রাশিয়ার ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা

ইউক্রেন সংকট

| বৃহস্পতিবার , ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৮:৩৯ পূর্বাহ্ণ

প্রতিবেশী দেশ ইউক্রেনের দুই অঞ্চলে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সেনা পাঠানোর নির্দেশের পর একের পর এক নিষেধাজ্ঞায় পড়েছে রাশিয়া। রাশিয়ার ওপর মঙ্গলবার সবার প্রথমে নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা আসে যুক্তরাজ্যের। এরপর যুক্তরাষ্ট্রও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। নিষেধাজ্ঞা এসেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকেও। রাশিয়ার সঙ্গে গ্যাস পাইপলাইনের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে জার্মানি। রাশিয়া আন্তর্জাতিক সব আইন লঙ্ঘন করে ইউক্রেনে আগ্রাসন চালাচ্ছে অভিযোগ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, তার দেশ যুদ্ধে জড়াতে চায় না। তবে নেটো অঞ্চলের এক ইঞ্চি ভূমিও ছাড়বে না। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট নেটোতে যোগ দিতে চাওয়ার পর থেকে উত্তেজনা চলছে কৃষ্ণ সাগর অঞ্চলে। রাশিয়া কোনোভাবেই তাদের পাশের দেশে নেটোকে জায়গা দিতে চায় না। খবর বিডিনিউজের। টান টান উত্তেজনার মধ্যে সোমবার রাশিয়া ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রিত দুই অঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে ‘স্বাধীন’ রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয়। এরপর সেখানে সেনা পাঠানোর নির্দেশ দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন। সোমবার দোনেৎস্ক শহরের ভেতর দিয়ে রাশিয়ার ট্যাংক এবং সামরিক বহর যেতে দেখা যাওয়ার খবর মেলার পরপরই রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার খবর আসতে থাকে। বিবিসি জানিয়েছে, রাশিয়ার তিনটি ব্যাংক এবং তিন ধনকুবেরের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ রোসিয়া, আইএস ব্যাংক, জেনারেল ব্যাংক, প্রোমসভায়াজ ব্যাংক ও ব্ল্যাক সি ব্যাংকের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হচ্ছে বলে জনসন জানিয়েছেন। তিন ধনকুবের হচ্ছেন গেনেদি তিমচেনঙ্কো, বরিস রোটেনবার্গ ও ইগোর রোটেনবার্গ। নিষেধাজ্ঞার আওতায় যুক্তরাজ্যে তাদের সব সম্পদ জব্দ করা হবে এবং দেশটিতে তাদের ভ্রমণও নিষিদ্ধ থাকবে। যুক্তরাজ্যের কোনো নাগরিক তাদের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য করা কিংবা সম্পর্ক রাখতে পারবেন না। সিএনএন জানিয়েছে, বাইডেন এক ঘোষণায় রাশিয়ার দুটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওউপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। এগুলো হলো রুশ স্টেট ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন ভিইব ও রাশিয়ার মিলিটারি ব্যাংক। এটা নিষেধাজ্ঞার সূচনা বলে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, আরও নিষেধাজ্ঞা আসছে। রাশিয়ার অর্থনীতিকে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। যুক্তরাষ্ট্রের মিত্ররা ঐক্যবদ্ধ রয়েছে দাবি করে বাইডেন ইউক্রেনে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ও বাল্টিক অঞ্চলে নেটো জোটভুক্ত দেশে সৈন্য পাঠানোর ঘোষণাও দিয়েছেন। বিবিসি জানিয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এক বৈঠক থেকে প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে রাশিয়ার পার্লামেন্ট সদস্যদের নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছে, যারা পুতিনের সৈন্য পাঠানোর সিদ্ধান্তকে পাস করিয়েছেন। রুশ ব্যাংকগুলোকেও ইইউতে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। রাশিয়া থেকে গ্যাস আনতে যে নর্ড স্ট্রিম ২ পাইপলাইনের কাজ চলছে, জার্মানি তা স্থগিত করেছে বলে বিবিসি জানিয়েছে। গ্যাসের জন্য রাশিয়ার ওপর ইউরোপের নির্ভরতা বহু দিনের। ইউরোপের গ্যাসের চাহিদার ৪০ শতাংশ মেটায় যে জার্মানি, তারা রাশিয়া থেকেই তার বড় অংশ আমদানি করে থাকে।
মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় কী আছে : প্রেসিডেন্ট বাইডেন রাশিয়ার দুটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেন। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে পশ্চিমা দেশগুলো থেকে আর্থিক সাহায্য কিংবা অনুদানের পথ সংকীর্ণ হয়ে গেল রাশিয়ার সামনে। বাইডেন বলেন, আমরা দুটি রাশিয়ান আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছি। এগুলো এরপর থেকে পাশ্চাত্যের দেশগুলো থেকে কোনো টাকা তুলতে পারবে না। পাশ্চাত্যের বাজারে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারবে না। এমনকি বুধবার থেকে রাশিয়ার উচ্চবিত্ত সমাজের মানুষের ওপরেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপরমাণু চুক্তির আলোচনা শেষ প্রান্তে বন্দি বিনিময়ে প্রস্তুত ইরান
পরবর্তী নিবন্ধপুতিন জিনিয়াস, বুদ্ধিমান : ট্রাম্প