রোহিঙ্গাদের জন্য অনুদান চাহিদায় ঘাটতি ৪২০০ কোটি টাকা

আজ আন্তর্জাতিক ভার্চুয়াল কনফারেন্স

উখিয়া প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ২২ অক্টোবর, ২০২০ at ৮:৫৬ পূর্বাহ্ণ

চলতি বছরে বাংলাদেশের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আর্থিক অনুদান সংকট তৈরি হয়েছে বলে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে। এ বছর রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের জন্য ১ বিলিয়ন ডলারের চাহিদার অর্ধেকেরও কমে প্রতিশ্রুতি মিলেছে। বাংলাদেশে আশ্রিত প্রায় ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাদের নানা খাতে ব্যয় সংকট মিটাতে আজ বৃহস্পতিবার জাতিসংঘে অনুষ্ঠিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক ভার্চুয়াল কনফারেন্স।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর বাংলাদেশে আশ্রয় ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের নিকট ১০০ কোটি বা এক বিলিয়ন ডলারের চাহিদা উপস্থাপন করা হয়েছিল। কিন্তু বছরের অর্ধেক পেরিয়ে গেলেও এপর্যন্ত চাহিদার অর্ধেক অর্থেরও সংস্থান হয়নি। জানা যায়, রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় চাহিদার অর্ধেকের বেশি অর্থাৎ বাংলাদেশি মুদ্রায় ৪ হাজার ২৪২ কোটি টাকার মত আর্থিক অনুদান সংকট রয়েছে। অনুদানের অর্থ সংগ্রহ না হওয়ায় ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের খাবার, স্বাস্থ্যসেবা এবং অন্যান্য সহায়তা প্রদানে সংকট তৈরি হবে বলে ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে। এমন পরিস্থিতি জাতিসংঘের এ সংস্থাটি বুধবার জানায়, অনুদানের চাহিদা অর্জনে আজ বৃহস্পতিবার দাতাদের নিয়ে বড় একটি অনলাইন কনফারেন্স করতে যাচ্ছেন তারা।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর জানায়, ‘রোহিঙ্গাদের প্রতি সংহতি জানানোর মানে হচ্ছে, তাদের প্রাথমিক চাহিদা পূরণের চেয়ে বেশি কিছু করা।’ ‘অন্যান্য মানুষের মতো শরণার্থীদেরও মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপন করার অধিকার রয়েছে এবং একটি নিরাপদ ও স্থিতিশীল ভবিষ্যত গড়ার সুযোগ রয়েছে।’
বুধবার ইউএনএইচসিআর কঙবাজার অফিসের কমিউনিকেশন অফিসার লুইস ডোনিভান জানান, অনলাইন কনফারেন্স সম্পর্কিত সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তরের ব্যবস্থা রয়েছে। বাংলাদেশ সময় রাত ৯ টায় এ সম্পর্কিত প্রশ্ন জমা দেয়া যাবে এবং টেলিফোনিক উত্তর প্রদান করা হবে।
সাংবাদিকদের টেলিফোনিক অনলাইন প্রশ্নোত্তর দেবেন ৪ জনের কো-প্যানেল। কো-প্যানেলে থাকবেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট বিভাগের জনসংখ্যা, শরণার্থী ও অভিবাসন বিষয়ক উপ সহকারী সচিব রিচার্ড অলব্রাইট, যুক্তরাজ্যের উইম্বলডনের দক্ষিণ এশিয়া, বিদেশ ও কমনওয়েলথ বিষয়ক মন্ত্রী লর্ড আহমেদ, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কমিশনার জেনে বেনারসি ও ইউএনএইচসিআর এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পরিচালক চন্দ্রিকা রাতওয়াত্তে।
২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানে দেশটি থেকে রোহিঙ্গা মুসলিম সংখ্যালঘুর সাড়ে সাত লাখের মতো মানুষ বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এর আগেও, মিয়ানমার সরকারের রোষানলে পড়ে রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গারা পালিয়ে এসেছিল বাংলাদেশে। সব মিলিয়ে ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা কঙবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪ টি আশ্রয় ক্যাম্পে অবস্থান করছে। যদিও ইউএনএইচসিআর বলছে, ৮ লাখ ৬০ হাজারের মতো রোহিঙ্গা কঙবাজারের শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী ক্যাম্প এখন কঙবাজারের উখিয়ার কুতুপালংয়ে। এছাড়া দেড় লাখের মতো রোহিঙ্গা মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে। ৬ লাখের মতো রোহিঙ্গা এখনো মিয়ানমারেই আছে, যাদের মধ্যে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাদের অবস্থান এখন সরকারি ও আইডিপি ক্যাম্পগুলোতে।
ইউএনএইচসিআর জানায়, আজকের কনফারেন্সে সংগৃহিত অনুদান রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানকারী দেশগুলোকে ‘জরুরি সেবা’ প্রদানে সহায়তা করবে বলে আশা প্রকাশ করা হচ্ছে। সংস্থাটি জানায়, তারা এই শরণার্থী সমস্যার আরও টেকসই সমাধানের প্রতি জোর দেবে। যাতে স্বেচ্ছায়, নিরাপদে এবং সম্মানের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন হয়। ২০১৮ সালের নভেম্বরে ও ২০১৯ সালের আগস্টে দুই দফায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।এরআগে ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর প্রত্যাবাসন চুক্তিতে স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার।
২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি ‘বাস্তবিক ব্যবস্থা’ সম্পর্কিত এক নথিতে স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ এবং মিয়ানমার, যার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেয়া হবে বলে মনে করা হয়েছিল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম জিপিও’র দুই কর্মকর্তা কর্মচারীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
পরবর্তী নিবন্ধঅনেকদিন পর আবার বন্দুকযুদ্ধ রোহিঙ্গা ইয়াবা কারবারি নিহত