রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা

উখিয়া প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ১১ আগস্ট, ২০২২ at ৬:০৮ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্প এডিস মশার প্রজনন স্পটে পরিণত হয়েছে। রোহিঙ্গা ও ক্যাম্প সংশ্লিষ্ট লোকজনের মাঝে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা আশংকাজনক। সোমবার পর্যন্ত ১০ হাজারের মত রোহিঙ্গা ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে এবং ৭ জনের মৃত্যু ঘটেছে ইতোমধ্যে। এ দিকে গতকাল বুধবার পর্যন্ত উখিয়া হাসপাতালে ১৫০ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। শনিবার উখিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে ২ জন। বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) একদিনে ভর্তি হয়েছে ৯ এপিবিএন পুলিশ সদস্য। ডেঙ্গু আক্রান্তের অধিকাংশ রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংশ্লিষ্ট জাতিসংঘের একাধিক সংস্থা, বিভিন্ন দেশী-বিদেশী এনজিওগুলোর সেবাকর্মী ও রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত এপিবিএন পুলিশ বলে উখিয়া হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।
কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন অফিসের স্বাস্থ্য সেবা শাখা সূত্রে জানা গেছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে মশাবাহিত ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। তবে বর্তমানে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতির দিকে বলে জানা গেছে। জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে (২৫-৩১) ক্যাম্পে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ২৫৩ জন। আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে (১-৭) আক্রান্ত হয়েছে ৫২০ জন রোহিঙ্গা।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন অফিসের স্বাস্থ্য সেবা শাখার প্রধান সমম্বয়কারী ড. ত্বোহা ভুঁইয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে মৌসুমী মশাবাহিত ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও নিয়ন্ত্রণহীন নয় বলে জানান। এ বছরের জানুয়ারি হতে ৭ আগস্ট পর্যন্ত উখিয়া ও টেকনাফের ক্যাম্পগুলোতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ৯ হাজার ৪৬০ জন রোহিঙ্গা। আক্রান্তদের প্রায় সুস্থ আছেন। তবে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৭ জন রোহিঙ্গা।
স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে, ঢাকার পরই সবচেয়ে ডেঙ্গু রোগী রয়েছে কক্সবাজারে। জেলাটিতে মৃত্যুও বেশি হয়েছে। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন অফিসের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ত্বোহা বলেন, কক্সবাজারে এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ রোহিঙ্গা ক্যাম্প কেন্দ্রিক। ক্যাম্পগুলোতে ১২০ বর্গফুটের একটি ঘরে গড়ে ৭/৮ জন মানুষ গাদাগাদি করে থাকে। স্বাভাবিকভাবেই একটি মশা একজনকে কামড়িয়ে অন্যদের শরীরে ডেঙ্গু জীবাণু ছড়িয়ে দেয়।
উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. রনজন বড়ুয়া বলেন, রোহিঙ্গাদের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাব আছে। সেখানে স্বল্প জায়গায় মাত্রাতিরিক্ত মানুষের বসবাস। পর্যাপ্ত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় সেখানে মশা জন্মানোর সুযোগ বেশি। রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংশ্লিষ্ট জাতিসংঘের একাধিক সংস্থা ও বিভিন্ন দেশী-বিদেশী এনজিওগুলোর সেবাকর্মীরা ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছেন।
তিনি জানান, এ ছাড়াও ক্যাম্প সংলগ্ন উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালী ও থাইংখালী এলাকার লোকজন ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছে। হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী গতকাল বুধবার পর্যন্ত উখিয়ায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ১৫০ জন। বুধবার উখিয়া হাসপাতালে ১৮ জন পরীক্ষা করেন। তন্মধ্যে ১ জন পজিটিভ বলে জানা গেছে। তাছাড়া আরো শতাধিক স্থানীয় লোক ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা নিচ্ছে বলে জানা গেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ্‌ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের নিয়মিত (৯ আগস্ট) ডেঙ্গু বিষয়ক প্রতিবেদনে জানানো হয়, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৯ আগস্ট পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতের মধ্যে কক্সবাজারের রয়েছে ৮ জন। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে (৯ আগস্ট) পর্যন্ত হাসপাতালে সর্বমোট রোগী ভর্তি হয়েছেন ৩ হাজার ৩১৬ জন।
সর্বমোট ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ২ হাজার ৯৪৫ জন। তাদের মধ্যে ঢাকায় সর্বমোট ছাড়প্রাপ্ত রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ৫০১ জন এবং ঢাকার বাইরে সর্বমোট ছাড়প্রাপ্ত রোগী ৪৪৪ জন।
ঢাকার পর সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ডেঙ্গু রোগী চট্টগ্রাম বিভাগে। তন্মধ্যে অধিকাংশ কক্সবাজার জেলার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধট্রাকের পেছনে বাসের ধাক্কা, চালক নিহত
পরবর্তী নিবন্ধহালদায় ভেসে উঠলো আরো একটি মা মাছ