রামগড়-সাবরুম বন্দরে আশার হাতছানি

শীঘ্রই উদ্বোধন হবে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রথম এ স্থলবন্দর বিকশিত হবে পণ্য আমদানি-রপ্তানি ও পর্যটন শিল্পের

ফটিকছড়ি প্রতিনিধি | শুক্রবার , ৬ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৬:০৩ পূর্বাহ্ণ

রামগড়-সাবরুম স্থলবন্দর দিচ্ছে আশার হাতছানি। প্রস্তুত দুই পাড়ে স্থল বন্দরের সকল স্থাপনা। খুব শীঘ্রই উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এটি হবে বাংলাদেশের ১৫তম এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রথম স্থলবন্দর। বিকশিত হবে পণ্য আমদানি-রপ্তানি ও পর্যটন শিল্পের। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ করতে রামগড়-সাবরুম সীমান্তে এ স্থলবন্দর স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে দু-দেশের সরকার।

ভারত স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আদিত্য মিত্র ও কাস্টমসের প্রধান কমিশনার যোগেন্দ্র গার্গসহ উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল বুধবার রামগড় ও সাবরুম স্থলবন্দর চেক স্টেশন পরিদর্শন করে এমন আশার কথা জানান। পরিদর্শনকালে উপস্থিত ছিলেন, ভারত স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষর পরিচালক (প্রকল্প) গীতেশ দীপ, ভারতের কাস্টমসের অতিরিক্ত কমিশনার টমাস বাসু মিত্র, সহকারী কমিশনার অভ্যুদয় গুহ, স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সহকারী প্রকৌশলী কাভার সিং, ম্যানেজার ডি নন্দী, চট্টগ্রামে নিযুক্ত ভারতের সহকারী হাই কমিশনার এইচ ই ড. রাজীব রঞ্জন, বাংলাদেশের রামগড় ৪৩ বিজিবির পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. হাফিজুর রহমান ও সাবরুমের ৯৬ বিএসএফ’র কমান্ড্যান্ট কৃষ্ণ কুমার লাল। রামগড়-সাবরুম স্থলবন্দর চালুর লক্ষ্যে খাগড়াছড়ির রামগড়ে মহামুনি এলাকায় ফেনী নদীর ওপর ৪১২ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৪ দশমিক ৮০ মিটার প্রস্থ মৈত্রী সেতু-১ নামে একটি আন্তর্জাতিক সেতু নির্মাণ করা হয়। এতে খরচ হয়েছে ১৩৩ কোটি টাকা। চট্টগ্রামের নাজিরহাট হতে রামগড় স্থলবন্দর পর্যন্ত রেল লাইন স্থাপনের পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ১১২ কিলোমিটার দূরত্বের এই স্থলবন্দর ব্যবহার করে মাত্র তিন ঘণ্টায় চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ট্রান্সশিপমেন্টের পণ্য ভারতের ত্রিপুরার সাবরুমে পৌঁছানো যাবে। দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অন্যান্য রাজ্যের মেঘালয়, মণিপুর, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, আসাম ও অরুণাচলের তথা সেভেন সিস্টার্সের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করা হবে।

রামগড় স্থলবন্দরের প্রকল্প পরিচালক মো. সরোয়ার আলম বলেন, রামগড়-সাবরুম স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন কার্যক্রম চালুর প্রস্তুতি দেখার জন্য ভারতীয় প্রতিনিধি দলটি সরেজমিনে পরিদর্শনে এসেছেন। ইমিগ্রেশন কার্যক্রম চালু করার জন্য রামগড় ইমিগ্রেশন ভবন পুরোপুরি প্রস্তুত। প্রধানমন্ত্রী ইমিগ্রেশন কার্যক্রমের উদ্বোধন, উদ্বোধনের দিন ও তারিখ ঠিক করবেন।

জানা গেছে, ২০২১ সালের ভারত ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে খাগড়াছড়ির রামগড়ে ফেনী নদীর ওপর নির্মিত বাংলাদেশ-ভারত প্রথম মৈত্রী সেতু-১ উদ্বোধন করেন। ২০১৮ সালের ২৫ অক্টোবর ভারত ও বাংলাদেশ ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে পণ্য পরিবহনের জন্য ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে বাংলাদেশের দুটি সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম ও মোংলা ব্যবহার করার জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। এই চুক্তির আওতায় রামগড় বন্দর দিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে পণ্য পরিবহনের বিষয়টিও ছিল। বন্দরটি চালু হলে উত্তর চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হবে বলেও জানান সংশ্লিষ্টরা। তার আগে ২০১০ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লি সফরকালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং-এর সঙ্গে বৈঠকে রামগড়-সাবরুম স্থলবন্দর চালুর যৌথ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, রামগড় স্থলবন্দর চালু হলে বাংলাদেশ থেকে প্রসাধন সামগ্রী, সিরামিক ও মেলামাইল পণ্য, সিমেন্ট, ইট, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, তামাক জাতীয় পণ্য, শুঁটকি প্রভৃতি ত্রিপুরা রাজ্যে রপ্তানির সুযোগ রয়েছে। অন্যদিকে ত্রিপুরা থেকে কাঠ, বাঁশ, পাথর, মসলা প্রভৃতি পণ্য আমদানি করা যাবে। প্রসার ঘটবে পর্যটনশিল্পের।

বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) মো. আলমগীর বলেন, রামগড় স্থল বন্দরকে কেন্দ্র করে পুরো চট্টগ্রামের দৃশ্যপট পরিবর্তন হতে যাচ্ছে। বন্দরকে কেন্দ্র করে সড়ক সংস্কার হতে শুরে করে একাধিক বড় সেতু ও সড়ক নির্মাণ হচ্ছে। রামগড়ের এ বন্দরে স্থানীয় মানুষদের জীবনযাত্রার মান অভাবনীয় পরিবর্তন হবে।

বিজিএমইএর সহ-সভাপতি ও ফটিকছড়ির বাসিন্দা রাকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, এ বন্দরের সরচেয়ে বড় সুবিধাভোগী হবে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো। তারা সহজে ও কম খরচে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পণ্য পরিবহনের সুবিধা দেবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশি ব্যবসায়িরাও রপ্তানির একটি নতুন দ্বার পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

খাগড়াছড়ির স্থানীয় সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেন, ভারতের সঙ্গে এই অঞ্চলের মানুষের শত বছরের সম্পর্ক। বৈধ কোনো রুট না থাকায় মানুষ অবৈধভাবে সীমান্ত পারাপার করতো। এখন বৈধ উপায় তৈরী হলে মানুষের দুর্ভোগ লাঘব হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান রাষ্ট্রপতির
পরবর্তী নিবন্ধঅদ্ভুত