শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সচেতনতা চাই চাই আইনের কার্যকর প্রয়োগ

| শনিবার , ১১ মার্চ, ২০২৩ at ৪:৫৭ পূর্বাহ্ণ

শব্দদূষণ এখন মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। একটি নীরব ঘাতক হিসেবে বিবেচিত এই শব্দদূষণ শুধু চট্টগ্রাম বা রাজধানীতে নয়, সারাদেশে এটি চলছে দোর্দণ্ডপ্রতাপে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাতাসের মাধ্যমে সহনক্ষমতার অধিক তীব্র বা তীক্ষ্ণ, বিশেষ করে সুরবর্জিত শব্দের উপস্থিতিতে মানুষ তথা জীব পরিবেশের ওপর যে ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি হয়, তাকেই শব্দদূষণ বলা হয়।

অপরিণামদর্শী মানুষ তাদের দৈনন্দিন কার্যকলাপের মধ্য দিয়ে প্রতিনিয়ত শব্দদূষণ ঘটিয়ে চলেছে। মানবসত্যতার বিকাশমান ধারায় অপরিকল্পিত নগরায়ণ, শিল্পের দ্রুত প্রভাব, পরিবহনের অবাধ প্রবাহ প্রতিনিয়ত সুরবর্জিত শব্দের বিস্তার ঘটাচ্ছে। ফলে শব্দদূষণও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের দেশে শব্দদূষণের অন্যতম প্রধান উৎস পরিবহন। মাত্রাধিক ডিজেল ইঞ্জিনচালিত বাস, ট্রাক, কার, মোটর সাইকেল থেকে উত্থিত অনিয়ন্ত্রিত শব্দ পরিবেশ দূষণেরও অন্যতম কারণ। এছাড়া এসব যানবাহনের অনিয়ন্ত্রিত উচ্চতীব্রতাসম্পন্ন হাইড্রলিক বা বৈদ্যুতিক হর্ন হচ্ছে শব্দদূষণের প্রধান উৎস। স্কুলকলেজ, হাসপাতালের মতো স্পর্শকাতর স্থানেও এসব তীব্র শব্দের রাহুগ্রাস থেকে মুক্তি নেই।

গত ৯ মার্চ দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত হয়েছে ‘নগরে মাত্রাতিরিক্ত শব্দদূষণ’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন। এতে বলা হয়েছে, নগরের পাঁচলাইশ সার্জিস্কোপ হসপিটাল এবং একে খান আল আমিন হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকা দুটি ‘নীরব এলাকা’ শ্রেণিভুক্ত। শব্দ দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০০৬ এর বিধি ২ () অনুযায়ী, এসব এলাকায় দিনের বেলা শব্দের সহনীয় মানমাত্রা হচ্ছে ৫০ ডেসিবল। যা রাতের বেলা ৪০ ডেসিবল এ নির্ধারিত। অথচ এলাকা দুটিতে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম গবেষণাগারের রেকর্ডকৃত শব্দের মানমাত্রা হচ্ছে ৭২ দশমিক ৫০ ডেসিবল।

শুধু এলাকা দুটি নয়। শহরের অন্যান্য ‘নীরব এলাকা’য়ও শব্দের সহনীয় মানমাত্রার চেয়ে বেশি রেকর্ড করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। সংস্থাটির গবেষণাগার প্রতিমাসে শহরের ৩০টি স্পটের শব্দের মানমাত্রা পরীক্ষা করে। এর মধ্যে ১৫টি ‘নীরব এলাকা’, দুইটি ‘মিশ্র এলাকা’, ‘সাতটি আবাসিক এলাকা’ এবং ছয়টি বাণিজ্যিক এলাকা রয়েছে। গত মাসে (ফেব্রুয়ারি) পরীক্ষার ফলাফল পর্যালোচনা করে জানা গেছে, সবক’টি এলাকায় শব্দের নির্ধারিত মানমাত্রা অতিক্রম করেছে। অর্থাৎ মাত্রাতিরিক্ত শব্দদূষণের শিকার হচ্ছে নগরবাসী।

শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালায় স্পষ্ট বলা আছে কোন এলাকায়, দিনের কোন সময়ে, কী ধরনের শব্দদূষণ করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু তা কোনোভাবেই মানা হয় না। পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মাত্রাতিরিক্ত এ শব্দদূষণের জন্য গাড়ির হাইড্রোলিক হর্ন, মোটরযানের অতিরিক্ত হর্ন, শিল্পকারখানার মেশিনের শব্দ, বাসাবাড়ি ও শপিং মলে জেনারেটর ও উচ্চ শব্দে মিউজিক বাজানো, নির্মাণ কাজের পণ্য ওঠানামা ও নির্মাণ কাজ চলাকালে সৃষ্ট শব্দ এবং মাইকিং দায়ী। চিকিৎসকরা বলছেন, শব্দদূষণের কারণে বাড়ছে নগরবাসীর স্বাস্থ্যঝুঁকি। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সচেতনতার পাশাপাশি আইনের কার্যকর প্রয়োগ করতে হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

শব্দদূষণ রোধে গণসচেতনতা আরো বৃদ্ধি করতে হবে। আর এই কাজে প্রশাসন ও গণমাধ্যম খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। আমাদের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন দূষণমুক্ত নিরাপদ পরিবেশ। পরিবেশ দূষণ ও দূষণরোধে নিজেদের সচেতনতা ও দায়িত্ববোধ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কোন একক ব্যক্তি বা সংগঠনের পক্ষে অনেক সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়। এজন্য প্রয়োজন ধারাবাহিক সম্মিলিত প্রচেষ্টা। পরিবেশের ক্ষতিকর বিষয় সম্পর্কে আমরা নিজেরা যখন সচেতন হবো, তখন অন্যদেরকে সচেতন করে তোলার মাধ্যমে আমাদের পরিবেশকে নিরাপদ এবং আগামী প্রজন্মের জন্য সুস্থসুন্দর ও বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে পারবো।

শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা২০০৬’ হলো আইনি হাতিয়ার, যার প্রয়োগ দরকার। এই আইনের কঠোর বাস্তবায়ন না হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে। পাশাপাশি নীতিনির্ধারকদেরও অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। বিশেষ করে শব্দদূষণের অপকারিতা ও ক্ষতি সম্পর্কে চালক, মালিক ও সাধারণ জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রচারপত্র, সামাজিক, ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে সচেতনতামূলক তথ্য প্রচার করতে হবে। বলা যায়, শব্দদূষণ রোধে প্রয়োজন ব্যক্তিগত, প্রযুক্তিগত এবং আইনগত কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে