করবেন। যদিও আমার ধারণা, এ শখ মিটবে না। আমি শুধু এটা বলতে চাই, তোমরা যেটা করেছ, সেটার তুলনা

নেই।

জাফর ইকবাল ও ইয়াসমীন হক প্রত্যেক অনশনকারীর কাছে গিয়ে তাদের মুখে পানি তুলে দেন। এ সময় অনেক অনশনকারী কান্নায় ভেঙে পড়েন। জাফর ইকবাল তাদের গায়েমাথায় হাত বুলিয়ে দেন এবং সান্ত্বনা দেন।

পাঁচ সাবেক শিক্ষার্থীর জামিন : শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে অর্থ জোগান দেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার সাবেক পাঁচ শিক্ষার্থীকে জামিন দিয়েছে সিলেটের একটি আদালত। মহনগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকশিনার বি এম আশরাফ উল্লাহ তাহের জানান, বুধবার সিলেট মহানগর হাকিম সুমন ভূঁইয়া তাদের জামিন মঞ্জুর করেন। এরা হলেন কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান স্বপন, স্থাপত্য বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী রেজা নূর মুঈন দীপ ও নাজমুস সাকিব দ্বীপ এবং এ কে এম মারুফ হোসেন ও ফয়সাল আহমেদ।

উত্তাল ক্যাম্পাস এখন সুনসান : বিডিনিউজের সংবাদ সূত্রে জানা যায়, আন্দোলনে তপ্ত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের চিত্র বদলাল কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে; অনশন ভাঙার পর দুপুর থেকে ক্যাম্পাসে কমেছে শিক্ষার্থীদের আনাগোনা। দুপুর ১টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ফাঁকা হতে থাকে। বিকাল ৩টায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আনাগোনা বা কোনো কর্মসূচি দেখা যায়নি।

উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অনশনকারীদের বিছানাপত্র গোছাতে দেখা গেল কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবীকে। পুরো ক্যাম্পাসে জনাকয়েক সাংবাদিক, আর ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা দুএকজন ছাড়া আর কেউ নেই। চারিদিকে সুনসান নীরবতা দেখে বোঝারই উপায় নেই ঘণ্টা কয়েক আগেই উত্তাল ছিল শিক্ষালয়টি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে গত ১৩ জানুয়ারি রাতে আন্দোলনে নামেন ওই হলের শিক্ষার্থীরা। এর জেরে পুলিশের লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেডে শিক্ষার্থীসহ ক্যাম্পাসের অন্তত অর্ধশত লোকজন আহত হন। সে ঘটনায় পুলিশ ‘গুলি বর্ষণ ও হত্যার উদ্দেশ্যে মারপিটের অভিযোগ’এনে অজ্ঞাতপরিচয় ২০০ থেকে ৩০০ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করে।

তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সেই নির্দেশ উপেক্ষা করে উল্টো উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে ১৯ জানুয়ারি বিকাল ৩টায় তারা অনশনে যান; ঘোষণা দেন উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাওয়ার।

শুরুতে মোট ২৪ শিক্ষার্থী অনশনে বসেন। এর মধ্যে নয়জন ছাত্রী এবং ১৫ জন ছাত্র। একজন অনশনকারীর বাবা গুরুতর অসুস্থ হলে তিনি প্রথম দিনই গ্রামের বাড়ি চলে যান। পরে তাদের সঙ্গে আরও পাঁচজন যুক্ত হন। এই অবস্থার মধ্যেই ভোরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গিয়ে পৌঁছান জাফর ইকবাল ও ইয়াসমীন হক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসমৃদ্ধ অঞ্চল গড়ে তুলতে ভারতের সাথে কাজ করবে বাংলাদেশ
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬