রেমিট্যান্স পাঠানোর রেকর্ড ধরে রাখতে হবে

| মঙ্গলবার , ২৬ এপ্রিল, ২০২২ at ৬:৩০ পূর্বাহ্ণ

প্রবাসীদের ঘাম ও শ্রমে ঋদ্ধ হচ্ছে বাংলাদেশ। হয়ে উঠছে উন্নয়নের কিংবদন্তি। বিশ্বের কাছে উন্নয়নের অতুলনীয় দৃষ্টান্ত।

যখনই দেশের অর্থনীতির সমৃদ্ধির কথা আসে, তখন একবাক্যে প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো রেমিট্যান্সের কথা আগে বলতে হয়। দেশের উন্নতি ও অগ্রগতির প্রধান সোপান রেমিট্যান্স। অর্থনীতিতে অক্সিজেনের মতো ভূমিকা রাখছে প্রবাসীরা। স্বাধীনতার পর মাত্র ৭৮৬ কোটি টাকার বাজেট ৭৬৮ গুণ বেড়ে এখন ছয় লাখ তিন হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ ও উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে প্রবাস আয়।

প্রবাসীরা তাঁদের পরিবার ও প্রিয়জনদের ছেড়ে দিন-রাত পরিশ্রম করে তাঁদের উপার্জনের বেশির ভাগ দেশে পাঠান। এর ওপর ভিত্তি করেই আজ দেশের সমৃদ্ধি এসেছে। কিন্তু ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত বিদেশে কর্মরত মানুষের সংখ্যা ছিল মাত্র ১৪ হাজার, এখন তা প্রায় এক কোটি। ১৯৮৬-৮৮ সালে প্রবাস আয় ছিল মাত্র ৪৯ মিলিয়ন ডলার, কিন্তু ২০২০ সালে বাংলাদেশে এসে দাঁড়ায় ২২ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ এক লাখ আট হাজার কোটি।

মার্কিন থিংক ট্যাংক ওয়েলথ-এক্সের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এটা শুধু জিডিপি প্রবৃদ্ধি নয়, অত্যন্ত সমৃদ্ধ প্রবৃদ্ধির দিক থেকেও বাংলাদেশ বিশ্বের অনেক দেশের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। আমেরিকা, কানাডা, ইংল্যান্ড, জাপান, হংকং, চীন, ভারতসহ ধনীর সংখ্যা বৃদ্ধির দিক থেকে বিশ্বের অনেক দেশের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ। গত এক দশকে বাংলাদেশে ধনীদের সংখ্যা গড়ে ১৪.৩ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, যার মোট সম্পদের পরিমাণ পাঁচ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি। আগামী কয়েক দিন পর ঈদুল ফিতর। এই পবিত্র ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।

পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, ঈদে নিজ পরিবারের বাড়তি খরচের চাহিদা মেটাতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত বাংলাদেশিরা গত ২১ দিনে ১২ হাজার কোটি টাকার বেশি দেশে পাঠিয়েছেন। ঈদের আগ মুহূর্তে মাসের বাকি দিনগুলোতে এ সংখ্যা ১৭ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মাস এপ্রিলের প্রথম ২১ দিনে দেশে ১৪০ কোটি ৭০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ৮৬ টাকা ২০ পয়সা) এর পরিমাণ ১২ হাজার ১২৮ কোটি টাকার বেশি। চলমান ধারা অব্যাহত থাকলে মাসের শেষে প্রবাসী আয়ের পরিমাণ ২০০ কোটি ডলার বা ১৭ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবশেষ তথ্যমতে, আলোচিত সময়ে রাষ্ট্র মালিকানাধীন পাঁচ ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ২৬ কোটি ৪৫ লাখ মার্কিন ডলার, বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে ১১১ কোটি মার্কিন ডলার, বিদেশি ব্যাংকের মাধ্যমে ৪৭ লাখ মার্কিন ডলার এবং বিশেষায়িত ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে দুই কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স। একক ব্যাংক হিসেবে সবচেয়ে বেশি ৩১ কোটি ৮ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। এরপরে রয়েছে ডাচ বাংলা ব্যাংক, ১৯ কোটি ১ লাখ ডলার, অগ্রণী ব্যাংকে ৯ কোটি ৫২ লাখ, সোনালী ব্যাংকে ৮ কোটি ১৩ লাখ ডলার এবং ব্যাংক এশিয়ায় ৭ কোটি ১১ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। এর আগে গত মার্চ মাসে প্রবাসীরা ১৮৬ কোটি ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠান। যা আগের মাস ফেব্রুয়ারির চেয়ে ২৪ শতাংশ বা ৩৬ কোটি ৫৫ লাখ ডলার বেশি ছিল। ফেব্রুয়ারিতে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৪৯ কোটি ডলার।

বলা বাহুল্য, বাংলাদেশ ৮ম বৃহত্তম রেমিট্যান্স গ্রহণকারী দেশ এবং ৬ষ্ঠ বৃহত্তম অভিবাসী প্রেরণকারী দেশ। এমন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)। ফ্ল্যাগশিপ ওয়ার্ল্ড মাইগ্রেশনও তাদের একটি রিপোর্ট ২০২২ প্রকাশ করেছে। যাতে দেখা যায়- দুর্যোগ, সংঘর্ষ ও সহিংসতায় অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতি নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এমন একটি সময়ে যখন কোভিড-১৯ এর কারণে ভ্রমণে সীমাবদ্ধতায় বিশ্বব্যাপী গতিশীলতা স্থবির হয়ে পড়েছে। প্রতিবেদনটি গত দুই বছরের অভিবাসনের অগ্রগতির উপর নজর দিয়ে ঐতিহাসিক এবং সমসাময়িক কারণগুলো বিবেচনায় নিয়ে বিশ্লেষণ প্রদানের উপর জোর দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালে বিশ্বে প্রায় ২৮১ মিলিয়ন আন্তর্জাতিক অভিবাসী ছিল। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২০ সালে ৭.৪০ মিলিয়ন বাংলাদেশী অভিবাসী বাস করত বিদেশে। দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বসবাস করা সত্ত্বেও বাংলাদেশের প্রবাসীরা দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বৈদেশিক মুদ্রার প্রভাব সর্বদাই ইতিবাচক। প্রবাস থেকে রেমিট্যান্স পাঠানোর এ রেকর্ড যে কোনোভাবে ধরে রাখতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে