শহরের দুই প্রান্তে দুটি স্কুল হলে চট্টগ্রামবাসী উপকৃত হতো

| সোমবার , ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৫:০৬ পূর্বাহ্ণ

একটি আনন্দের খবর হলো চট্টগ্রামে দুটি স্কুল হচ্ছে। দীর্ঘদিন ভূমি জটিলতায় আটকে ছিল এই প্রকল্প। দৈনিক আজাদীর ১৭ সেপ্টেম্বর সংখ্যায় প্রধান শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, চারটি বিভাগীয় শহরসহ সারা দেশে ৯টি নতুন সরকারি মাধ্যমিক স্কুল স্থাপন প্রকল্প গ্রহণ করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। ২০১৮ সালে নেয়া এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৪৩৫ কোটি টাকা। আর প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সময়সীমা ধরা হয় ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত। ওই প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রাম মহানগরে সরকারি দুটি মাধ্যমিক স্কুল স্থাপনের সিদ্ধান্ত রয়েছে। তবে প্রকল্প গ্রহণের ৫ বছরেও চট্টগ্রামে নতুন এ দুটি স্কুলের নির্মাণ কাজ শুরু হয়নি। এর মাঝে এক বছর আগেই (২০২১ সালের জুনে) এ প্রকল্পের সময়সীমা শেষ হয়েছে। বলতে গেলে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও স্কুলের নির্মাণ কাজ শুরু করা যায়নি। যদিও এর মধ্যে আরো দু’বছর বাড়িয়ে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্পটির পরিচালক রায়হানা তসলিম। আর ভূমি অধিগ্রহণসহ দাফতরিক প্রক্রিয়া শেষ জানিয়ে কিছুদিনের মধ্যেই (চলতি মাসেই) একটি স্কুলের নির্মাণ কাজ শুরু হবে বলে দাবি করেছেন তিনি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভূমি জটিলতায় দীর্ঘ দিন এ প্রকল্প আটকে ছিল। নতুন দুটি স্কুলের জন্য মহানগরে জমি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। দীর্ঘ সময় ধরে অনেক খোঁজাখুঁজির পর অবশেষে জমি চিহ্নিত করতে সক্ষম হয় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। তবে স্কুল দুটির জন্য জমি চিহ্নিত করা হয় পতেঙ্গা এলাকাতেই। প্রস্তাবিত দুটি স্কুলের স্থান হিসেবে একটি উত্তর পতেঙ্গা এলাকায় এবং অপরটি পূর্ব পতেঙ্গা এলাকা নির্বাচন করা হয়েছে। প্রস্তাবিত এ দুটি স্থানের মধ্যকার দূরত্ব বড় জোর ৩ থেকে ৪ কিলোমিটার বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। অর্থাৎ ভূমি জটিলতায় দীর্ঘদিন আটকে থাকার পর এখন নতুন দুটি স্কুলই হচ্ছে পতেঙ্গা এলাকায়।
চট্টগ্রামে দুটি স্কুল প্রতিষ্ঠার বিষয়টি যতটা আনন্দের, একই জায়গায় হওয়ার কারণে ততটা প্রশ্নসাপেক্ষ হয়ে দেখা দিয়েছে শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের কাছে। তাঁরা মনে করেন, একই এলাকায় দুটি স্কুল স্থাপনের চাইতে শহরের দুই প্রান্তে দুটি স্কুল স্থাপন করা জরুরি ছিল। এতে চট্টগ্রামবাসী উপকৃত হতেন বলেও তাঁরা অভিমত প্রকাশ করেছেন। তাঁরা বলেন, দীর্ঘ সময় পর যেহেতু চট্টগ্রাম শহরে দুটি নতুন স্কুল হচ্ছে, সেহেতু চাহিদা ও অপরিহার্যতা বিবেচনা করে স্থান নির্বাচন করা উচিত। দুটি স্কুল শহরের দুই প্রান্তে অর্থাৎ পতেঙ্গা এলাকায় একটি হলে অপরটি চান্দগাঁও, মোহরা বা অক্সিজেন এলাকায় স্থাপন করতে পারলে সবচেয়ে ভালো হতো।
শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেছেন, শিক্ষার সংকট তৈরিতে বড় ভূমিকা রাখছে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ। আমাদের সংবিধানে উল্লেখ আছে, শিক্ষা একটি মৌলিক অধিকার। শিক্ষাকে কখনো পণ্য হিসেবে বিবেচনা করা উচিত নয়, এ রকম একটি চিন্তা আমাদের শিক্ষাদর্শনের ভিত্তি। কিন্তু যেদিন ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল ও পরে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় চালু হলো, কোচিং-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠা পেল, সেদিন থেকে শিক্ষা পণ্যের মোড়কে হাজির হতে থাকল। এটি ঘটছে নানা কারণে, তার একটি হলো বিশ্বায়নের ফলে সারা বিশ্বে একটি বিশাল পণ্যসংস্কৃতি তৈরি হওয়া। এই পণ্যসংস্কৃতি অসম্ভব শক্তিশালী।…আমাদের সমাজ শিক্ষাকে একটি সুযোগ বলে ভাবে, অধিকার হিসেবে ভাবে না। যদি ভাবা হতো, তাহলে সামাজিক চুক্তিতে তার প্রতিফলন থাকতো।
অনেক বছর পর চট্টগ্রাম দুটি সরকারি স্কুল পাচ্ছে, সেটিকে কাজে লাগাতে হবে যৌক্তিকভাবে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন আন্তরিকভাবে কাজ করলে স্কুলের জন্য জমি বের করা খুব বেশি কঠিক হবে বলে মনে হয় না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক শিক্ষা ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমানও একই মত প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, একই সাথে ২ একর জমি কিনতে পাওয়া না গেলেও বিকল্প উপায়ের কথা ভাবতে হবে। যেমন সরকারি জমি হয়তো কারো দখলে আছে, সেটাও দেখা যেতে পারে। আবার (সরকারি জমি) নিম্নমানের কোনো কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে, তাও দেখা যেতে পারে। মোটকথা, হাল ছেড়ে দেয়াটা সমাধান না। সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো এ বিষয়ে আরো আন্তরিক হলে, আরো বেশি সচেষ্ট হলে জমি বের করাটা খুব কঠিন কিছু নয়।
আমরা চাই, সরকারি মাধ্যমিক স্কুল প্রকল্প বাস্তবায়ন হোক দ্রুত। শুধু মাথায় রাখা দরকার যে, শহরের দুই প্রান্তে দুটি স্কুল হলে চট্টগ্রামবাসী উপকৃত হতো।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে