শান্তিপূর্ণ বিশ্বের জন্য চাই জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা

বিশ্ব শান্তি সম্মেলনের সমাপনীতে প্রধানমন্ত্রী

| সোমবার , ৬ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৬:২২ পূর্বাহ্ণ

বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা গড়ে তোলার উপর জোর দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি সম্পদ অস্ত্র প্রতিযোগিতায় ব্যয় না করে তা টেকসই উন্নয়ন অর্জনে ব্যবহার করতেও আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ঢাকায় আয়োজিত বিশ্ব শান্তি সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তব্যে এই আহ্বান জানান তিনি। গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন তিনি। খবর বিডিনিউজের।
গত দুই বছর ধরে করোনাভাইরাস মহামারী গোটা বিশ্বব্যবস্থাকে যে নতুন সংকটের মুখোমুখি করেছে, তা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এই সংকট প্রমাণ করেছে, আমরা কেউই আলাদা নই। শান্তিপূর্ণভাবে এই পৃথিবীতে বসবাস করতে হলে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে একটি জবাবদিহিতামূলক বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই।
বক্তব্যের শুরুতে সম্মেলনে অংশ নেওয়া সবাইকে স্বাগত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আপনাদের ‘শান্তি এবং সমপ্রীতির বাংলাদেশে’ স্বাগত জানাই। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর শান্তির আদর্শকে পুরোপুরি ধারণ করে পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধ ও সমঝোতার ভিত্তিতে সবার সঙ্গে কাজ করার জন্য বাংলাদেশ সদা প্রস্তুত।

স্বাধীনতার জন্য বাংলাদেশের মানুষের সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারের বিষয়টি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এর মধ্য দিয়ে শান্তির মূল্য এবং সমগ্র মানব জাতির গভীরতম আকাক্সক্ষাগুলো অনুধাবন করেছে। ফিলিস্তিনের জনগণের ন্যায্য দাবির পক্ষে বাংলাদেশের অবিচল সমর্থনের কথা বলেন তিনি। সম্পদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও ১১ লাখের বেশি মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে সাময়িক আশ্রয় দিয়ে এই অঞ্চলে একটি বড় ধরনের মানবিক বিপর্যয় এড়াতে বাংলাদেশের ভূমিকার কথাও বলেন।
শোষিত মানুষের অধিকার আদায় এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে বঙ্গবন্ধুর আজীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরার পাশাপাশি স্বাধীনতার পর দেশের উন্নয়নে জাতির পিতার নেওয়া উদ্যোগগুলোও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বিশ্ব শান্তিতে বিশেষ অবদানের জন্য বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক পাওয়ার কথা বলেন তিনি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সংবিধান লক্সঘন করে ক্ষমতায় বসে খুনিদের রক্ষায় ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারির মতো ঘটনাও যে ঘটেছিল, সেটাও বলেন শেখ হাসিনা।
শান্তি প্রতিষ্ঠায় আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া নানা উদ্যোগ তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বলেন, ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি উপজাতিদের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের অবসান ঘটিয়ে শান্তি-চুক্তি স্বাক্ষর করি। ১৯৯৭ সালে আমরাই প্রথম জাতিসংঘে ‘শান্তির সংস্কৃতি’ বিকাশে কর্মসূচি গ্রহণের লক্ষ্যে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করি, যা ১৯৯৯ সালের ১৩ই সেপ্টেম্বর গৃহীত হয়। সে অনুযায়ী জাতিসংঘ ২০০০ সালকে ‘শান্তির সংস্কৃতির আন্তর্জাতিক বছর’ এবং ২০০১-২০১০-কে ‘শান্তির সংস্কৃতি ও অহিংস দশক’ ঘোষণা করে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। আগামী প্রজন্মের জন্য জাতির পিতার স্বপ্নের আত্মমর্যাদাশীল, উন্নত এবং সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে আওয়ামী লীগ সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে রোল মডেল বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউনের একটি ভিডিও বার্তা অনুষ্ঠানে প্রচার করা হয়। সিঙ্গাপুরের সাবেক প্রধানমন্ত্রী গোহ চোক টং, ইউনেস্কোর সাবেক মহাপরিচালক ইরিনা বোকোভা এবং হাডসন ইনস্টিটিউটের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার পরিচালক হোসেন হাক্কানি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপিছিয়ে গেল ‘মিনি সেক্রেটারিয়েট ফর চট্টগ্রাম’ প্রকল্পের নকশা উপস্থাপন কাজ
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬