শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আপসহীনতা ও দৃঢ়চিন্তা সকলের অনুপ্রেরণা

| মঙ্গলবার , ১৪ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৯:০০ পূর্বাহ্ণ

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ। ১৯৭১ সালের এদিনে দখলদার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তার দোসর রাজাকার আল-বদর, আল-শামস মিলিতভাবে বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। একাত্তরে ত্রিশ লাখ শহীদের মধ্যে বুদ্ধিজীবীদের বেছে বেছে হত্যার ঘটনা বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস ধরে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরেরা এ দেশের মানুষের ওপর যে গণহত্যা ও নৃশংসতা চালিয়েছে, তার নজির ইতিহাসে খুব বেশি নেই। কিন্তু সেই নয় মাসের নৃশংসতা ছাপিয়ে গেছে যে মর্মান্তিক ঘটনা, তা হলো বিজয়ের প্রাক্কালে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যা করা। পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনীর সদস্যরা রাতের অন্ধকারে লেখক-বুদ্ধিজীবী-শিক্ষাবিদ-চিকিৎসক-সাংবাদিক-প্রকৌশলীদের ধরে নিয়ে হত্যা করে। যদিও ২৫ মার্চের কালরাত থেকেই অন্যদের সঙ্গে বুদ্ধিজীবীরাও হত্যার শিকার হয়ে আসছিলেন। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে রয়েছেন-অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, ডা. আলিম চৌধুরী, অধ্যাপক মুনিরুজ্জামান, ড. ফজলে রাব্বী, সিরাজ উদ্দিন হোসেন, শহীদুল্লাহ কায়সার, অধ্যাপক জিসি দেব, জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, সাংবাদিক খন্দকার আবু তাহের, নিজামউদ্দিন আহমেদ, এসএ মান্নান (লাডু ভাই), এ এন এম গোলাম মোস্তফা, সৈয়দ নাজমুল হক, সেলিনা পারভিন, নূতন চন্দ্র সিংহসহ আরো অনেকে। আজ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে আমরা সেই মহান সন্তানদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ভাষায় বলা যায়, বুদ্ধিজীবীরা দেশ ও জাতির উন্নয়ন ও অগ্রগতির রূপকার। তাঁদের উদ্ভাবনী ক্ষমতা, সৃজনশীল কর্মকাণ্ড, উদার ও গণতান্ত্রিক চিন্তা-চেতনা জাতীয় অগ্রগতির সহায়ক। জাতির বিবেক হিসেবে খ্যাত আমাদের বুদ্ধিজীবীরা তাঁদের ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত সৃষ্টি, যুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারকে পরামর্শ দেওয়াসহ বুদ্ধিবৃত্তিক চেতনা দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধকে সাফল্যের পথে এগিয়ে নিতে বিপুল অবদান রাখেন। জাতির দুর্ভাগ্য, বিজয়ের প্রাক্কালে হানাদারবাহিনী পরিকল্পিতভাবে এ দেশের খ্যাতনামা বুদ্ধিজীবীদের নির্মমভাবে হত্যা করে। জাতির জন্য এই এক অপূরণীয় ক্ষতি।
হানাদারবাহিনী তাদের নিশ্চিত পরাজয় আঁচ করতে পেরে জাতিকে মেধাশূন্য করার হীন উদ্দেশ্যে স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার-আলবদর-আল শামস বাহিনীর সহযোগিতায় দেশের প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিল্পীসহ বহু গুণীজনকে নির্মমভাবে হত্যা করে। জাতি হারায় তার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাসে এ এক কলঙ্কজনক অধ্যায়।
আমরা প্রায় প্রতিবছর এমন দিনে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করি। কিন্তু যাঁরা নিজেদের জ্ঞান-মনীষা ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে জাতিকে পথ দেখিয়েছেন, আলোকিত করেছেন, তাঁদের বছরের একটি দিন স্মরণ করলেই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। তাঁদের শিক্ষাকে অন্তরে ধারণ করতে হবে, নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে কেন তাঁরা জীবন দিয়েছেন। গত বছর থেকে সরকারের পক্ষ থেকে একটা ভালো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালনের নির্দেশ দিয়েছে সরকার। এদিন দেশের সব স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় পালন করতে বলা হয়েছে। দিবসটির ইতিহাস ও তাৎপর্য তুলে ধরতে এদিন অনলাইনে বা যেখানে সম্ভব স্বাস্থ্যবিধি মেনে আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে। এছাড়া দিবসটির সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে রচনা প্রতিযোগিতা আয়োজনের পরামর্শও দেয়া হয়েছে।
বিলম্বে হলেও এই বুদ্ধিজীবী হত্যায় জড়িত কয়েকজন শীর্ষ ঘাতকের বিচার ও শাস্তি কার্যকর হয়েছে। বর্তমান সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে উজ্জীবিত করে লালন করে দেশ পরিচালনায় অঙ্গীকারবদ্ধ বলে বুদ্ধিজীবীদের প্রদর্শিত পথে পরিচালিত হতে চায়। এক্ষেত্রে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতি সংরক্ষণের পাশাপাশি দেশকে তাঁদের অনুসৃত পথেই চালিত করতে হবে। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের দৃঢ়চিন্তা ও আপসহীনতা সকলের অনুপ্রেরণা। তারা বাংলাদেশ বিরোধী চক্রান্তে মাথা নত না করে মৃত্যুকে আলিঙ্গনের মাধ্যমে অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবিচল ও সংগ্রামমুখর থাকার যে শিক্ষা রেখে গেছেন, তা আমাদের সর্বদা মাথা তুলে দাঁড়ানোর দীক্ষা। এ দীক্ষায় নতুন প্রজন্মকে দীক্ষিত হয় দেশ গঠনে আত্মনিয়োগ করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধশহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস