রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপরাধ তৎপরতা রোধে সরকারকে কঠোর হতে হবে

| সোমবার , ২৫ অক্টোবর, ২০২১ at ৫:১৮ পূর্বাহ্ণ

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বাড়ছে অপরাধ কর্মকাণ্ড। চলছে অস্ত্র ও মাদকের আধিপত্য। বার্তা সংস্থা বিডিনিউজ বলেছে, অন্ধকার নামতেই রাখঢাক ছাড়াই অস্ত্র-মাদকের ব্যবহার গা সওয়া হয়ে গেছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। খুনোখুনিও নতুন কিছু নয়; তবে রোহিঙ্গা নেতা ও আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহ’র হত্যাকাণ্ড ক্যাম্পগুলোর নিরাপত্তার বিষয়টি নতুন করে সামনে এনেছে। কক্সবাজারে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী ক্যাম্পগুলোর অপরাধের সামপ্রতিক পরিসংখ্যানও সেদিকে ইঙ্গিত করছে। জেলার দুর্গম সব এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে ক্যাম্পগুলোতে পারিবারিক সংঘাত থেকে শুরু করে ডাকাতি যেমন হয়, তেমনি অপহরণ, মানবপাচার, ধর্ষণ বা পুলিশের উপর হামলার মতো অপরাধের খবর হরহামেশাই আসছে। মামলাও হচ্ছে সংশ্লিষ্ট থানায়। অপরাধের তালিকায় মাদক ও অস্ত্রের আধিপত্য রয়ে গেছে আগের মতোই। কিছুদিন আগে উখিয়ার পালংখালীর বালুখালী রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে অভিযান চালিয়ে ধারালো অস্ত্রসহ পাঁচজনকে আটক করেছে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন। আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যানের খুনের পর ক্যাম্পের বাসিন্দাদের অপরাধ প্রবণতা নিয়ে আবারও কথা হচ্ছে দেশের সর্বোচ্চ মহল থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও। প্রসঙ্গত, শুক্রবার ভোরে কঙবাজারের উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের ১৮ নম্বর ময়নার ঘোনা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একটি মাদ্রাসায় গুলি করে ও কুপিয়ে ৭ জনকে হত্যা করা হয়েছে। নিহতরা সবাই ওই ক্যাম্পের এইচ-৫২ ব্লকের দারুল উলুম নাদওয়াতুল ওলামা আল-ইসলামিয়াহ মাদ্রাসার শিক্ষক, ছাত্র এবং স্বেচ্ছাসেবী। এই সাতজন নিহতের ঘটনায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, রোহিঙ্গাদের মধ্যে যারা মিয়ানমারে ফেরত যেতে চায় না, তারা হয়তো এসব অঘটন ঘটাচ্ছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মাদক ও অস্ত্র ব্যবসা বন্ধে প্রয়োজনে গুলি ছোঁড়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন তিনি। গত শুক্রবার দুপুরে সিলেটের শাহী ঈদগাহে এক আলোচনা সভা শেষে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অব্যাহত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতিতে গত বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সভাপতিত্বে একটি বড় ধরনের সভা হয়েছে। এরপর শুক্রবারের দুর্ঘটনা খুবই আতঙ্কের বিষয়। ড. মোমেন বলেন, ওখানে মাদক ও অস্ত্র ব্যবসার তথ্য দিচ্ছেন অনেকে। কিছু বন্দুক-টন্দুকও আনা হয়। এ নিয়ে আলোচনা করা হবে। মাদক ও অস্ত্র পুরোপুরি বন্ধের জন্য প্রয়োজনে গুলি করার পরামর্শ দেওয়া হবে।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, ২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট থেকে চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চার বছরে এ দুটি থানায় রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে এক হাজার ৩৬৬টি মামলা হয়েছে। এগুলোতে আসামি করা হয় ২ হাজার ৩৪৮ জনকে। যাদের মধ্যে এক হাজার ৭৪৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। জেলা পুলিশের হিসাব বলছে, মূলত ১০ ধরনের অপরাধে এসব মামলা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- অস্ত্র, মাদক, ধর্ষণ ও ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ, অবৈধ অনুপ্রবেশ, অপহরণ, পুলিশের উপর হামলা, ডাকাতি ও ডাকাতির প্রস্তুতি, হত্যা এবং মানবপাচার। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হয়েছে মাদক মামলা, ৭০৬টি। ২০১৭ সালের পর থেকে ক্যাম্পগুলোতে মাদক অপরাধ বেড়েই চলেছে। পুলিশের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ওই বছরের শেষ চার মাসে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মাদক অপরাধে ২২টি মামলা হয়েছিল। গড় হিসেবে মাসে প্রায় ছয়টি করে মামলা। এরপর ২০১৮ সালে রোঙ্গিাদের বিরুদ্ধে ৯৫টি মাদক মামলা হয়। গড় হিসেবে মাসে প্রায় আটটি। ২০১৯ সালে মাদকের মামলার সংখ্যা দাঁড়ায় ১৫২টি; গড়ে মাসে প্রায় ১৩টি। ২০২০ সালে যা ছিল ২৫৬টি; গড়ে মাসে ২১ দশমিক ৩৩টি। চলতি বছরের আট মাসে (অগাস্ট পর্যন্ত) হয়েছে ১৮৪টি; গড়ে মাসে মামলার সংখ্যা ২৩টি। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো থেকে অস্ত্র উদ্ধার সংক্রান্ত মামলাও বেড়েছে বলে জানাচ্ছে পুলিশ।
রোহিঙ্গাদের মধ্যে অস্ত্রের বিস্তার নিয়ে গত ৩ অক্টোবর সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেন, মিয়ানমার থেকে বিভিন্নভাবে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পরিবেশ অস্থির করার জন্য এখানে অস্ত্র আসছে। অস্ত্র নিয়ে তাদের আধিপত্য বিস্তার করার জন্য বিভিন্ন গ্রুপের মারামারিও দেখেছেন। স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, প্রথমদিকে রোহিঙ্গাদের আচরণ আর বর্তমান আচরণের মধ্যে অনেক পার্থক্য দেখছি। আমাদের সাহায্য সহানুভূতিকেও তারা ভুলে গেছে। পুলিশের সঙ্গেও অনেকবার বাক বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়তে দেখেছি। পুলিশে অস্ত্র দেখালে তারা আরো সামনে এগিয়ে আসে। এখন পুলিশও তাদের ভয় পায়। কারণ, রোহিঙ্গা এখন অর্থনৈতিক দিক থেকে স্বাবলম্বী। তাদের কাছে এখন টাকা আছে। ব্যবস্থা আছে। অস্ত্রও আছে। শক্তিশালী যোগাযোগ আছে। রোহিঙ্গাদের এসব বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অসহায় পড়েছেন। তাই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপরাধ তৎপরতা রোধ করতে সরকারকে আরো কঠোর হতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে