রিজার্ভ, মূল্যস্ফীতি নিয়ে শঙ্কা অমূলক : অর্থমন্ত্রী

এই মুহূর্তে প্রয়োজন নেই আইএমএফের ঋণের

| বৃহস্পতিবার , ২১ জুলাই, ২০২২ at ৭:২৪ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের রিজার্ভ ও মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি নিয়ে সব শঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, এক যুগ আগের চেয়ে এ দুই ক্ষেত্রে পরিস্থিতি এখন ভালো। তার মতে, বর্তমানে মূল্যস্ফীতি ও রিজার্ভ পরিস্থিতি এক যুগ আগে আওয়ামী লীগ সরকার যখন ক্ষমতা গ্রহণ করেছিল তার চেয়েও ভালো অবস্থানে আছে।

গতকাল বুধবার সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত ও অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতিকে আপনারা ভিন্নভাবে দাঁড় করার চেষ্টা করেন। আমরা মূল্যস্ফীতি মাসের ভিত্তিতে (মানথ টু মানথ) হিসাব করি। মূল্যস্ফীতি হবে এক বছরের গড় মূল্যস্ফীতি। এখন গড় মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৯ শতাংশ জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, এখন এক মাসের ৭ দশমিক ৫৬ কে নিয়ে আমরা আতঙ্কিত হয়ে গেছি। অথচ ২০০৯ সালে যখন দায়িত্বভার গ্রহণ করে আওয়ামী লীগ তখন মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৩ শতাংশ। সেখান থেকে শুরু করে এখন যে গড় মূল্যস্ফীতি সেটা মাসের ভিত্তিতে ধরলে এক রকম তথ্য পাবেন। আর গড় মূল্যস্ফীতি পেলে আরেক রকম তথ্য পাওয়া যাবে। এখন আমাদের গড় মূল্যস্ফীতি হচ্ছে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ। খবর বিডিনিউজের।

সম্প্রতি আমদানি ব্যয় মেটাতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাচ্ছে বলে যে উদ্বেগ আছে তাকেও অমূলক মনে করেন অর্থমন্ত্রী। কোরবানি ঈদের ছুটির আগে আমদানি দায় পরিশোধের কারণে দুই বছরের মধ্যে প্রথম বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ প্রথমবারের মত ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে ৩৯ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার হয়েছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত ৬ জুলাই রিজার্ভে ছিল ৪১ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলার। এক বছর আগে ২০২১ সালের ৬ জুলাই এর পরিমাণ ছিল ৪৬ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার।

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যেই ২০২০ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশের রিজার্ভ প্রথমবারের মত ৪০ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করে। ২০২১ সালের আগস্টে তা রেকর্ড ৪৮ দশমিক ০৬ ডলারে পৌঁছায়। রিজার্ভ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা যখন আরম্ভ করি আমাদের রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৭ বিলিয়ন ডলার। এখন নাই নাই করেও আমাদের ৪০ বিলিয়ন ডলার আছে। ৪০ বিলিয়ন কিন্তু আগে কখনও আমাদের ছিল না। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানি। আমাদের সরকারের তিন মাসের মাথায় ৭ দশমিক ৯ বিলিয়ন থেকে ১০ বিলিয়নে আসলো। ১০ থেকে আমরা ৪৮ বিলিয়নে গেলাম। সেখান থেকে এখন ৪০ বিলিয়নে আছি। সুতরাং আপনারা যেগুলো বলেন, আরও সত্যি কথা বলা উচিত। মূল্যস্ফীতি কখনও ডেইলি বেসিসে হয় না, উইকলি বেসিতে হয় না, মূল্যস্ফীতি হয় বছরের গড় মূল্যস্ফীতি। দেশের জনগণ সাংবাদিকদের কাছ থেকে সঠিক তথ্যের আশায় বসে থাকে মন্তব্য করে রিজার্ভ ও মূল্যস্ফীতি সম্পর্কে এসব তথ্য তুলে ধরার আহ্বান জানান অর্থমন্ত্রী।

প্রয়োজন নেই বিদেশি ঋণের : এক দশক বাদে বাজেট সহায়তার জন্য বাংলাদেশ আইএমএফের দ্বারস্ত হচ্ছে বলে খবর এলেও সংস্থাটির কাছ থেকে কোনো ঋণ এখন নেওয়া হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেছেন, যদি প্রয়োজন হয় আমরা (ঋণ) নেব। কিন্তু এই মুহূর্তে আমাদের প্রয়োজন নেই। সচিবালয়ে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত ও অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হওয়া মুস্তফা কামাল এটাও বলেছেন, ঋণের বিষয়ে আইএমএফ কিংবা সরকার কোনো পক্ষই কোনো আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেয়নি।

অর্থমন্ত্রী বলেন, আইএমএফের একটা কনসালটেটিভ কমিটি বাংলাদেশে আছে। তারা সরকারকে পরামর্শ দেন, সরকারও তাদের পরামর্শ দেয়। তারা যে আসছে, আমাদের কাছে তারা আনুষ্ঠানিক কোনো প্রস্তাবনা দেয়নি। আমরাও তাদের কোনো ফরমাল প্রস্তাবনা দিইনি। এই পর্যন্ত হচ্ছে আইএমএফ সংক্রান্ত জবাব।

আইএমএফ সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণের প্রস্তাব করেছে বলে যে খবর এসেছে- সে বিষয়ে প্রশ্নে তিনি আবারও বলেন, আমরা আইএমএফের কাছে কোনো প্রকার অর্থ নেওয়ার জন্য আবেদন করিনি। তারাও প্রস্তাব দেয়নি। তাদের পরামর্শগুলো সরকারের জন্য উপকারী হয়। তারা সংস্কারপন্থি কিছু প্রস্তাব দেয়। তাদের পরামর্শগুলো দেশের জন্য ভালো হয়। তাদের প্রস্তাব পেলে আমরা গ্রহণ করি, বলেন অর্থমন্ত্রী।

আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ নিলেও দেশের স্বার্থ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে জানিয়ে মুস্তফা কামাল বলেন, অনেকের আশঙ্কা যে আমরা হয়ত এমন কিছু নিয়ে নেব, কমিটমেন্ট করব বা চুক্তি করব, যেটা আমাদের দেশের উপকারে আসবে না। প্রস্তাবনা আসলে আপানারা ভালোভাবেই জানবেন। এমন কোনো প্রকল্প বা ফান্ডিংয়ে যাব না, যেটা দেশের স্বার্থের পরিপন্থি হয়। নিজের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে অর্থ নেব না। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ নিয়ে সরকার ও আইএমএফের ভাষ্যের ফারাকের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন দেশ যেভাবে হিসাব করে, আমরাও সেভাবে হিসাব করেছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহালদায় ফের মরা ডলফিন
পরবর্তী নিবন্ধলায়ন্স ক্লাবসের প্রতিষ্ঠাতা গভর্নর শফিউর রহমানের ইন্তেকাল