রেলের যন্ত্রাংশ চুরি কিংবা নিরাপত্তার বিষয়ে কর্তৃপক্ষ দায় এড়াতে পারে না

| সোমবার , ১৫ নভেম্বর, ২০২১ at ৬:১৫ পূর্বাহ্ণ

পরিত্যক্ত বগি বিভিন্ন রেলস্টেশনে খোলা আকাশের নিচে রোদ-বৃষ্টিতে পড়ে নষ্ট হচ্ছে। কোটি কোটি টাকার সেসব সম্পদের বিষয়ে কর্তৃপক্ষের খুব একটা নজর আছে বলে মনে হয় না। খোলা আকাশের নিচে সেগুলো পড়ে থাকায় সুযোগ সন্ধানীরা তা ব্যবহার করছে। খুলে নিয়ে যাচ্ছে মূল্যবান যন্ত্রাংশ। তাছাড়া সেসব বগি পরিণত হয়েছে মাদকসেবীর নিরাপদ আশ্রয়স্থলে। সেগুলো ঘিরে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চলছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আমরা কেবল শুনি, প্রতি বছর রেল লোকসান গোণে। তবু কোটি কোটি টাকার ওই সম্পদের বিষয়ে কোনো উদ্যোগী হচ্ছে না রেল কর্তৃপক্ষ। অথচ দরপত্রের মাধ্যমে সেসব বগি বিক্রি করে কিছু টাকা আয় করার সুযোগ থাকলেও অদৃশ্য সুতোর টানে তা থেমে আছে। ফলে আস্তে আস্তে নষ্ট হচ্ছে সেসব পরিত্যক্ত বগি ও মূল্যবান যন্ত্রাংশ। তাছাড়া বগিগুলো বছরের পর বছর রেখে দেয়ায় জং ধরে নষ্ট হচ্ছে রেললাইনও। অনেক জায়গায় রেললাইন দেবে গেছে।
গত ১৩ নভেম্বর দৈনিক আজাদীতে ‘কেন অযত্ন, কার অবহেলা/রেলের কোটি কোটি টাকার বগি বছরের পর বছর পড়ে আছে খোলা আকাশের নিচে/নষ্ট হচ্ছে সংরক্ষণের অভাবে, চুরি হচ্ছে যন্ত্রাংশ’ শীর্ষক একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হযেছে, রেলের কোটি কোটি টাকার বগি খোলা আকাশের নিচে বছরের পর বছর পড়ে আছে। যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট যেমন হচ্ছে, তেমনি চুরিও হচ্ছে। এতে রেলওয়ে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চিটাগাং গুডস পোর্ট ইয়ার্ড (সিজিপিওয়াই) এলাকাসহ পাহাড়তলী বিভিন্ন ডিপো এবং ষোলশহর এলাকায় শত শত পুরনো বগি পড়ে আছে অরক্ষিত অবস্থায়। বিশেষ করে চট্টগ্রাম বন্দর সংলগ্ন এবং রেলওয়ে ট্রেনিং একাডেমির পাশে সিজিপিওয়াই এলাকায় সবচেয়ে বেশি বগি এবং রেলওয়ের যন্ত্রাংশ অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে।
রেলের এসব পুরনো বগিসহ সকল প্রকার যন্ত্রাংশ দেখা শোনা এবং বিক্রি করার দায়িত্বে রয়েছে সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অবহেলায় কোটি কোটি টাকার রেলের যন্ত্রাংশ চুরির একাধিক সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। সরেজমিনে খবর নিয়ে জানা গেছে, রেলওয়ের হালিশহর এলাকায় ৫ থেকে ৬ কিলোমিটার এরিয়া নিয়ে সিজিপিওয়াই ইয়াডের্র অবস্থান। এটি বাংলাদেশ রেলওয়ের (পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চল) রাজস্ব আয়ের প্রধান মাধ্যম। চট্টগ্রাম বন্দরে রেলওয়ের মাধ্যমে পরিবহনকৃত সমস্ত পণ্য-কন্টেনার-সিজিপিওয়াই ইয়ার্ড হয়ে সারাদেশে যায়। এই ইয়ার্ডের পুরো এলাকাটিই অরক্ষিত। এলাকার কোথাও কোনো সীমানা প্রাচীর নেই। নেই পর্যাপ্ত লোকবলও। এতো বিশাল-গুরুত্বপূর্ণ ইয়ার্ডটি চলছে শুধুমাত্র স্বল্প সংখ্যক লোকবল নিয়ে। সীমানা প্রাচীর না থাকায় পুরো এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
এই ব্যাপারে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর চট্টগ্রাম বিভাগের কমান্ড্যান্ট মো. শফিকুল ইসলাম আজাদীকে জানান, সিজিপিওয়াই হচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ের রাজস্ব আয়ের হৃদপিণ্ড। এখান থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের সকল কন্টেনারবাহী ট্রেন পরিচালিত হয়। এছাড়াও এই ইয়ার্ডের চারপাশে রেলওয়ের শত শত পুরনো বগিসহ কোটি কোটি টাকার লোহা জাতীয় জিনিস রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এই এরিয়ার চারপাশে অনেক আগেই সীমানা প্রাচীর দেয়া উচিত ছিল। এখানে পর্যাপ্ত লাইটিং এবং জনবলেরও ঘাটতি রয়েছে। আমরা বারবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সীমানা প্রচীর নির্মাণের জন্য চিঠি দিয়েছি, এতোদিনে হয়ে যেতো। করোনার কারণে গত দুই বছর সকল কাজ-কর্ম থমকে ছিল। তবে আশা করছি এবার খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে।
এ কথা ঠিক যে, সীমানা প্রাচীর না থাকায় রেলওয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই ইয়ার্ডের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের অনেক কষ্ট হয়। তারপরও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে দিন-রাত সমান তালে রেলওয়ের সম্পদ রক্ষা ও নিরাপত্তায় কাজ করে যাচ্ছেন। তবে পাহাড়তলী রেলওয়ে সেইল ডিপো থেকে নিয়মিতই রেলের দামি দামি যন্ত্রাংশ পাচার হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে এবং পাচার কাজের সাথে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা যুক্ত থাকার অভিযোগ প্রমাণিতও হয়েছে। ফলে সেইল ডিপোর এক দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বহিষ্কারও করা হয়েছে। তারপরও থেমে থাকেনি চুরি। প্রতিনিয়তই রেলের এসব পুরনো যন্ত্রাংশ চুরি হচ্ছে। এটা খুবই দুঃখজনক। এ বিষয়ে সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে। কেননা যন্ত্রাংশ চুরি কিংবা নিরাপত্তার বিষয়ে কর্তৃপক্ষ দায় এড়াতে পারে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে