রাঙামাটি জেলা পরিষদের সদস্যসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে দুদকের ৪ মামলা

অস্তিত্বহীন প্রকল্প দেখিয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

রাঙামাটি প্রতিনিধি | শনিবার , ১০ জুন, ২০২৩ at ৪:৫০ পূর্বাহ্ণ

রাঙামাটিতে অস্তিত্বহীন প্রকল্প দেখিয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য, নির্বাহী প্রকৌশলী, সহকারী প্রকৌশলী, উপসহকারী প্রকৌশলী, ঠিকাদার, ইউপি সদস্যসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মোট ৪টি মামলা দায়ের করেছে রাঙামাটি দুর্নীতি দমন কমিশন। গত বৃহস্পতিবার এই মামলাগুলো দায়ের করা হয় বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত কার্যালয়ের উপপরিচালক জাহিদ কামাল। তিনি বলেন, রাঙামাটি দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক আহমেদ ফরহাদ হোসেন বাদী হয়ে এই চারটি মামলা করেন।

মামলার ১ নম্বর এজাহার সূত্রে জানা যায়, রাঙামাটির বরকল উপজেলার ৪ নম্বর ভূষণছড়া ইউনিয়নের অন্তর্গত কামিনী চাকমার জমির উপর মৎস্য বাঁধ ও পাকা সেচ ড্রেন নির্মাণ প্রকল্পের মাধ্যমে ৮ লাখ ৫৮ হাজার ৮৫৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়। এই কাজে সংশ্লিষ্ট রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাহী প্রকৌশলী বিরল বড়ুয়া, সহকারী প্রকৌশলী জ্যোর্তিময় চাকমা, উপসহকারী প্রকৌশলী রিগ্যান চাকমা ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সমৃদ্ধি এন্টারপ্রাইজের নামে মামলা দায়ের করা হয়। এই প্রকল্পটি ২০১৭১৮ অর্থবছরে গৃহীত হয়।

মামলার ২ নম্বর এজাহারে বরকল উপজেলাধীন সুবলং বাজারে পানীয় জলের ব্যবস্থাকরণসহ গভীর নলকূপ স্থাপন প্রকল্পের মাধ্যমে ৬ লাখ ৫১ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়। এই মামলায় উপরোক্ত তিন প্রকৌশলীর পাশাপাশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স নাংচিং এন্টারপ্রাইজের চিংহেন রাখাইনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। এই প্রকল্পটিও ২০১৭১৮ অর্থবছরে গৃহীত হয় এবং প্রকল্পের ব্যয় ধরা ৭ লাখ টাকা।

তৃতীয় এজাহারে বরকল উপজেলাধীন সুবলং ইউনিয়নে সুবলং কমিউনিটি সেন্টার ঘর ও পাকা সিড়ি নির্মাণ প্রকল্পের মাধ্যমে ৮ লাখ ৩৭ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। মামলায় তিন প্রকৌশলীর পাশাপাশি জেলা পরিষদের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী (বর্তমানে সিলেটে কর্মরত) কাজী আবদুস সামাদ, ঠিকাদার অমলেন্দু চাকমা ও জেলা পরিষদের সদস্য সবির কুমার চাকমার নামে মামলা দায়ের করা হয়।

৪ নম্বর এজাহারে বরকল উপজেলাধীন পূর্ব এরাবুনিয়া মৎস্য বাঁধ হতে হারুন টিলা এলাকার আহাদ এর বাড়ি পর্যন্ত রাস্ত সংস্কার নামক প্রকল্পের মাধ্যমে ৯ লাখ ৩৯ হাজার ৯৫৩ টাকা আত্মসাত করা হয়। প্রকল্পটি গৃহীত হয় ২০১৬১৭ সালে এবং প্রকল্প ব্যয় ছিল ১০ লাখ টাকা। তদন্তে উক্ত স্থানে কোনো মৎস্য বাঁধ এবং হারুন টিলা নামের কোনো জায়গাও পাওয়া যায়নি। তদন্তে এটি অস্তিত্বহীন ও ভুয়া প্রকল্প ছিল বলে জানা যায়। এই মামলার আসামিরা হলেন, বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী বিরল বড়ুয়া, সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী আবদুস সামাদ, সহকারী প্রকৌশলী জ্যোর্তিময় চাকমা, উপসহকারী প্রকৌশলী রিগ্যান চাকমা, ঠিকাদার নাংচিং এন্টারপ্রাইজের চিংহেন রাখাইন, ৪ নম্বর ভূষণছড়া ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মামুনুর রশীদ এবং জেলা পরিষদ সদস্য সবির কুমার চাকমা।

রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাহী প্রকৌশলী বিরল বড়ুয়া মামলার বিষয়ে মুঠোফোনে বলেন, আমি অফিসের কাজে ঢাকায় আছি। মামলা হয়েছে বলে শুনলাম। জেলা পরিষদ সদস্য সবির কুমার চাকমা বলেন, আমিও আপনার মত শুনেছি মামলা হয়েছে। তবে এটা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই নয়। যদি সরাসরি প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায় যে প্রকল্প দৃশ্যমান নেই এবং এলাকাবাসী সাক্ষ্য দেয় তবেই মামলা হতে পারে। আমি আইনিভাবে মোকাবেলা করব। রাঙামাটির দুর্নীতি দমন কমিশন সূত্রে জানা যায়, এজাহার অনুযায়ী তদন্ত করা হবে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে আদালতে চার্জশিট দেয়া হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপর্যটক বাস চালু হচ্ছে আজ থেকে
পরবর্তী নিবন্ধঅল্প বৃষ্টিতে জলজট