রোহিঙ্গারা জড়াচ্ছে নানা অপরাধে

ভাষা পোশাক মিল থাকায় সমস্যা হচ্ছে না

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ১১ নভেম্বর, ২০২০ at ৪:৫৬ পূর্বাহ্ণ

ইয়াবা ব্যবসা, ডাকাতি, লুটপাটসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে রোহিঙ্গারা। অপরাধ জগতে আধিপত্য বজায় রাখতে রীতিমতো পাল্লা দিয়ে কিনছে অস্ত্র। চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষের ভাষা, পোশাক ও সংস্কৃতির সঙ্গে মিল থাকায় তাদের মিশতেও সমস্যা হচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে রোহিঙ্গা অপরাধীরা। প্রায়ই অভিযানে আটক হচ্ছে রোহিঙ্গা। তবু মাদক বহনকারী থেকে ইয়াবা ব্যবসায়ী হয়ে ওঠা রোহিঙ্গার সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও কোস্টগার্ডের কাছে অভিযোগ রয়েছে, মিয়ানমার থেকে ইয়াবা এনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে দিচ্ছে রোহিঙ্গা নারী, কিশোর ও পুরুষরা।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের তৈরি করা ইয়াবা কারবারিদের তালিকায়ও রয়েছে ১৩ জন নেতৃস্থানীয় রোহিঙ্গা শরণার্থীর নাম। সর্বশেষ গত রোববার র‌্যাব-৭ চট্টগ্রামের একটি বিশেষ টিমের অভিযানে চান্দগাঁও আবাসিকের বি-ব্লকের ৭৯ নম্বর বাড়ির দোতলার একটি ফ্ল্যাট থেকে ৫ হাজার পিস ইয়াবা ও ইয়াবা বিক্রির এক কোটি ১৭ লাখ টাকাসহ এক রোহিঙ্গা দম্পতিকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গতকাল দুপুরে ওই ভবনে গিয়ে প্রতিবেশীদের সাথে আলাপকালে তারা জানান, শওকত-মরজিনা দম্পতিকে দেখে কখনো বোঝা যায়নি তারা বাংলাদেশি নন। চট্টগ্রামের স্থানীয় বাসিন্দাদের মতোই ছিল তাদের চলাফেরা। তবে প্রতিবেশীদের সাথে তাদের মেলামেশা ছিল কম। রোহিঙ্গাদের ইয়াবা ব্যবসা প্রসঙ্গে র‌্যাব-৭ চান্দগাঁও ক্যাম্পের কমান্ডার ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট আলী আশরাফ তুষার বলেন, গ্রেপ্তারকৃত শওকত মিয়ানমার ও কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পভিত্তিক ইয়াবা সিন্ডিকেটের সদস্য। কক্সবাজার থেকে সরাসরি ইয়াবা নিয়ে এসে ব্যবসা করতেন তিনি। এ কাজে তাকে সহায়তা করতেন মরজিনা। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে ইয়াবা ব্যবসার জন্য তারা তিন-চার মাস পরপর বাসা পরিবর্তন করতেন। সর্বশেষ চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার বি-ব্লকের ৭৯ নম্বর বাড়িতে তাদের অবস্থান জানতে পেরে তাদেরকে আটক করা হয়। এ সময় টাকার বান্ডিল জানালা দিয়ে ফেলে পালানোর চেষ্টা করেন তারা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, রোহিঙ্গারা আসার পর মেথাফেটামাইন ও ক্যাফেইনের মিশ্রণে তৈরি ইয়াবার পাচার বেড়ে গেছে। যে কারণে ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৭-২০ সালে অনেক বেশি ইয়াবার চালান ও পাচারকারী ধরা পড়েছে। এসব মামলায় চার বছরে কয়েকশ আসামি ধরা পড়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তালিকায়ও রয়েছে রোহিঙ্গাদের নাম।
চান্দগাঁও আবাসিকের বি ব্লকের যে ভবনটিতে র‌্যাব অভিযান চালিয়েছিল সে ৭৯ নম্বর বাড়ির কেয়ারটেকার আমানউল্লাহ জানান, মাস তিনেক আগে টু-লেট দেখে শওকত ফোন করে বাসাটি ভাড়া নিতে চান। নিজের বাড়ি সাতকানিয়া এবং তিনি নগরীতে ব্যবসা করেন বলে জানান। পরে দুই মাসের টাকা অগ্রিম দিয়ে বাড়ি ভাড়া নেন। এখানে নিয়ম রয়েছে, যিনি বাড়ি ভাড়া নেবেন তার ও বাড়িতে থাকা অন্য সদস্যদের কিছু কাগজপত্র আবাসিক কমিটির কাছে জমা দিতে হয়। সেগুলো দিয়েছিলেন শওকত। পরে র‌্যাব কাগজগুলো যাচাই করে ভুয়া বলে জানায়।
চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষের ভাষা, পোশাক, চলাফেরা ও সংস্কৃতির সঙ্গে মিল থাকায় রোহিঙ্গাদের মিশতে সমস্যা হচ্ছে না। আগে থেকে চট্টগ্রাম নগরী ও বিভিন্ন উপজেলায় রোহিঙ্গাদের বসবাস ছিল। ভিক্ষার পাশাপাশি তারা মজুরের কাজ করত। প্রথম দিকে এই রোহিঙ্গারা ইয়াবা পাচারকারী হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এখন নিজেরাই ব্যবসায়ী বনে গেছে। এ ক্ষেত্রে পুরনো শরণার্থীরাও তাদের সহায়তা করছে।
জানা যায়, কক্সবাজারের টেকনাফ এবং উখিয়ার আশ্রয় শিবিরগুলোতে আধিপত্য বজায় রাখতে ইয়াবার বিনিময়ে অস্ত্র সংগ্রহ শুরু করেছে রোহিঙ্গারা। ২০ থেকে ৩০ হাজার ইয়াবা ঢাকায় পৌঁছে দেওয়ার বিনিময়ে মিলছে বিদেশি পিস্তল। অস্ত্র ও গুলিসহ ২ ক্যারিয়ারকে আটকের পর চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য পেয়েছে পুলিশ। রোহিঙ্গাদের ব্যবহৃত অস্ত্রের উৎসের সন্ধানে নেমে ৪ নভেম্বর নগরীর বাকলিয়া এলাকায় মার্কিন পিস্তল ও ২টি ম্যাগজিনসহ আটক করে রাজ্জাক নামে এক রোহিঙ্গাকে। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে আটক করা হয় কামাল নামে আরেকজনকে।
বাকলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন বলেন, কামালকে গ্রেপ্তার করার পরে জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, তারা ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার ইয়াবার বিনিময়ে অস্ত্র নিয়ে এসে রোহিঙ্গাদেরকে সরবরাহ করে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআন্দরকিল্লায় চসিকের জায়গা থেকে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ
পরবর্তী নিবন্ধযুবলীগের ৪৮ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ