রাতে বিতণ্ডা, ভোরে প্রহরীকে খুন

মৃত্যুর আগে ৪ জনের নাম বলেছেন, ভিডিও ভাইরাল।। হালিশহরের নয়াবাজার ।। নেপথ্যে চাঁদাবাজির প্রতিবাদ?

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২৯ মে, ২০২৩ at ৪:৩০ পূর্বাহ্ণ

খোলা জায়গায় এক যুবককে প্রস্রাব করতে নিষেধ করায় নৈশপ্রহরী আজাদের সাথে দুই যুবকের বিতণ্ডা হয় শনিবার রাত সাড়ে ১২টায়। কয়েক ঘণ্টা পরে ভোর সাড়ে ৪টায় তার মাশুল গুণতে হয় নিজের জীবন দিয়ে। ঘাতকের ছুরি এফোঁড় ওফোঁড় করে দেয় প্রহরী আজাদের দেহ। গতকাল নগরীর হালিশহর নয়াবাজার এলাকায় এ খুনের ঘটনা ঘটে। মৃত্যুর আগে রাজু, রাজীব, ফয়সাল ও ওসমান তাকে ছুরিকাঘাত করে বলে জানিয়ে গেছেন আজাদ। তার জবানবন্দির একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এদিকে ঘটনার প্রতিবাদে স্থানীয় ক্ষুব্ধ লোকজন হালিশহর নয়াবাজার এলাকায় সড়ক অবরোধ করে খুনিদের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ করে। আধ ঘণ্টা পর পুলিশ এসে তাদের সরিয়ে দেয়।

প্রাথমিক তদন্তে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পাহাড়তলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আজাদের ভাই নগরীর বৌবাজার (নয়াবাজারের পার্শ্ববর্তী) এলাকার একটি খালি জায়গার (বাউন্ডারি দেয়া) কেয়ারটেকার। আজাদ নৈশপ্রহরী। শনিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে ওই জায়গার গেটের সামনে কয়েকজন দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করতে গেলে আজাদ ও তার ভাই বাধা দেন। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। ঘটনাটি হাতাহাতি পর্যন্ত পৌঁছায়। একপর্যায়ে তারা আজাদ ও তার ভাইকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে চলে যায়। রোববার ভোরে আজাদকে নয়াবাজার বিশ্বরোডের মুখে একা পেয়ে কয়েকজন ঘিরে ধরে ছুরিকাঘাত করে খুন করে।

তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডে ছয়সাতজন অংশ নেয়। যারা আগের রাতে প্রস্রাব করা নিয়ে হাঙ্গামায় লিপ্ত ছিল তাদের শনাক্ত করা হয়েছে। এ ঘটনায় পাহাড়তলী থানায় মামলার প্রক্রিয়া চলছে।

সরেজমিনে গতকাল সকাল সাড়ে ৬টার দিকে পাহাড়তলী থানার হালিশহর নয়াবাজার এলাকায় গিয়ে নিহতের স্বজন ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, নিহত নৈশপ্রহরীর নাম আজাদুর রহমান (৩০)। তিনি নয়াবাজারের নাজিরবাড়ির লাডু ইব্রাহীমের ছেলে। তার দুটি সন্তান রয়েছে। আজাদকে হারিয়ে আহাজারি করছে স্বজনরা। তার স্ত্রী কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার স্বামীর হত্যাকারীদের বিচার চাই। আমার এই দুই সন্তানের কী হবে। কোথায় যাব আমি? আমার তো আর কেউ রইল না। অবুঝ শিশুরা বড় হলে আমি কী জবাব দেব?

নিহতের বোন এনি জানান, নতুন বাজার এলাকার একটি গ্যারেজের কেয়ারটেকারের কাজ করেন আজাদের বড় ভাই। ভাইয়ের সঙ্গে মাঝে মধ্যে সেখানে থাকতেন আজাদ। শনিবার রাতে গ্যারেজের গেটের পাশে এক যুবক প্রস্রাব করতে চাইলে তাকে বাধা দেন আজাদ ও তার বড় ভাই। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই যুবক তাদের দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। পরে ভোরবেলায় চট্টগ্রাম মেডিকেলে ভর্তি থাকা খালাকে দেখে বাড়ি ফেরার সময় নাস্তা কিনতে বিশ্বরোডের মুখে যান। এ সময় দুটি বাইকে করে এসে ৪ জন মিলে তাকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। পরে সেখান থেকে তিনি কোনো রকমে বাড়ির সামনে আসেন এবং সেখানেই রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।

নিহত আজাদের ভাতিজা পরিচয়দানকারী হুমায়ুন কবির বলেন, নয়াবাজার এলাকায় রাস্তার দোকান ও পার্কিং থেকে চঁাঁদা তোলা নিয়ে রাজু নামে একজনের সঙ্গে আজাদের বিরোধ হয়েছিল। সেই বিরোধের জেরে আজাদের ওপর এই হামলা চালানো হয়। সবাই বলছে, শনিবার রাতের কথা কাটাকাটির জেরেই খুন। এ বিষয়ে হুমায়ুন আজাদীকে বলেন, ওটা একটা ইস্যু মাত্র।

নিহত আজাদের বড় ভাই মতিউর রহমান বলেন, আমার ভাইকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেছে রাজু, রাজীব, ফয়সাল ও ওসমানসহ তাদের সাঙ্গপাঙ্গরা। তারা সবাই আবদুল মান্নান খোকনের অনুসারী। আমরা ভাই হত্যার বিচার চাই। চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করায় তারা আমার ভাইকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। তিনি বলেন, খুনি চক্র দলবদ্ধভাবে বিভিন্ন দোকানে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, জুয়া ও মাদকের কারবার করে খোকনের ছত্রছায়ায় এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে আসছে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নুরুল আলম আশেক বলেন, ভোর ৫টার দিকে ছুরিকাঘাতে আহত আজাদ নামের একজনকে হাসপাতালে আনা হয়। পরে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৮,১৮০ কোটি টাকা
পরবর্তী নিবন্ধবাংলাদেশ সংঘাত চায় না : প্রধানমন্ত্রী