বেশ কিছুদিন ধরেই করোনা সংক্রমণ বাড়ছে চট্টগ্রামে। তবে আগে মহানগর এলাকায় সংক্রমণ বেশি দেখা গেলেও এই সময়ে এসে গ্রামাঞ্চলেও সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় প্রদত্ত তথ্যে এমন চিত্র উঠে এসেছে। এদিকে, সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় পাল্লা দিয়ে রোগীর চাপও বাড়ছে হাসপাতালগুলোতে। বিশেষ করে গত ১০/১২ দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২ সপ্তাহ আগেও করোনা রোগীর জন্য নির্ধারিত কেবিন/শয্যা বেশির ভাগই খালি ছিল। কিন্তু গত ১০/১২ দিনে এ চিত্র পাল্টে গেছে। এই সময়ে রোগীর চাপ তীব্র হয়েছে হাসপাতালগুলোতে। তবে আইসিইউতে চাপ তুলনামূলক বেশি বলে চিকিৎসক ও হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ায় রোগীর চাপ বাড়ছে বলে স্বীকার করেছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলছেন, ঈদের সময় মানুষ অনেকটা বেপরোয়াভাবে শহর ছেড়ে গ্রামে গেছেন। অনেকে স্বাস্থ্য বিধি না মেনে শপিং করেছেন। এমন পরিস্থিতি দেখে ঈদ পরবর্তী সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কা করেছিলাম আমরা। এখন সেটাই দৃশ্যমান। তাছাড়া জনসমাগম না করার নির্দেশনা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সামাজিক সভা ও অনুষ্ঠান বন্ধ নেই। স্বাস্থ্যবিধির কোনো নির্দেশনাই মানুষ মানতে চান না। ফলে সংক্রমণের হার আবারো আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। তবে এবার গ্রামাঞ্চলে আক্রান্তের হার তুলনামূলক বেশি দেখা যাচ্ছে। ঈদ পরবর্তী গ্রামাঞ্চলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার যে আশঙ্কা আমরা করেছিলাম, সেটাই হয়েছে। চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের হার এখন ফের ঊর্ধ্বমুখী। বেশ কয়দিন ধরে চট্টগ্রামে দৈনিক সংক্রমণের হার ১০ থেকে ২০ শতাংশে উঠা-নামা করছে। যদিও বিদেশগামীদের পরীক্ষাকৃত নমুনার সংখ্যা বাদ দিয়ে হিসাব করলে দৈনিক সংক্রমণের গড় হার প্রকৃতপক্ষে ৩০ শতাংশ ছুঁয়ে যায়।
গত ১৭ জুন মোট ১ হাজার ১৫১টি নমুনা পরীক্ষায় ২২২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে চট্টগ্রামে। হিসেবে গড় শনাক্তের হার ১৯.২৮ শতাংশ। এর মাঝে মহানগরীর ৯১৫টি নমুনায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৩৪ জনের। শনাক্তের হার ১৪.৬৪ শতাংশ। বিপরীতে উপজেলা পর্যায়ে শনাক্তের হার ৩৭ শতাংশের বেশি। উপজেলা পর্যায়ের ২৩৬টি নমুনা পরীক্ষায় ৮৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে এদিন। তবে উপজেলা পর্যায়ে হাটহাজারী, রাউজান, ফটিকছড়ি, রাঙ্গুনিয়া ও সীতাকুণ্ডে সংক্রমণের হার তুলনামূলক বেশি। বিশেষ করে ঈদের কয়েক সপ্তাহ পর থেকে সংক্রমণের হার বাড়ছে বলে জানান সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি। সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে প্রতিদিন করোনায় শনাক্ত ও হাসপাতালে (নির্দিষ্ট কিছু সংখ্যক) ভর্তিকৃত রোগীর তথ্য সংক্রান্ত আপডেট দেয়া হয়ে থাকে। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ মে চট্টগ্রামের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ৩৫৯ জন করোনা রোগী ভর্তি ছিল। ১০ জুন হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা দেখানো হয় ৪১৪ জন। কিন্তু ১৭ জুন হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৮৬ জনে। হিসেবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ৭২ জন। আর ২০ দিনের ব্যবধানে হিসাব করলে এ সংখ্যা ১৩০ জনের কম নয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে গতকালের (১৮ জুন) হালনাগাদকৃত তথ্যে দেখা যায়, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে সবমিলিয়ে ১৪৬ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। এর মধ্যে করোনা আইসিইউতে ৫ জন এবং এইচডিওতে আরো ৫ জন রোগী চিকিৎসাধীন। তবে শেষ ২৪ ঘণ্টায় ৬৪ জন রোগী ভর্তি হয়েছে চমেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটে।
আইসিইউসহ সবমিলিয়ে অর্ধশতাধিক রোগী ভর্তি রয়েছে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে। ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে ১৯ জন।
বেসরকারি মা ও শিশু হাসপাতালে ৬৪ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। এর মাঝে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ১৬ জন। এর বাইরে সিএমপি বিদ্যানন্দ ফিল্ড হাসপাতালে ৫৪ জন এবং আল মানাহিল নার্চার জেনারেল হাসপাতালে ৮ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। কয়েক সপ্তাহ ধরে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা। অবশ্য, ভর্তি হওয়াদের মাঝে খারাপ রোগীর সংখ্যা বেশি বলে জানান চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের করোনা টিমের ফোকাল পারসন ডা. আব্দুর রব মাসুম। মহানগরের বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও রোগীর চাপ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে বলে হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। বিশেষ করে গত ১০/১৫ দিন ধরে রোগীর চাপ তীব্র হয়েছে বলে জানান তারা।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত মে মাসে সবমিলিয়ে ২৭ হাজার ৭৩৫টি নমুনা পরীক্ষায় ২ হাজার ৩৭২ জনের করোনা শনাক্ত হয় চট্টগ্রাম মহানগরে। কিন্তু একই সময়ে ৩ হাজার ৪০৩টি নমুনা পরীক্ষায় উপজেলা পর্যায়ে ৯০৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়। হিসেবে মহানগরে শনাক্তের হার যেখানে ৮ শতাংশ, সেখানে উপজেলা পর্যায়ে শনাক্তের হার ২৬ শতাংশের বেশি।
কয়েকমাস আগেও উপজেলা পর্যায়ে খুব কম সংখ্যক নমুনা পরীক্ষা হতো জানিয়ে সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ঈদ পরবর্তী নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বেড়েছে। নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় শনাক্তের হারও বাড়ছে। অবশ্য এটা ঠিক যে, ঈদের সময় শহর থেকে যাওয়া মানুষজনই গ্রামাঞ্চলে ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়েছে। যা ঈদ পরবর্তী প্রভাব হিসেবে এখন দৃশ্যমান হচ্ছে।












