রেল ভ্রমণের সময় আমরা সতর্ক থাকি ?

রশীদ এনাম | শনিবার , ১৫ জানুয়ারি, ২০২২ at ৬:২১ পূর্বাহ্ণ

ইদানীং চলন্ত ট্রেনে পাথর ছুঁড়া/নিক্ষেক করা একটি ব্যাধি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক কাজটি বেশি ঘটছে স্টেশেনের আশে পাশে কিংবা বস্তি এলাকায়। টোকাই, সুবিধাবঞ্চিত শিশু, কিশোর গ্যাং, মাদকাসক্ত লোকজন এ কাজটি করে চলেছে। কু ঝিক ঝিক ক ুঝিকঝিক করে ছুটে চলেছে ট্রেন।মাঝ পথে হঠাৎ ধপাস করে বাহির থেকে পাথর এসে পড়ল মাথায়, ফিনিক দিয়ে রক্তাক্ত হলো শরীর! একবার ভাবুন যাত্রা পথে যদি এসব পরিস্থিতিতে পড়তে হয় কেমন লাগে? চলন্ত ট্রেনে পাথর ছোঁড়ে মারার ঘটনাটি দেশে নতুন নয়।
ট্রেন যাত্রায়ও আজকাল নিরাপত্তা বা নিরাপদ নয়। নিরাপদ যাত্রার জন্য ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে সুবর্ণ এঙপ্রেস, সোনার বাংলায় ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে আসাযাওয়া করে দেশের প্রথম শ্রেনীর মানুষ। নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থা যদি হয় গোধের উপর বিষ ফোঁড়া তাহলে কেমন লাগে? বাংলদেশ রেলওয়ে পুলিশের কর্মকর্তা রেলওয়ে নিরাত্তা কর্মীরাও রেহাই পাইনি পাথর খাওয়া থেকে। শিশু থেকে শুরু করে যুবক যুবতি বৃদ্ধা কেউ রেহাই পাচ্ছে না। পাথর ছোড়ে মারার হট স্পট কিংবা পাথর নিক্ষেপের জায়গাগুলো এখনই চিহ্নিত করা জরুরী। আমরা যারা নিয়মিত ট্রেনে ভ্রমণ করি আমাদেরও সতর্ক থাকা উচিত অনেকে ট্রেনের বাহিরে মাথা রেখে সেলফি তুলে হাত রাখে বাহিরে পাথর ছোড়া চিহ্নিত জায়গাগুলোর কাছ ট্রেন আসলে সাথে সাথে ট্রেনের শাটার বা জানালা বন্ধ করে দেয়া উচিত।
দেশের পনেরটির বেশি জায়গা আছে যেখানে প্রায় সময় চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ করে পালিয়ে যায় কিছু বিপদগামী শিশু ও কিশোর। পাথর ছোড়াটা ওদের কাছে ক্ষণিক আনন্দের। কিন্তু তারা জানে না ছোড়ে মারা ছোট পাথর অনেক পরিবারের জন্য সারা জীবনের জন্য কান্নার। চট্টগ্রামের ২নং গেট রেলক্রসিং, পাহাড়তলী, ভাটিয়ারী, বাড়বকুন্ডু, কুমিল্লা, ফেনীর ফাজিলপুর, কালদহ, নরসিংদী, জিনারদী, ঘোড়াশাল, চুয়াডাঙ্গা, সিরাজগঞ্জ,নীলফামারীর সৈয়দপুর, আক্কেলপুর, উল্লাপাড়া, যমুনা সেতু, খুলনার ফুলতলা, বেনাপুল ইত্যাদি এলাকায় বিভিন্ন সময়ে চলন্ত ট্রেনে পাথর ছোড়ার ঘটনা ঘটেছে অহরহ। গত রবিবার ৯জানুয়ারি, ২০২২ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ছাত্র কৌশিকপাল শাটল ট্রেনে করে সন্ধ্যায় শহরের ফিরছিল ২নং গেট রেলক্রসিং এলাকায় চলন্ত ট্রেনে টোকাইদের ছোরা পাথরের আঘাতে মারাত্বকভাবে আহত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেলে ভর্তি হন। এই ব্যাধি থেকে জাতি পরিত্রাণ চাই এ জন্য চাই জনসচেতনতা। সর্বাঙ্গে ব্যথা ঔষধ দিব কোথা ভেবে বসে থাকলে চলবে না। পাথর ছোড়ার এলাকাগুলো চিহ্নিত করে ঐ এলাকায় সচেতনতামূলক বিভিন্ন ক্যাম্পিং, মাইকিং, বস্তি এলাকায় সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে মানববন্ধন, কাউন্সিলিং, স্বেচ্ছাসেবক দিয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম করে বিপথগামী শিশুদের বুঝাতে হবে। রেল লাইনের আশে পাশে গড়ে ওঠা ভাসমান বস্তিগুলো ক্রাইমজোন হিসেবে পরিচিত। বিভিন্ন এলাকায় খুন ছিনতাই, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড, গাঁজা, মাদক ও ইয়াবা, আইস ব্যবসা এসব বস্তি এলাকায় থেকে হয়ে থাকে। চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ একটি দণ্ডনীয় অপরাধ। রেলওয়ে আইনে ১২৭ ধারা অনুযায়ী সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং ৩০২ ধারা অনুযায়ী পাথর নিক্ষেপে কারও মৃত্যু হলে মৃত্যুদণ্ডের বিধান আছে। আসুন আমরা সচেতন হই চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ কারীদের ধরিয়ে দিই।
লেখক : প্রাবন্ধিক

পূর্ববর্তী নিবন্ধশীতার্তদের মাঝে ছড়িয়ে দেই উষ্ণতার ছোঁয়া
পরবর্তী নিবন্ধকখনো কখনো ঝড়ের আঘাতে