রাজাপাকসে রাজত্বের কলঙ্কময় ইতি

| বৃহস্পতিবার , ১৪ জুলাই, ২০২২ at ৬:৩৪ পূর্বাহ্ণ

চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জ্বালানি ও খাদ্য ঘাটতির বিরুদ্ধে জনবিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে ছিল রাজাপাকসে সাম্রাজ্যেরই আধিপত্য। সেই রাজাপাকসে পরিবারেরই একজন, প্রেসিডেন্ট গোটাবায়াকে কিনা বুধবার দিনের আলো ফোটার আগেই রাতের অন্ধকারে দেশ ছেড়ে পালাতে হল। দুই মাস আগেও তিনি বিক্ষোভকারীদের দাবি উপেক্ষা করে মেয়াদপূর্তি পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তা আর হল না। শনিবার হাজার হাজার বিক্ষোভকারী তার সরকারি বাসভবন দখলে নিলে তিনি আত্মগোপনে চলে যেতে বাধ্য হন, প্রতিশ্রুতি দেন ক্ষমতা ছাড়ার। বুধবারই তার পদত্যাগ করার কথা ছিলো। খবর বিডিনিউজের।
এটা একদিন হওয়ারই কথা ছিলো, বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এমনটাই বলেন প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনের চারপাশে ইতস্তত হেঁটে বেড়ানো ৭৩ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী মালাওয়ারা আরাচ্চি। এই বাসভবনে সর্বশেষ ছিলেন গোটাবায়ার বড় ভাই মাহিন্দা রাজাপাকসে, শনিবার থেকে এটি বিক্ষোভকারীদের দখলে। তারা জনগণের কাছ থেকে সব কিছু কেড়ে নিয়েছে। রাজাপাকসে পরিবার বিদায় নেওয়ায় আমরা অদূর ভবিষ্যতেই বিশ্বের সেরা দেশ হবো, বলেছেন তিনি।
মাহিন্দা গত মে মাসে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান, ছেলে যোশিথ ছিলেন তার চিফ অফ স্টাফ, বাবার সঙ্গে তারও বিদায় ঘটে। মাহিন্দার আরেক ছেলে নমল, বড় ভাই চমল, ছোট ভাই বাসিল আর শশেন্দ্রও গত এপ্রিলে মন্ত্রীত্ব ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন। সাবেক অর্থমন্ত্রী বাসিল মঙ্গলবার দেশ ছেড়ে পালাতে চাইলে বিমানবন্দরে বাধার সমুখীন হয়েছিলেন। তাকে দেশের বাইরে যেতে দিলে জনসাধারণের ক্ষোভ আরও প্রকট হতে পারে আশঙ্কায় অভিবাসন কর্মকর্তারা তাকে যাওয়ার অনুমতি দেননি।
তবে শেষ পর্যন্ত বাসিল যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। গোটাবায়ার এই ছোট ভাই মার্কিন নাগরিক। শ্রীলঙ্কার কাছে এখন জ্বালানি আমদানির জন্য ডলার নেই বললেই চলে। বিদেশি ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থতা তাদেরকে ঋণখেলাপি বানিয়ে দিয়েছে। গত মাসেই তাদের মূল্যস্ফীতি ৫৪.৬ শতাংশ ছুঁয়েছে, সামনে পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। জ্বালানি বাঁচাতে দেশটিতে স্কুল আর অফিসও বন্ধ রাখতে হচ্ছে। ১৯৪৮ সালের স্বাধীনতার পর আর কখনোই দেশটি এত বাজে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটে পড়েনি, অথচ এর মধ্যে তারা তামিল বিদ্রোহীদের সঙ্গে একটি রক্তাক্ত গৃহযুদ্ধও পার করেছে, ২০০৯ সালে প্রতিরক্ষা সচিব থাকাকালে গোটাবায়াই তামিল বিদ্রোহীদের গুড়িয়ে দেওয়ার কাজ তদারকি করেছিলেন।
অবশ্য শ্রীলঙ্কার এখনকার এ অর্থনৈতিক সংকটের জন্য সবচেয়ে বেশি দায় কোভিড-১৯ মহামারীর, বৈশ্বিক এ মহামারী দ্বীপদেশটির পর্যটন খাতের গলা টিপে ধরে, বিদেশ থেকে আসা রেমিটেন্সের প্রবাহে নামে ধস।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদুই দশকে প্রথমবার ডলার-ইউরো সমান
পরবর্তী নিবন্ধদক্ষিণ ভূর্ষি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার মানোন্নয়ন শীর্ষক সভা