রপ্তানির জন্য নতুন বাজার অন্বেষণ করতে হবে

| বৃহস্পতিবার , ২৫ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৭:৪৫ পূর্বাহ্ণ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈদেশিক আয় বাড়াতে তৈরি পোশাকের মতো পাট ও চামড়াজাত পণ্য, ওষুধ, তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য এবং হস্তশিল্পসহ অন্যান্য রপ্তানি পণ্যে একই গুরুত্ব দিতে সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমাদের আরও নতুন পণ্য উৎপাদন এবং নতুন বাজার (রপ্তানির জন্য) অন্বেষণে মনোযোগ দিতে হবে। আমরা বর্তমানে রপ্তানির জন্য কয়েকটি পণ্যের ওপর নির্ভর করি। রপ্তানির জন্য একটি বা দুটি পণ্যের ওপর নির্ভর করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। কারণ অনেক প্রতিবন্ধকতার মোকাবেলা করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। গত রোববার সকালে রাজধানীর উপকণ্ঠে পূর্বাচল নিউ টাউনে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশচীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে মাসব্যাপী ২৮তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা (ডিআইটিএফ) ২০২৪এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) যৌথভাবে এ মেলার আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠানে তিনি হস্তশিল্পকে বর্ষপণ্য হিসেবে ঘোষণা করেছেন। নারীর ক্ষমতায়নে ভূমিকা রাখায় এ খাতে বিশেষ নজর দিতে হস্তশিল্পকে বর্ষপণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবার যে নির্বাচনী ইশতেহার দিয়েছি সেখানে আমরা লক্ষ্য স্থির করেছি ২০৩০ সালের মধ্যে আমাদের রপ্তানি আয় বাড়াব ১৫০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। যদিও এক্ষেত্রে সময় খুব কম, কিন্তু আমাদের নতুন নতুন বাজার ধরতে হবে। আর একটা লক্ষ্য স্থির থাকলে যে কোনো অর্জন সম্ভব হয়। আমরা সেভাবেই কাজ করতে চাই।

সামপ্রতিক সময়ে বাংলাদেশ নানা ক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি সাধন করেছে। বিশেষ করে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে অভূতপূর্ব অর্জন সাধিত হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা যথেষ্ট বুদ্ধিমত্তা, সৃজনশীলতা এবং উদ্ভাবনীর পরিচয় রেখেছি। পরিবেশ সংরক্ষণ, নারীর ক্ষমতায়ন, অলাভজনক উন্নয়ন উদ্যোগ বিশেষ করে ক্ষুদ্রঋণ, গ্রামীণ অনানুষ্ঠানিক খাতের বিকাশের ক্ষেত্রে আমাদের সামাজিক উদ্যোক্তরা যথেষ্ট সাফল্য দেখিয়েছেন। সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পরামর্শক ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘প্রাইজ ওয়াটার হাউস’ এর মতে আগামী ২০৫০ সালে বিশ্ব অর্থনীতিতে নেতৃত্ব দেবে ব্রাজিল, রাশিয়া, ইন্ডিয়া, চীনএর মতো দেশগুলো। এছাড়া সম্ভাব্য নেতৃস্থানীয় দেশের তালিকায় প্রণয়ন করা হয়েছে, যারা ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বে সবচেয়ে প্রভাবশালী অর্থনৈতিক অঞ্চল বলে পরিণত হবে। এই তালিকায় বাংলাদেশের নামও আছে।

আমাদের রপ্তানি আয় বাড়াতে হবে। অর্থনীতিবিদদের মতে, এখন দরকার হচ্ছে, ২০৩০ সালের মধ্যে ১০ হাজার কোটি ডলারের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা। ১০ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি হলে সেটা খুবই সম্ভব। তার আগে চারটি কাজ করতে হবে বাংলাদেশকেপণ্য বহুমুখীকরণ, বাজার বহুমুখীকরণ, প্রযুক্তি বহুমুখীকরণ, বিনিয়োগ বহুমুখীকরণ। পণ্য বহুমুখীকরণে সবার আগে পোশাকের বাইরে পাট, চামড়া, সিরামিক ইত্যাদি খাতে গুরুত্ব দিতে হবে।

বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া পণ্যগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স আসে তৈরি পোশাক থেকে। এরপরেই রয়েছে হোম টেক্সটাইল, চামড়া ও চামড়া জাত পণ্য, ওষুধ, বাইসাইকেল, প্লাস্টিক পণ্য, কৃষিপণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য ইত্যাদি।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যের বেশিরভাগটাই নির্ভর করে বড় যে দুটি বাজার রয়েছে, ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকা, সেখানকার অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ওপরে। সাম্প্রতিক যে বিশ্ব মন্দার যে প্রভাব ইতোমধ্যেই দেখা যাচ্ছে, সামনের দিনগুলোতে তা হয়তো আরও গভীর হবে।

অর্থনীতি, উন্নয়ন ও বাণিজ্য বিষয়ক লেখক মকসুদুজ্জমান লস্কর বলেছেন, বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হচ্ছে রপ্তানি ঝুড়িতে শুধু একটি পণ্যের আধিপত্য। একটি পণ্য দিয়ে বাজার সম্প্রসারণ করা বেশ কঠিন। চীন, ভারতসহ প্রতিশ্রুতিশীল বাজারে প্রবেশের জন্য এসব দেশের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য উৎপাদনে উদ্যোগ নিতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, রপ্তানি আয়ের সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার জন্য রপ্তানির নতুন গন্তব্য সৃষ্টি কিংবা বিদ্যমান গন্তব্যগুলোকে কীভাবে আরও সমৃদ্ধ করা যায়, সেদিকে দৃষ্টি দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা জরুরি হয়ে পড়েছে। তাছাড়া রপ্তানির ঝুড়িতে বিশ্ববাজারে প্রবেশে সক্ষম এমন পণ্যের সম্ভার বাড়াতে হবে।

রপ্তানি বাণিজ্যে টিকে থাকার জন্য পণ্যের মানোন্নয়নের পাশাপাশি নতুন নতুন বাজার সৃষ্টি, বর্তমান বাজারকে সংহত করা এবং নতুন নতুন পণ্য রপ্তানি তালিকায় যুক্ত করতে হবে। এছাড়া রপ্তানিকারক প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে শিল্পে নিয়োজিত শ্রমিককর্মচারীদের দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করার লক্ষ্যে প্রশিক্ষণের ওপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে