শারক্বীয়া ‘নায়েবে আমির’ গ্রেপ্তার

জঙ্গি দলটির নামকরণ নিয়ে দুই রকম তথ্য

| বৃহস্পতিবার , ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৫:৩৭ পূর্বাহ্ণ

জামায়াতুল আনসার ফির হিন্দাল শারক্বীয়ার ‘নায়েবে আমির’কে গ্রেপ্তার করে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ও ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট সিটিটিসি বলছে, নতুন নামে এই জঙ্গি দলটির গঠন এক বছর আগে; যদিও র‌্যাব বলে আসছে, তিন বছর আগেই দলটির নামকরণ হয়েছে। শারক্বীয়ার ‘নায়েবে আমির’ মো. মহিবুল্লাহ ওরফে ভোলার শায়েখকে (৪৮) গ্রেপ্তারের পর গতকাল বুধবার সংবাদ সম্মেলন করে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ও ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। মহিবুল্লাহকে ঢাকার সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানানো হয়েছে। তার কাছ থেকে একটি ল্যাপটপ উদ্ধারের কথাও জানিয়েছে সিটিটিসি। নায়েবে আমির হচ্ছে সংগঠনের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদ। সর্বোচ্চ পদ আমির। তবে শারক্বীয়ার আমিরের খোঁজ এখনও পাওয়া যায়নি। সিটিটিসির অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, গত বছর জানুয়ারিতে এই জঙ্গি সংগঠনের নেতারা বান্দরবানের দুর্গম পাহাড়ে বম পার্টির (কেএনএফ) ছত্রছায়ায় প্রশিক্ষণ নিতে যান। সেখানেই আনুষ্ঠানিকভাবে এই জঙ্গি দলটির নামকরণ হয় জামায়াতুল আনসার ফির হিন্দাল শারক্বীয়া। সমপ্রতি ঘরছাড়া কয়েকজন তরুণযুবকের খোঁজে নেমে নতুন জঙ্গি দলটির খোঁজ পায় র‌্যাব; এই দলটির সঙ্গে পাহাড়ি সংগঠন কুকিচিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের যোগসাজশও বেরিয়ে আসে। খবর বিডিনিউজের।

সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসি প্রধান বলেন, গত বছরের জানুয়ারিতে চিকিৎসক শাকির বিন ওয়ালী, শামিন মাহফুজসহ মহিবুল্লাহ বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির দুর্গম পাহাড়ে জঙ্গি সংগঠনটির প্রশিক্ষণ শিবিরে যান।

তিনি বলেন, পাহাড়ে বম পার্টি বা কুকিচিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের তত্ত্বাবধানে প্রশিক্ষণ চলত। সেখানে তাদের সঙ্গে কেএনএফ নেতা নাথান বমসহ সংগঠনটির অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। সেখানেই তারা আনুষ্ঠানিকভাবে সংগঠনটির নামকরণ করে ‘জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ এবং মহিবুল্লাহকে নায়েবে আমির নির্বাচিত করা হয়। গত বছরের সেপ্টেম্বরে শাকিরকে গ্রেপ্তার করে সিটিটিসি, শামিন মাহফুজ এখনও পলাতক।

গত অক্টোবরে গ্রেপ্তার হওয়া আরেক জঙ্গি সদস্যের ভাষ্য দিয়ে র‌্যাব বলেছিল, ২০১৯ সালের আগেই এই জঙ্গি দলটির নামকরণ সম্পন্ন হয়। গত বছরের অক্টোবরে পটুয়াখালীর মাদ্রাসা শিক্ষক হোসাইন আহম্মদ (৩৩)সহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

গ্রেপ্তার হোসেনের বরাত দিয়ে গত ৬ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেছিলেন, ‘নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবি, আনসার আল ইসলাম এবং হুজির সাবেক কিছু সদস্য ২০১৭ সালে নতুন জঙ্গি সংগঠনটির কার্যক্রম শুরু করেন। পরবর্তীকালে ২০১৯ সালে সংগঠনটি ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ (হিন্দুস্থানের পূর্বাঞ্চলীয় জামাতুল আনসার) নাম নেয়।’

এরপর গত ২১ অক্টোবর র‌্যাবের আরেক সংবাদ সম্মেলনে আল মঈন বলেন, নতুন এ জঙ্গি সংগঠনের আমিরের সঙ্গে কেএনএফের প্রতিষ্ঠাতা নাথান বমের সমঝোতা হয় ২০২১ সালে। পার্বত্য অঞ্চলে কেএনএফ’র ছত্রছায়ায় জামাতুল আনসার সদস্যদের ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য তাদের মধ্যে চুক্তিও হয়। সেই চুক্তি অনুযায়ী প্রতি মাসে তিন লাখ টাকা দেওয়ার পাশাপাশি কেএনএফ সদস্যদের খাবার খরচ বহন করে জামাতুল আনসার। এর আগে র‌্যাব জানায়, ২০১৭ সাল থেকেই কিছু জঙ্গি সদস্য নতুন সংগঠন গড়ার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছিল। সিটিসিসিও বুধবারের সংবাদ সম্মেলনে একই রকম তথ্য দিয়েছে।

সিটিটিসির সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তেব্যে বলা হয়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার মহিবুল্লাহ জানিয়েছেন, তিনি চট্টগ্রামের হাটহাজারীর ‘আল জামেয়াতুল আহেলিয়া দারুল উলুম মইনুল ইসলাম’ মাদ্রাসার ছাত্র থাকার সময়ে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ (হুজিবি) এর সঙ্গে যুক্ত হন এবং কথিত জিহাদি প্রশিক্ষণ নেন। তখন হুজির অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে মহিবুল্লাহ যুক্ত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত সেপ্টেম্বরে চিকিৎসক শাকের গ্রেপ্তার হওয়ার পর মহিবুল্লাহ তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও সিম কার্ড নষ্ট করে ফেলেন। এরপর তাকে তথ্য প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে গ্রেপ্তার করা হয়।

দল প্রধান পলাতক :

রংপুর ক্যাডেট কলেজ থেকে বহিষ্কৃত ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাবেক কর্মী শামিন মাহফুজ গোড়া থেকেই শারক্বীয়ার প্রধান বলে গত ২৭ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছিলেন সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামান।

সেদিন তিনি বলেছিলেন, জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে এর আগে তিনবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন শামিন, তবে এখন তিনি পলাতক। বুধবার এই সংগঠনের নেতৃত্ব নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান বলেন, এই জঙ্গি সংগঠনের প্রধান ব্যক্তি শামীম মাহফুজের নির্দেশে একটি কমিটি হয়। এই কমিটির প্রথম আমির ছিলেন রঙি। শূরা কমিটিতে ছিলেন ছয়জন। রঙি গ্রেপ্তারের পর শূরা কমিটির সদস্য আনিসুল ইসলাম ওরফে তমালকে আমির ও মহিবুল্লাহকে নায়েবে আমির নিযুক্ত করা হয়।

সিটিটিসি কর্মকর্তা বলেন, ‘ভোলার শায়খ হিসেবে পরিচিত মহিবুল্লাহ প্রশিক্ষণ ক্যাম্পের প্রশিক্ষণরত সদস্যদের দারস বা বয়ান দিতেন। আর প্রশিক্ষণ ক্যাম্পসহ জঙ্গি সংগঠনটির সার্বিক দায়িত্বে ছিলেন শামিন মাহফুজ।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধচারদিনব্যাপী রিহ্যাব চট্টগ্রাম ফেয়ার শুরু হচ্ছে আজ
পরবর্তী নিবন্ধহজযাত্রী নিবন্ধনের সময় বাড়লো