রেলের জায়গায় সৌন্দর্যবর্ধন করতে আগ্রহী চসিক

মেয়রের প্রস্তাবে রেলমন্ত্রীর সায়

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ৪ জানুয়ারি, ২০২২ at ৬:৪৮ পূর্বাহ্ণ

রেলওয়ের জায়গায় সৌন্দর্যবর্ধন করতে চায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর এমন প্রস্তাবে সায় দিয়েছেন রেলপথ মন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজন।
গতকাল সোমবার সকালে রাজধানীর রেলভবনে রেলপথ মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন সিটি মেয়র। এসময় তিনি সৌন্দর্যবর্ধন ছাড়াও পূর্ব মাদারবাড়িতে ৭ দশমিক ২৪ একর ভূমি নিয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে চসিকের চলমান মামলা আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের প্রস্তাব দেন। তাতে সম্মতি জানিয়ে রেলপথ মন্ত্রী বিস্তারিত তুলে ধরে দাপ্তরিক পত্র দেয়ার পরামর্শ দেন মেয়রকে।
বৈঠকে উপস্থিত রেলপথ মন্ত্রণালয় এবং চসিকের একাধিক কর্মকর্তা দৈনিক আজাদীকে জনিয়েছেন, মেয়র আগ্রাবাদ ডেবা, জোড় ডেবা, ভেলুয়ার দীঘি, পলোগ্রাউন্ড কলোনি মাঠ এবং শেখ রাসেল পার্কের পাশে সৌন্দর্যবর্ধন করার আগ্রহ প্রকাশ করেন মন্ত্রীর কাছে।
এ সময় মেয়র বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়ের পরিত্যক্ত ভূমিতে কিছু খেলার মাঠ, ওয়াকওয়ে ও সাইক্লিং ট্রেক এবং কিছু জলাধারে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও বিনোদনের উপাদান সংবলিত প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করেছি। এসময় আগ্রাবাদ ডেবায় আর্ট গ্যালারি অথবা চিত্রশালা, প্লাজা, পাবলিক ক্যাফে, বোটিং ডেক, পাবলিক ওয়াকওয়ে, ফাউন্টেইন অথবা ওয়াটার বডি, স্কাই ওয়াক করতে চাই।
এছাড়া জোড় ডেবায় আর্ট গ্যালারি অথবা চিত্রশালা, কালচারাল হাব অথবা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, খেলার মাঠ, অ্যাম্ফিথিয়েটার, দর্শনার্থীদের বসার জায়গা, প্লাজা, ওয়াকওয়ে, ৩৬০ ডিগ্রি ভিউ ডেক এবং পলোগ্রাউন্ড কলোনী মাঠকে শিশু ও মহিলাদের আলাদা খেলার মাঠ, আলাদা বাই-সাইকেল লেইন, ওয়াকওয়ে করার প্রস্তাব দেন।

একইভাবে ভেলুয়ার দীঘিতে কালচারাল হাব বা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, প্লাজা, বোটিং ডেক, পাবলিক ওয়াকওয়ে, ফাউন্টেইন বা ওয়াটার বডি, বসার জায়গা, শেখ রাসেল পার্কের পাশের মাঠে খেলার মাঠ, শিশুদের খেলার জন্য বালুর মাঠ গ্যালারি, শহীদ মিনার আধুনিকায়ন, পাবলিক ওয়াকওয়ে নির্মাণের ইচ্ছে পোষণ করেন। এক্ষেত্রে রেলওয়ের মালিকানা অক্ষুণ্ন রেখে শুধুমাত্র নগরবাসীর জন্য গণপরিসর সৃষ্টির মানসে প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা বলেন।
এসময় রেলপত্র মন্ত্রী বলেন, সৌন্দর্যবর্ধন বাণিজ্যিকভাবেও করা যায়। রেলওয়ে পরিত্যক্ত জায়গা বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করে কিভাবে আয় বাড়ানো যায় এবং রেলকে লাভবান করা যায় সে পরিকল্পনা করছে। তখন মেয়র বলেন, আমাদের মালিকানার দরকার নেই। শুধু আমরা সৌন্দর্যবর্ধনের প্রকল্প নেব। যদি রেলের বাণিজ্যিকভাবে করার চিন্তা থাকে যৌথভাবে আলোচনা করে সেটাও করা যাবে। এরপর মন্ত্রী বিস্তারিত তুলে পত্র আকারে প্রস্তাব দেয়ার কথা বলেন মেয়রকে।
এদিকে ১৯৯৬ সালের ১৬ অক্টোবর রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল নগরের মাদারবাড়ি এলাকার ৭ দশমিক ২৪ একর ভূমি বিক্রয়ের দরপত্র আহ্বান করে। এতে অংশ নিয়ে চসিক সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ১৩ কোটি ৯৩ লাখ ২১ হাজার ২২০ টাকা ৬০ পয়সায় ভূমিটি বরাদ্দ পায়। চসিক দুই কিস্তিতে ৩ কোটি ৯৮ লাখ ৩০ হাজার ৩৩০ টাকা রেলকে প্রদান করে। পরে তৎকালীন মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী রেলকে অবশিষ্ট টাকা দিতে অস্বীকার করেন। ওই সময় রেলের কাছে কর বাবদ ৬৩ কোটি টাকা পাওনা ছিল। মহিউদ্দিন চৌধুরী সে টাকা ভূমির সঙ্গে সমন্বয় করতে প্রস্তাব দিলে রেল তাতে সম্মত হয়নি। পরে রেলওয়ে টাকা না দেয়ায় চসিকের বরাদ্দ বাতিল করে দেয়। তখন রেলের বিরুদ্ধে মামলা করে চসিক। মাঝখানে ওই ভূমিতে পোর্ট সিটি হাউজিং নামে প্রকল্প গ্রহণ করে ৪০ জনকে বরাদ্দ দেয়। মামলাটি এখনো নিষ্পত্তি হয়নি।
গতকালকের বৈঠকে মামলাটি নিয়েও কথা বলেন মেয়র। বিষয়টিও সমাধানের আশ্বাস দেন রেলপথ মন্ত্রী। রেলমন্ত্রীর সঙ্গে কি আলাপ হয়েছে জানতে চাইলে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, আগ্রাবাদ ডেবা, জোড় ডেবা, ভেলুয়ার দীঘি এবং শাহাজান মাঠে সৌন্দর্যবর্ধনের প্রস্তাব করেছি। তিনি সম্মতি জানিয়েছেন এবং সরাসরি অফিসিয়ালি প্রস্তাব দিতে বলেছেন। তিনি বিষয়গুলো ইতিবাচকভাবে নিয়েছেন এবং উদ্যোগগুলো ভাল বলে মন্তব্য করেন।
মামলা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মেয়র বলেন, আমি বলেছি মামলা-মোকাদ্দমার দরকার নেই। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে যেন সুরাহা করা হয়। এর প্রেক্ষিতে রেলপথ মন্ত্রী সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিতে বলেছেন। বিষয়টি নিয়ে বসে সমাধানেরও আশ্বাস দেন তিনি।
বৈঠকে উপস্থিত মেয়রের একান্ত সচিব আবুল হাশেম দৈনিক আজাদীকে বলেন, রেল মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে দুটো বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রথমত মাদারবাড়িতে জায়গা নিয়ে যে মামলা চলছে সেটা তুলে কিভাবে সমাধান করা যায়। দ্বিতীয়ত রেলের জায়গায় সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প। দুটো বিষয়ে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। তিনি আমাদের চিঠি দিতে বলেছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরামগড়ে শোবার ঘর থেকে মা-মেয়ের লাশ উদ্ধার
পরবর্তী নিবন্ধফুট ওভারব্রিজ নেই, তাই যত দুর্র্ভোগ