রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বাড়াতে বিকল্প উদ্যোগ নিতে হবে

| বুধবার , ৯ নভেম্বর, ২০২২ at ৫:৫৬ পূর্বাহ্ণ

প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ, যাকে বলা হয়ে থাকে রেমিট্যান্স, তা আমাদের জাতীয় আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস। অর্থনীতিবিদরা বলেন, জাতীয় বাজেটের প্রায় এক-তৃতীয়াংশেরই জোগান আসে রেমিট্যান্স থেকে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং এদেশের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে এর ভূমিকা অনস্বীকার্য। এটি হলো দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি। রেমিট্যান্সই ফরেন কারেন্সি রিজার্ভের প্রধান অংশ। আমদানির বিপরীতে বৈদেশিক দেনা পরিশোধে এটি প্রধান ভূমিকা পালন করে থাকে। বিদেশে কর্মরত এদেশের লাখো মানুষের অর্জিত অর্থ তাদের পরিবারকে যেমন করছে দারিদ্র্যমুক্ত, তেমনি দেশের আর্থসামাজিক অবস্থারও উন্নয়ন করছে। সুতরাং প্রতিটি প্রবাসী কর্মী তার পরিবার ও রাষ্ট্র উভয়েরই সম্পদ। এদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে রেমিট্যান্সের ভূমিকা অনস্বীকার্য। আর সে জন্যই বৈদেশিক কর্মসংস্থান খাতের উন্নয়নে সরকারকে বিশেষ নজর দিতে হয়।

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের যে কোন ব্যাংকের পূর্ণাঙ্গ শাখা স্থাপন, রেমিটেন্সের ওপর বোনাসের পরিমাণ ২.৫% থেকে বাড়িয়ে ৫% করা এবং বিনিয়োগ-সম্পর্কিত রেমিটেন্সের বোনাস দেওয়ার ব্যবস্থা করা হলে বৈধপথে রেমিটেন্সের প্রবাহ বাড়বে বলে মন্তব্য এসেছে নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে। একইসঙ্গে ডলারের মূল্যমান সবক্ষেত্রে একই ধার্য করা হলে হুন্ডির প্রবণতা কমবে বলে উল্লেখ করেন প্রবাসীরা। এনআইডি কার্ডের বিকল্প হিসেবে পাসপোর্ট নির্ধারণের দাবিটি পূরণ হলে প্রবাসীদের বিনিয়োগের পথও সুগম হবে বলে উল্লেখ করেন তাঁরাা।

এদিকে, রপ্তানি আয়ে ডলারের দর ৫০ পয়সা বাড়িয়ে ১০০ টাকা করা হয়েছে, যা সোমবার থেকে কার্যকর হয়েছে। একই সঙ্গে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স বাড়াতে নিজস্ব এক্সচেঞ্জ হাউজের মাধ্যমে রেমিটেন্স পাঠাতে চার্জ দিতে হবে না এবং বিদেশে ছুটির দিনেও বাংলাদেশি ব্যাংকগুলোর এক্সচেঞ্জ হাউজ খোলা রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাংলাদেশ ফরেইন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ও ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবি এসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বৈঠক শেষে বাফেদার চেয়ারম্যান ও সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফজাল করিম জানান, রেমিটেন্স পাঠানো সহজ করতে ছুটির দিনেও বিদেশে থাকা ব্যাংকের নিজস্ব এক্সচেঞ্জ হাউজ খোলা রাখতে সব ব্যাংক একমত হয়েছে। পাশাপাশি নিজস্ব এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে রেমিটেন্স পাঠাতে প্রবাসীদের কাছ থেকে কোনো প্রকার ফি নেওয়া হবে না। রেমিটেন্স পাঠাতে কমিশন বা সেবা মাশুলের পরিমাণ খুবই কম জানিয়ে তিনি বলেন, এটি ব্যাংক-টু-ব্যাংক বা এক্সচেঞ্জ হাউজের উপর এবং পাঠানো রেমিটেন্সের পরিমাণের উপরও নির্ভর করে।

অতি সম্প্রতি পাওয়া তথ্যে জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে ৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের ঘরে নেমে এসেছে। সোমবার রিজার্ভ থেকে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) ১৩৫ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়। পাশাপাশি আমদানি দায় মেটাতে ১৩ কোটি ১০ লাখ ডলার বিক্রি করা হয়। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত কমে হয় প্রায় ৩ হাজার ৪৩০ কোটি ডলার। সোমবার দিনের শুরুতে রিজার্ভ ছিল ৩ হাজার ৫৭৭ কোটি ডলার।

তবে, রেমিট্যান্স বাড়াতে বিকল্প পথ খোঁজার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। তাঁরা বলছেন, রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়া মানে ডলার সরবরাহ আরও কমে গেছে। রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক থাকায় রিজার্ভও কমে যাচ্ছে। তবে আমাদের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি টানা ১৩ মাস ইতিবাচক থাকার পর কমেছে। এই সংকট থেকে দীর্ঘ মেয়াদের জন্য বেরিয়ে আসতে হলে রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে হবে, পণ্যের গুণগত মান বাড়াতে হবে এবং দক্ষ জনবল বিদেশে পাঠাতে হবে। আর তাতে ডলার সরবরাহ বাড়বে। মধ্য মেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে এসব কাজ বাস্তবায়ন করতে হবে। এছাড়া, রেমিট্যান্স আয় বাড়াতে বিকল্প পথ বা নতুন নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। তাতে সংকট নিরসন হবে বলে আশা করছেন তাঁরা।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় কমে যাওয়ার ফলে নানা সমস্যায় পড়তে হবে। এর মধ্যে একদিকে যেমন রিজার্ভে চাপ পড়বে অপরদিকে টাকার মান কমবে। এটা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আর এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদেরকে প্রডাক্ট ডাইভারসিফাই করে রপ্তানি আয় বাড়াতে হবে। বিপরীত দিকে প্রকৃত পক্ষে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তাঁরা আরও বলেন, আগামী ডিসেম্বর নাগাদ অর্থনীতি কোন দিকে যাবে তা নিয়ে সবাই চিন্তিত। তাই প্রকৃতপক্ষে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বাড়াতে বিকল্প উদ্যোগ নিতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে