শান্তিতে থাকুন প্রিয় লিলিবাট

ফারজানা আজিম

| রবিবার , ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৫:২৫ পূর্বাহ্ণ

৯৬ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। কাটিয়েছেন তিনি বর্ণাঢ্য জীবন, রাজ পরিবারে ঘটেছে কত না কাহিনি রটেছে নানা খবর, সব সময়ই তিনি ছিলেন অবিচল। কদিন আগেই রানী এলিজাবেথের সিংহাসনে আরোহণের ৭০ বছর উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন বাকিংহাম প্যালেস।
অথচ এলিজাবেথের কখনোই রানি হওয়ার কথা ছিল না। কারণ তার বাবারও রাজা হওয়ার কথা ছিল না। রাজ পরিবারের নিয়মের কারণে অনেকটা লটারি জিতেন রানি এলিজাবেথের বাবা প্রিন্স অ্যালবার্ট (ডিউক অব ইয়ার্ক)। রাজা পঞ্চম জের্জর ছোট ছেলে হাওয়ায় সিংহাসনে বসার সুযোগ ছিল না তার। নিয়ম অনুযায়ী পঞ্চম জের্জর বড় ছেলে অষ্টম এডওয়াডের রাজা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অষ্টম এডওয়ার্ড বিয়ে করেছিলেন এক ডিভোর্সি নারীকে। ঠিক সেই কারণেই ভাগ্যের চাকা খুলে যায় প্রিন্স অ্যালবার্ট এর। ১৯৩৬ সালে ব্রিটিশ সিংহাসন আরোহন করেন তিনি। এরপর হিসাব অনুযায়ী অ্যালবার্টের মৃত্যুর পর বড় মেয়ে হিসেবে ১৯৫২ সালে মাত্র ২৫ বছর বয়সে সিংহাসনে বসেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। রানি এলিজাবেথের আরো একটি পারিবারিক নাম ছিল। নামটি তার কাছে বিশেষ কিছু। সেটা অবশ্য কখনো কারো সামনে বিশেষভাবে উল্লেখ করেননি। তবে নানা সময়ে সেটা প্রকাশ পেয়েছে।
রানী যখন নিজের নাম উচ্চারণ করতে পারতেন না, তখন তাকে মা-বাবা আদর করে ডাকতেন লিলি বেট। রয়্যাল ভাষ্যকার ও সাংবাদিক ডেইজি ম্যাকান্দ্রো এক সফরে এ নাম প্রকাশ্যে আনেন। তবে নামটি যে রানির খুব প্রিয় ছিল সেটা আরো জোরালো হয় তার স্বামী মৃত্যুর পর। ফিলিপের কফিনে রানী তার হাতে লেখা একটি নোট রাখেন, যার নিচের দিকে তিনি সই করেন লিলি বেট নামে। ২০১২ সালে সেলি বেডেল স্মিথের লিখা রানের জীবনে ভিত্তিক বইয়েও নামটির উল্লেখ আছে। সেই ভালোবাসার পারিবারিক নামটি এখনো রানি পরিবারে থেকে যাবে নতুন প্রজন্মের মাধ্যমে। কিভাবে? এলিজাবেথের নাতি প্রিন্স হ্যারি ও মেগান মার্কেলের দ্বিতীয় সন্তানের নাম দাদী ও মায়ের প্রতি গভীর ভালোবাসা থেকেই রাখা হয় লিলি বাট ডায়না। তবে রানি আজ আর নেই। ইতিহাসে যে ক’জন নারী শাসককে নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে তাদের মধ্যে এলিজাবেথ অন্যতম। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের দীর্ঘ রাজত্বকাল জুড়ে ছিল তার কঠোর কর্তব্য পরায়ণতা এবং ব্রিটিশ সিংহাসন ও ব্রিটিশ জনগণের উদ্দেশ্যে তার জীবনকে নিবেদিত করার ব্যাপারে তার নিষ্ঠা ও অঙ্গীকার। উত্তাল নানা সময়ে মধ্যেও ব্রিটেনের রাজতন্ত্রকে তিনি যেভাবে টিকিয়ে রেখেছেন তা বিশেষভাবে স্মরণীয়। একজন ক্ষমতাধর নারী হয়েও তার মধ্যে ছিল না কোনো রকমের অহমিকা বোধ। তিনি শুধু বৃটেনের রানি ছিলেন না, তিনি বৃটেনের জনগণের হৃদয়ের রানি ও ছিলেন। তিনি তার জীবন দিয়ে প্রমাণ করেছেন সেই প্রবাদকে:
যেদিন তুমি এসেছিলে ভবে, কেঁদেছিলে তুমি হেসেছিল সবে। এমন জীবন তুমি করিও গঠন, মরিলেও হাসিবে তুমি, কাঁদিবে ভুবন। আজ সত্যি ব্রিটেন তথা সারা বিশ্ব কাঁদছে। ধন্য লিলি বাটে জন্ম, ধন্য বৃটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। যেখানেই থাকুন না কেন শান্তিতে থাকুন প্রিয় লিলিবাট।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশিক্ষার মাধ্যমে মেয়েরা এগিয়ে যাচ্ছে
পরবর্তী নিবন্ধআদালত প্রাঙ্গণে ধূমপান বন্ধের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক