শরতের মহিমা

সৌভিক চৌধুরী | বৃহস্পতিবার , ৭ অক্টোবর, ২০২১ at ৫:৪৭ পূর্বাহ্ণ

মেঘাড়ম্বর বর্ষার সমাপ্তিতে প্রকৃতি সেজে ওঠে নবরূপে, সজীবতার নবীনতায়। শরতের আগমন ঘোষিত হয় দিকে দিকে, কাশফুলের অপরূপ স্নিগ্ধতায়। কাশফুলের পেলবতা জীবনকে রাঙিয়ে যায় এক পরম মমতায়। মহাকবি কালিদাস শরৎ বন্দনায় বলেছিলেন, ‘প্রিয়তম আমার, ঐ চেয়ে দেখো নববধূর ন্যায় সুসজ্জিত শরত কাল সমাগত’। উত্তাল বর্ষার পর প্রকৃতিতে স্নিগ্ধতা ছড়িয়ে দেয়ার জন্য শরতের আগমন। এ আগমন যেন শুভ্রতারই নামান্তর। নদীতীরে কাশফুলের সমারোহ, আকাশের দিগন্ত বিস্তৃত বিচ্ছিন্ন সাদা মেঘ। তপ্ত দিনের শেষে ছিটে ফোঁটা বৃষ্টির ছোঁয়া।এ ঋতুতে পালকের মতো নরম এবং ধবধবে সাদা রঙের কাশফুল ফোটে। বর্ষা ঋতুকে বিদায় জানিয়ে নীল আকাশে সাদা তুলোর মতো মেঘের সাথে কাশফুলের মৃদু বাতাসে দোল খাওয়া প্রকৃতিতে শুধুই মুগ্ধতা ছড়িয়ে যায়। তাই নীল আকাশের নীচে সাদা কাশফুল যখন দুলতে থাকে, তখন মনে হয় শ্বেতবসনা একঝাঁক নৃত্যশিল্পী নৃত্য করছে। শরতের প্রভাত সূর্যের আলোর প্রতিফলনে দ্যুতিময় স্নিগ্ধতায় সজীবতার পরশে ভরে ওঠে। এ সময় প্রকৃতিতে ধ্বনিত হয় শারদোৎসবের আগমনী বার্তা। দুর্গা মায়ের আগমন বাঙালির মাঝে এক সর্বজনীন উৎসবের বারতা নিয়ে আসে। সকলের মিলিত অংশগ্রহণে এ উৎসব হয়ে ওঠে চিরায়ত সম্মিলনের মহাক্ষেত্র। শরতের প্রকৃতির সৌন্দর্যে অবগাহিত কবি নজরুল তাঁর কাব্যে লিখেছেন, ‘শিউলিতলায় ভোরবেলায় কুসুম চুড়ায় পল্লীবালা, শেফালি পুলকে ঝরে পড়ে মুখে খোঁপাতে চিবুকে আবেশ উতলা’। শরতের অনুপম সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথও লিখেছেন, ‘শরতের কোমলতায় আমরা বেঁধেছি কাশের গুচ্ছ, আমরা গেঁথেছি শেফালি মালা, নবীন ধানের মঞ্জরী দিয়ে সাজিয়ে এনেছি ডালা, এসো গো শারদ লক্ষ্মী তোমার শুভ্র মেঘের রথে, এসো নির্মল নীল পথে’। কখনো ক্লান্ত অবসাদে তিনি দেখেছেন শরতের নবীনতাকে, যেখানে চিত্ত মগ্ন হয়েছে সমস্তের মাঝে। তাঁর সেই ভাবনার পঙক্তিমালায় শেষ করি, আজ শরতের আলোয় এই যে চেয়ে দেখি, মনে হয়, এ যেন আমার প্রথম দেখা। আমি দেখলেম নবীনকে, প্রতিদিনের ক্লান্ত চোখ যার দর্শন হারিয়েছে আমার নগ্ন চিত্ত আজ মগ্ন হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅপেক্ষা
পরবর্তী নিবন্ধআমার ভালো লাগা, আমার প্রেম